রাইড শেয়ারিংয়ে কমিশন কমিয়েছে পাঠাও, চাপে পড়তে পারে উবার

চালকদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে রাইড শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে কমিশন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাঠাও। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিযোগিতা বাড়ার পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান উবারকেও চাপে ফেলতে পারে। 

চালকদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে রাইড শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে কমিশন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাঠাও। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিযোগিতা বাড়ার পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান উবারকেও চাপে ফেলতে পারে। 

বৃহস্পতিবার থেকে দেশীয় রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাও পিক আওয়ারে (সকাল ৮টা থেকে ১১টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা) পর্যন্ত ১০ শতাংশ এবং অফ-পিক আওয়ারে ১৫ শতাংশ কমিশন কার্যকর করবে। এটা দেশের বাইক রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম পরিমাণ কমিশন। 

আন্তর্জাতিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানি উবার বর্তমানে বাংলাদেশে তার সমস্ত ট্রিপের ভাড়ার ওপর থেকে ২৫ শতাংশ হারে কমিশন কাটে। 

এর আগে, পাঠাও ঢাকায় দুই চাকার পরিবহনের জন্য ১৫ শতাংশ হারে এবং চট্টগ্রাম ও সিলেটে ২৫ শতাংশ হারে কমিশন কাটতো। তবে, তাদের নতুন কমিশন হার সারা দেশে প্রযোজ্য হবে।  

ঢাকা রাইড শেয়ারিং ড্রাইভার্স ইউনিয়নের ৬ দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সব ধরনের রাইডের জন্য ১০ শতাংশ হারে কমিশন এবং পুলিশি হয়রানির অবসান ঘটানো।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর, ড্রাইভার্স ইউনিয়ন তাদের দাবি বাস্তবায়নে ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করে। এরপর ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)-সহ ৮টি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে তারা এ বিষয়ে চিঠি পাঠায়।

ড্রাইভার্স ইউনিয়নের এসব দাবির বিষয়ে রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মের কর্মকর্তাদের অবস্থান জানতে গত ৬ অক্টোবর রাইড শেয়ারিং প্লাটফর্মের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিআরটিএ। কর্তৃপক্ষ প্লাটফর্মগুলোকে ৪ নভেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে তাদের লিখিত বিবৃতি জমা দিতে বলে।

এ বিষয়ে ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদ খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রথমে আমরা ২৮ নভেম্বর থেকে সপ্তাহে ৫ দিন সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টার জন্য কর্ম বিরতি পালন করব।'

তিনি আরও বলেন, 'যদি আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তাহলে আমরা আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নেব।'তিনি আরও জানান, তাদের গাড়ি যেখানেই পার্ক করা হোক না কেন, পুলিশ তাদের অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য মামলা দেয়।

তিনি বলেন, 'তাহলে আমাদের (রাইড শেয়ারিং চালকদের) গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হোক।'

এ ছাড়া, অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, শ্রম আইনের অধীনে চালকদের স্বীকৃতি দেওয়া, কোনো অপরাধে জড়িত না থাকলে রাইড চালকদের প্রোফাইল বাতিল না করা এবং তালিকাভুক্ত রাইড শেয়ারিং যানবাহনগুলোকে অধিক হারে আয়কর প্রদান থেকে অব্যাহতি দেওয়া। 

সম্প্রতিকালে উবারের ইস্ট ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশ অঞ্চলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী আরমানুর রহমান একটি সাক্ষাৎকারে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, তার কোম্পানি আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে সেই অনুযায়ী কমিশন ঠিক করে।

তিনি বলেন, 'আমরা প্রধানত প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করতে এবং নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলো সম্প্রসারণে আমাদের কমিশন পুনঃবিনিয়োগ করি। আমাদের প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ মূলত কমিশন থেকে আসে।'

আরেক রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম 'ওভাই' সিএনজি চালিত ৩ চাকার অটো রিকশার জন্য ৫ থেকে ১০ শতাংশ এবং ঢাকার মধ্যে কার রাইডের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ এবং ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে, কক্সবাজার ও সিলেটে ১০ শতাংশ হারে কমিশন নেয়।  

রাইড শেয়ারিং কোম্পানি ওভাই সলিউশনের নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান অপারেশন অফিসার রাহিদ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওভাই ঐতিহাসিকভাবে তার ড্রাইভারদের জন্য কমিশন কাঠামো সহনীয় এবং সাশ্রয়ী রেখেছে।'

তিনি বলেন, 'আমরা চালকদের অতিরিক্ত কমিশনের বোঝা চাপাতে চাই না।'

পাঠাও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই পরিবর্তন মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং পরিষেবাকে ব্যবহারকারীদের জন্য আরও বেশি নির্ভরযোগ্য করতে ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে পিক আওয়ারে।

আরও বলা হয়েছে, 'এ কারণে তারা এখন উপার্জন বাড়াতে আরও বেশি রাইড শেয়ার করবেন।'

পাঠাও-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যারা আমাদের ব্যবহারকারীদের নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য সেবা নিশ্চিত করে। কমিশন কমানোর মাধ্যমে আমরা সেই পাঠাও চালকদের সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বস্ত রাইড শেয়ারিং পুল হিসেবে পরিচিত করতে চেয়েছিলাম।'
  
চলমান কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে যখন রাইড শেয়ারিং কোম্পানির ওপর গুরুতর আগাত আসে। সে সময় অধিকাংশ মোটরসাইকেল চালক অফলাইনে পরিচালনা করতে বাধ্য হন, যেটা বেআইনি। 

এরপর গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিআরটিএ পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাইড শেয়ারিং কোম্পানি ও যানবাহনের তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক করলে এ খাতে আরও একটি ধাক্কা আসে।

যদিও মহামারি শুরু হওয়ার আগে ১২টি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে প্রায় ১ লাখ ৩ হাজার যানবাহন যুক্ত ছিল। তবে, ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪টি প্ল্যাটফর্মের মাত্র ২৫ হাজার ২২৯টি গাড়ি বিআরটিএ-তে তালিকাভুক্ত হওয়ায় এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Dengue danger not over yet

As rain and thunderstorms are expected in various parts of the country over the next few days, experts warn that the dengue season could extend further this year.

1h ago