সিনেমা দেখে তারপরে কথা বলার অনুরোধ করছি: হাওয়ার পরিচালক সুমন
মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত প্রথম সিনেমা 'হাওয়া' সিনেমা গত ২৯ জুলাই মুক্তি পেয়েছে। সিনেমাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকে অভিযোগ করেছেন, হাওয়ার সঙ্গে কোরিয়ান সিনেমা 'সি ফগ'র মিল আছে। কেউ কেউ বলছেন ১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া বাংলা সিনেমা 'অভিযান' এর সঙ্গে মিলের কথা বলছেন।
'হাওয়া' নিয়ে এসব অভিযোগের বিষয়ে নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন।
'হাওয়া' নিয়ে কেন নকলের অভিযোগ তোলা হচ্ছে?
এর আগেও এমন দেখেছি যে, কোনো সিনেমা ভালো চলতে শুরু করলে, ভালো ব্যবসা করলে এ ধরনের অপবাদ দেওয়া শুরু হয়। মনে হয় আমরা এখানে উড়ে এসে জুড়ে বসা কেউ। নাটকের পরিচালক পর্যন্ত বলা হচ্ছে। নাটকও সিনেমার একটা জনরা, সেটা তারা ভুলে যান। 'হাওয়া' সিনেমার ক্ষেত্রে যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে এর আগে 'আয়নাবাজি', 'দেবী' সিনেমা নিয়েও এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে। 'দেবী' সিনেমার ক্ষেত্রে তো বলেছিল, বইয়ে যে গল্প আছে তেমন হয়নি।
এসব কথা বলার কারণ কী বলে মনে করেন?
যেহেতু আমরা অন্য ইন্ডাস্ট্রি থেকে এসেছি, ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের মানুষ না বলেই এমন অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ সিনেমায় নকলের ওপর দাঁড়ানো। ফিলোসফিক্যাল নকল বলতে এই যে, দৌড়াদৌড়ি, উড়া-উড়ি সবকিছুই নকল তো। ফিলোসোফিক্যাল জায়গা থেকে এসব ফর্মুলা সিনেমার প্রেম, মারামারি কাহিনী অনেক বছর ধরে তৈরি হচ্ছে। আবার সেগুলো নতুন করে হচ্ছে, এসব নকল সিনেমা নিয়ে কিন্তু কেউ কথা বলছেন না।
আমার সিনেমাটা কোরিয়ান যে সিনেমার নকল বলা হচ্ছে, সেটা মানব মানবপাচারের গল্প। যারা বলছে তারা দুটির একটিও দেখেনি। দুটো সিনেমা দেখে তারপরে কথা বলার জন্য অনুরোধ করছি। ওই সিনেমার কোনো কাঠামোর আমার সিনেমার সঙ্গে মিল নেই। সাগরে দৃশ্যধারণ করা হলেই তো একইরকম গল্পের সিনেমা হয় না। এটা আমাদের অঞ্চলের গল্প, এটা আমাদের সিনেমা।
২৪টি প্রেক্ষাগৃহে 'হাওয়া' মুক্তি পেয়েছে, আরও বেশি হলে মুক্তি পেলে কেমন লাগত...
আমরা আসলে বেশি হলে মুক্তি দিতে চাইনি। কারণ বেশিরভাগ সিঙ্গেল স্ক্রিনে মানসম্মত ব্যবস্থা নেই। দর্শক আগ্রহ দেখাচ্ছে তাই আগামীতে হয়তো সিনেমাহল বাড়বে। কিন্তু, সিনেমাটি নকলের কথা বলে ক্ষতি করার চেষ্টা চলছে। আমার সিনেমার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন বনানীর একটা রেস্টুরেন্টে খেতে গেছে, তাদের পাশের টেবিলে কয়েকজন বলাবলি করছিল- হাওয়া সিনেমা নকল এমন কথা নাকি তারা শুনেছেন। তাদের মধ্যে একজন সেটার প্রতিবাদও করেছেন। এভাবে তো সিনেমাটিকে ক্ষতির মুখে ফেলার চেষ্টা চলছে। তাহলে কীভাবে হল বাড়বে?
সিনেমা মুক্তির আগেই 'সাদা সাদা কালা কালা' গানটি দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে। সিনেমা মুক্তির পর এসব নিয়ে কী কোনো বাড়তি চাপ ছিল?
আসলে সিনেমা যখন থিয়েটারে যাবে সেটার চাপ কিন্তু আমার না, সেটা তখন গণ মানুষের চাওয়ার চাপ। একটা জিনিস সবার ভালো না লাগতেও পারে। অনেক কিছু আমার নিজেরও ভালো লাগে না। অনেক সিনেমা, সাহিত্য, চিত্রকর্ম আমার নিজেরও ভালো না। তার মানে কী সেটা খারাপ? যখন আমার সিনেমা দেখে সিনেমা নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। যেমন- কেন এখানে শেষ করলাম, কেন এমন হলো, পরবর্তী সিনেমা নিয়ে কথা বলা ইত্যাদি। কিন্তু, মানুষ সেসব না বলে নকল সিনেমা কিনা এমন বোকাবোকা কথা ছড়াচ্ছে।
'হাওয়া' সিনেমাতে অভিনয় করেছেন- চঞ্চল চৌধুরী, নাজিফা তুষি, শরিফুল রাজ, সুমন আনোয়ার, সোহেল মণ্ডল, নাসির উদ্দিন খানসহ অনেকেই। দেশের ২৪ টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটির টিকিট পাচ্ছেন না দর্শকরা। কারণ বেশিরভাগ শো হাউজফুল যাচ্ছে। মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে ৪ আগস্ট পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। স্টার সিনেপ্লেক্স ৫টি শাখায় প্রতিদিন ২৬টি শো চলছে। কোনো কোনো প্রেক্ষাগৃহে হলিউডের সিনেমার শো কমিয়ে 'হাওয়া'র শো বাড়ানো হয়েছে।
Comments