২০২১ সালের হিন্দি সিনেমা: ‘৮৩’ থেকে ‘সরদার উধম’ এবং আরও অনেক কিছু

হিন্দি চলচ্চিত্রাঙ্গন বা বলিউউ ২০২১ সাল ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। এ বছর বেশকিছু সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। তার মধ্যে কিছু সিনেমা ভালো সাফল্য পেয়েছে। আবার কিছু সিনেমা বাজেট অতিক্রম করতে পারেনি। তবে, এ বছর ভারতের আঞ্চলিক সিনেমা বেশি আলোচনায় ছিলো। এছাড়া, দর্শকের অনলাইন প্লাটফর্মমুখী হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।

একটু স্বস্তি

করোনা মহামারি সারা বিশ্বের চলচ্চিত্র শিল্পকে বিপর্যস্ত করেছে। এর বাইরে ছিলো না বলিউডও। দীর্ঘদিন প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ থাকার পর এ বছর চালু হয়। আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে থিয়েটার ব্যবসা অর্ধেক কমেছে এবং ২০১৯ সালের ১৯১ বিলিয়ন রূপির তুলনায় ২০২০ সালের আয় ৭৬ বিলিয়নে পৌঁছেছে।

পিভিআর লিমিটেডের চিফ গ্রোথ অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি অফিসার প্রমোদ অরোরা দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অনুমান করা হচ্ছে- ভারতীয় সিনেমা শিল্প ২০২০-২১ সালে প্রায় ১২ হাজার কোটি রূপির কাছাকাছি আয় হারিয়েছে। দেশব্যাপী হাজার হাজার সিনেমা হল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। তবে, ২০২১ সালের শেষ প্রান্তিক পর্যন্ত এই পরিস্থিতি দেখা যায়নি।

এ বছর দীপাবলির পর থেকে বলিউড ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। যদিও, ভারতের চলচ্চত্রি বিশ্লেষকদের মতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে এখনো অনেক পথ যেতে হবে।

কিছু বড় প্রযোজক নিজেদের ব্যবসা ধরে রাখতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। অনেকে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা এই অন্ধকার সময়ে আশার আলো হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। প্রেক্ষাগৃহে সুর্যবংশী মুক্তি দিতে প্রায় ২ বছর অপেক্ষা করেছেন রোহিত শেঠি। শেষ পর্যন্ত তার সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ হয়। কিন্তু, সত্যমে জয়তে-২ এর ভাগ্য ততোটা ভালো ছিল না।

অনলাইন প্লাটফর্মমুখী দর্শক

প্রায় ৫০টি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম থাকায় দর্শকের হাতে প্রচুর অপশন ছিলো। ই অ্যান্ড ওয়াই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ডিজিটাল সাবস্ক্রিপশন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। যা ২০১৯ সালের ২৮.২ বিলিয়ন রুপির তুলনায় ২০২১ সালে ৫৪ বিলিয়নে উন্নীত হবে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে।

নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম এবং ডিজনি+ হটস্টার আলোচনায় আছে। তবে, দর্শক হইচই এবং এমএক্স প্লেয়ার থেকে পছন্দ অনুযায়ী সিরিজ দেখেছেন।

তবে, গল্পের বিষয়বস্তু থ্রিলারধর্মী থেকে গেছে। পাশাপাশি ইতিহাস নির্ভর কিছু ব্যতিক্রমী বিষয়ও ছিলো। 'দিল বেকারার' এবং 'গুল্লাক' এর দ্বিতীয় সিজন দেখতে অধীর আগ্রহে আছেন দর্শক। এটা প্রমাণ করে যে পারিবারিক সিনেমা বা সিরিজে এখনো মানুষের আগ্রহ বেশি। লীনা যাদবের ভিসেরাল ডকুমেন্টেশন 'হউস অব সিক্রেটস: বুরারি ডেথ' এর কথা ভুলে গেলে চলবে না।

আঞ্চলিক সিনেমার দাপট বেড়েছে

দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় যখন বলিউডে সিনেমার সংখ্যা হ্রাস পায়, তখন দর্শক আঞ্চলিক সিনেমা দেখতে গিয়ে তাতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। কারনান, সারপাট্টা পারাম্বারাই এবং মালিকের মতো চলচ্চিত্রগুলো অ্যাকশন এবং আবেগের একটি নতুন মিশ্রণ ছিলো। তবে, বছরের শেষের দিকে যখন 'সুর্যবংশী' নতুন কিছু করার কঠোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু, ঠিক তখনই সুরিয়ার তামিল চলচ্চিত্র 'জয় ভিম' পশ্চাদগামী সামাজিক ঐতিহ্যের ওপর তীব্র আক্রমণ নিয়ে গণবিনোদনের নতুন স্লোগান হিসেবে আবির্ভূত হয়।

এছাড়া, আল্লু অর্জুন ও রাশমিকার 'পুষ্পা: দ্য রাইজ' মুক্তির পর থেকে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছে।

এদিকে, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বছরের সেরা দুটি কাজ- 'তব্বার' এবং 'মন্দার' যথাক্রমে পাঞ্জাবি এবং বাংলায় ছিল।

তারকা সংস্কৃতি কমে যাচ্ছে?

