করোনাকালে আরও ধনী হয়েছেন ভারতের ধনকুবেররা
করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা ভারতের বিপুল সংখ্যক মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিলেও, দেশটির ধনকুবেরদের ক্ষেত্রে ঘটেছে বিপরীত ঘটনা।
মহামারিকালে অনেক ভারতীয় যেখানে দিনে সামান্য কিছু অর্থ উপার্জন করতেই হিমশিম খাচ্ছেন, সেখানে অতি ধনীরা হয়েছেন আরও বেশি ধনী ও প্রভাবশালী। গত বছরে সম্মিলিতভাবে তাদের সম্পদের পরিমাণ কয়েক বিলিয়ন ডলার বেড়েছে।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ারস সূচকের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, এক বছরে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেড়ে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানির সম্পদের পরিমাণ ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানিও তার চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই। তার সম্পদের পরিমাণ বেড়ে ৫৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এ দুই ধনকুবের বর্তমানে যথাক্রমে এশিয়ার প্রথম ও চতুর্থ শীর্ষ ধনী। তাদের সম্পদের পরিমাণ কিছু দেশের জিডিপির চেয়েও বেশি। সারা বিশ্বেই যে ধনী-গরিবের সম্পদের ব্যবধান বাড়ছে, ভারতীয় এ ধনকুবেরদের সঙ্গে অন্য ভারতীয়দের সম্পদের ব্যবধান তার একটি উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছে সিএনএন।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, মহামারির বেশিরভাগ সময় জুড়েই চীনের অনেক ধনকুবেরকে পেছনে ফেলে এশিয়ার ধনীদের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করেছেন আম্বানি। বর্তমানে বিশ্বের ১২তম শীর্ষ ধনী তিনি। ২০২০ সালে তার কোম্পানি গুগল ও ফেসবুকের মতো টেক জায়ান্টদের কাছ থেকে কোটি কোটি ডলার আয় করেছে।
আদানিও বসে ছিলেন না এ সময়টা। তার মালিকাধীন শিল্প গ্রুপ বন্দর ও মহাকাশ থেকে শুরু করে তাপি বিদ্যুৎ ও কয়লার কোম্পানি—সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। রিলায়েন্সের মতো আদানি গ্রুপও ভারতের শেয়ার বাজারে বিপুল মুনাফা করেছে মহামারিকালে।
মার্সেলাস ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজারের প্রতিষ্ঠাতা সৌরভ মুখার্জিয়ার মতে, আম্বানি ও আদনির একচ্ছত্র আধিপত্য আশ্চর্যজনক কোনো বিষয় নয়। ভারতের প্রায় প্রতিটি বড় সেক্টর এখন একটি বা দুটি শক্তিশালী করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সিএনএনকে সৌরভ বলেন, ‘ভারত এখন এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে মুনাফার ৯০ শতাংশই থাকে শীর্ষ ১৫টি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর হাতে।’
বিপরীতে, করোনাকালে ভারতের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্র একবারেই ভিন্ন। পিউ রিসার্চ সেন্টার ও কর্ণাটকের আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষাসহ বিভিন্ন সমীক্ষায় মহামারিতে ভারতে দারিদ্র্য বাড়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে দুই শ্রেণির মধ্যে বৈষম্য বেড়েছে অনেক।
গত জুনে প্রকাশিত ক্রেডিট সুইসের একটি প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ সালের শেষ নাগাদ ভারতের শীর্ষ এক শতাংশের সম্পদ ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। আয় ও সম্পদের বণ্টনের অসমতা পরিমাপের পদ্ধতি গিনি সহগ ২০০০ সালের ৭৪ দশমিক ৭ থেকে বেড়ে গত বছর ৮২ দশমিক ৩ হয়েছে।
Comments