যে কারণে ‘ওয়ার্কিং হলিডে ভিসা’ থেকে বাংলাদেশকে বাদ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া

ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবী জুড়ে অস্ট্রেলিয়ার 'ওয়ার্কিং হলিডে ভিসা' অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিভিন্ন দেশের ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণদের অস্ট্রেলিয়ায় ১২ মাসের জন্য ভ্রমণ করতে এবং যেকোনো শিল্পে কাজ করার সুযোগ আছে এই ভিসা প্রকল্পে।

১৯৭৫ সালে এই ভিসা প্রকল্প শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড ও কানাডার তরুণদের জন্য এই সুযোগ ছিল।

১৯৮০ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে প্রোগ্রামটিতে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, তাইওয়ানসহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের নাম এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

২০০৬ সালে ভিসা প্রকল্পের তালিকায় যুক্ত হয় বাংলাদেশের নাম।

ওই বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া সরকারের মধ্যে 'কাজ ও ছুটি' ভিসা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, প্রতি বছর উভয় দেশের ১০০ জন করে এই ভিসার আওতায় উভয় দেশে ১২ মাসের জন্য 'ওয়ার্ক অ্যান্ড হলিডে' ভিসা পাবে।

চুক্তি অনুযায়ী তারা ৯ মাস কাজ করতে পারবেন এবং ৯ মাস পর অবশ্যই নিজ দেশে ফিরে যাবেন।

চুক্তিটি ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয় এবং প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি তরুণরা এই ভিসার আওতায় অস্ট্রেলিয়া যান।

২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়া সরকার একটি চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে জানায়, 'ওয়ার্ক অ্যান্ড হলিডে' প্রোগ্রামের চুক্তি ভঙ্গ বিষয়ক গুরুতর সমস্যার কারণে অস্ট্রেলিয়া সরকার এই প্রোগ্রামটি স্থগিত করেছে।

মো. সালাউদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

এমন একটি জনপ্রিয় ভিসা প্রোগ্রাম থেকে বাংলাদেশকে কেন বাদ দেওয়া হলো তা জানতে চাইলে অস্ট্রেলিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম বিষয়ক কাউন্সিলর মো. সালাউদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১২ সালে কাজ ও ছুটি কর্মসূচী শুরু হওয়ার পর থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভিসাধারী বাংলাদেশি তাদের ভিসার মেয়াদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করেননি এবং অন্য ভিসার জন্য আবেদন করেছেন। এটি কাজ ও ছুটি ভিসার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।'

তিনি আরও বলেন, 'ওই সময় অস্ট্রেলিয়া সরকার বাংলাদেশকে ভিসা প্রোগ্রাম থেকে বাদ দেওয়ার যে কারণ উল্লেখ করে তাতে বলা হয়, এই ব্যক্তিরা প্রকৃত কাজ ও ছুটির আবেদনকারী নয়।'

বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া ওয়ার্কিং হলিডের ভিসা প্রকল্পটিকে আগের থেকেও বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। মহামারির আগে অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি বছর ৩ লাখেরও বেশি মানুষ এই ভিসায় আসতেন। মহামারির সময় তাদের অনুপস্থিতিতে শুধুমাত্র ২০২০ সালেই ৩ দশমিক ২ বিলিয়নেরও বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার এবং শ্রমের ঘাটতিও তৈরি করেছে।

বিশ্বব্যাপী ধীরে ধীরে ভ্রমণ শুরু হওয়ায় এবং অনেক তরুণ আবার বিদেশে 'ছুটি ও কাজ' করার কথা ভাবতে শুরু করলে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্ক হলিডে ভিসা আলোচনায় উঠে এসেছে।

অস্ট্রেলিয়া আশা করছে, ওয়ার্কিং হলিডে মেকাররা ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসা আন্তর্জাতিক পর্যটক মার্কেটগুলোর মধ্যে প্রথম একটি হবে।

ওয়ার্কিং হলিডে ভিসার দেশগুলোর তালিকায় আবার বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে শ্রম বিষয়ক কাউন্সিলর বলেন, 'অস্ট্রেলিয়া সরকার এই প্রোগ্রাম থেকে বাংলাদেশকে স্থায়ীভাবে বাদ দেওয়ার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নতুন করে এ বিষয়ে আর আলাপ করা হয়নি। তবে বিষয়টি মিশনের বিবেচনাধীন রয়েছে। সঠিক সময়ে এ বিষয়ে কাজ করা হবে।'

ভয়াবহ করোনা মহামারির কারণে অস্ট্রেলিয়ায় দেখা দিয়েছে মারাত্মক শ্রম ঘাটতি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফেডারেল সরকার বছরে ২ লাখ বিদেশি শ্রমিককে ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল সোমবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছেন, 'অস্ট্রেলিয়ার দক্ষ শ্রম  ঘাটতির সমাধান করতে হলে স্থায়ী অভিবাসী প্রয়োজন। অস্থায়ী অভিবাসী দিয়ে আমাদের বিশাল শ্রম ঘাটতি পূরণ সম্ভব নয়।'

অস্ট্রেলিয়ার এই বিশাল শ্রম ঘাটতির সমাধানে বাংলাদেশি শ্রমশক্তি কোনো সুযোগ পাবে কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম বিষয়ক কাউন্সিলর বলেন, 'আমরা হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি। আমরা চাই, অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশি দক্ষ অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ায় এসে উভয় দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখুক।'

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

S Alam threatens int'l legal action against govt over asset freezing: FT

Alam says his family's bank accounts were frozen, they were subjected to travel bans, and they lost control of their companies, all while facing investigations for alleged money laundering without formal notification.

2h ago