পুরো বছরজুড়ে দেখা গেছে হিন্দি সিনেমায় চরিত্র এবং প্লটগুলো বিশ্বব্যাপী প্রসারিত হচ্ছে। যেমন- একজন ট্রান্সওম্যান একজন বডিবিল্ডারের প্রেমে পড়ছেন, ব্রেকিং নিউজের পরিপ্রেক্ষিতে একজন কঠিন-নাসড নিউজ অ্যাঙ্কার প্রভাবিত হচ্ছেন, একজন সমকামী মুসলিম পুলিশ অফিসার হাইপ্রোফাইল কেস সমাধান করার সময় তার নৈতিকতার সঙ্গে আপস করছেন না ইত্যাদি চরিত্রগুলো বছরজুড়ে আলোচনায় ছিলো। সুতরাং বলা যায় বলিউডে গল্পের প্লট প্রসারিত হচ্ছে।

তাহলে কি বলিউডে তারকা সংস্কৃতির প্যাক-আপ হচ্ছে? যেমন, আয়ুষ্মান খুরানা 'চন্ডীগড় করে আশিকি'তে বডিবিল্ডারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, তার জন্য এই বিষয়বস্তু নতুন। তবে, তারা এটাও বলেছেন, অক্ষয় কুমারের পুলিশ থ্রিলার 'সূর্যবংশী' এখনো পর্যন্ত বছরে সবচেয়ে বেশি আয় করেছে।

চলচ্চিত্র সমালোচক ব্রহ্মতমাজ দ্য হিন্দুকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অক্ষয় কুমারের একটি সিনেমা আর 'একটি ইভেন্ট' এক নয়। তিনি প্রতি দুই মাসে একটি চলচ্চিত্র মুক্তি দেন। 'সূর্যবংশী'র সাফল্যের কৃতিত্ব রোহিত শেঠির। যা পরিচালকের খ্যাতি ফিরে আসার ইঙ্গিত।

সালমান খানের 'রাধে' প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। কিন্তু, সালমানের 'অন্তিম' আয়ুষ শর্মার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এছাড়া, রণবীর সিং '৮৩'তে অভিনয় করে প্রশংসিত হচ্ছেন। চলচ্চিত্র বিশ্লেষক ব্রহ্মতমাজ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ওটিটি স্পেস দর্শককে বিষয়বস্তু নিয়ে সচেতন করে তুলেছে। আগামী বছর আমির খানের 'লাল সিং চাড্ডা' বলিউডের তারকা সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

নায়িকাদের দাপট

সুস্মিতা সেনের 'আরিয়া'র দ্বিতীয় সিজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আদালত দৃশ্যে বিচারক, প্রতিরক্ষা আইনজীবী, সরকারি আইনজীবী, পরিদর্শক সবাই নারী ছিলেন। যা সিনোমর পর্দায় পিতৃতান্ত্রিক চিত্রায়ন থেকে একটি লক্ষণীয় পরিবর্তনের সূচনা করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

'শেরনি', 'হাসিন দিলরুবা', 'বোম্বে বেগমস' এবং 'পাগলেইট' থেকে শুরু করে 'আজিব দস্তানস', 'রশ্মি রকেট', 'মীনাক্ষী সুন্দরেশ্বর', 'মিমি' ও 'ছোরি' এ বছরের চলচ্চিত্র এবং ওয়েব সিরিজের একটি দীর্ঘ তালিকা। যেটি ইঙ্গিত দিচ্ছে নায়িকারা কেবল স্টোরিলাইনে বৃহত্তর হেফট খুঁজে পাচ্ছেন না, বরং এমন কিছু অংশ রাখা হয়েছে যা কয়েক বছর আগে পর্যন্ত সামাজিক এবং নৈতিকভাবে অসমর্থনযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছিল।

অভিনয়ের বিন্যাস

সবচেয়ে চমকপ্রদ অভিনয় এসেছে রণবীর সিংয়ের কাছ থেকে। তিনি '৮৩'তে কপিল দেবের চরিত্রে চমক দেখিয়েছেন। তবে, আরও বড় চমক ছিল অর্জুন কাপুর এবং পরিণীতি চোপড়ার 'সন্দীপ অওর পিঙ্কি ফারার'। চমৎকার অভিনয় করেছেন তারা। এরপর 'চন্ডিগড় করে আশিকি'তে ট্রান্সওম্যান হিসেবে বাণী কাপুরের দুর্দান্ত অভিনয়, 'সরদার উধমে' ভিকি কৌশলের নিপুণ অভিনয়, শেরনির চরিত্রে বিদ্যা বালানের গর্জন। তবে, 'আত্রঙ্গি রে'তে প্রেমে হতাশ হয়ে ডাক্তারি ছাত্র হিসেবে ধানুশের অভিনয় ভুলে গেলে চলবে না।

সুরের চমক ছিলো না

হিন্দি চলচ্চিত্রে চলতি বছর উল্লেখ করার মতো কোনো গান হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে শুধু শেরশাহ এবং 'আত্রঙ্গি রে' এর স্কোর মোটামুটি হয়েছে। অনেকেই গানের চাহিদা কমার জন্য নতুন যুগের স্টোরিলাইনকে দায়ী করেছেন।

সূত্র: দ্য হিন্দু, ইন্ডিয়া টুডে, বলিউড লাইফ

Comments

The Daily Star  | English
Dhaka University Madhur Canteen

Madhur Canteen: The story of an eatery and Bangladesh

If one says Madhur Canteen and Bangladesh’s history is inextricably interlinked, will it be an exaggeration?

14h ago