প্রবাস চোখে স্বদেশ: জাতীয় সম্মানের অপেক্ষায় ‘রাত জাগা ফুল’
সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত অনুদানের সিনেমা রাত জাগা ফুলের পরিচালক মীর সাব্বির ফোন দিয়ে বললেন, 'সিনেপ্লেক্সে আমার ছবিটি চলছে। আমার খুব ইচ্ছে আপনার সঙ্গে বসে ছবিটি দেখার।'
এর আগেও বেশ কয়েকজন পরিচালকের অনুরোধে তাদের সঙ্গে বসে ছবি দেখেছি। অভিজ্ঞতা সুখকর নয়!
বিশেষ করে নাট্যপরিচালক থেকে যারা চলচ্চিত্র পরিচালক হয়েছেন তাদের প্রায় সবার নির্মিত ছবি দেখতে বসে মনে হয়েছে, 'একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র' নয় দেখছি টেলিফিল্ম।
বিশাল ক্যানভাসের চলচ্চিত্রের যে একটি আলাদা ভাষা আছে, আলাদা নির্মাণ শৈলী আছে সেটা নাট্যপরিচালক থেকে চলচ্চিত্র পরিচালক হয়ে ওঠা অনেকেই সম্ভবত বোঝেন না।
মুক্তির মাত্র এক সপ্তাহ পর যখন কোনো ছবি হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়, তখন দোষটি চাপানো হয় দর্শকদের ওপর। বলা হয়, দর্শক ছবি বোঝেন না। বলা হয়, হলে গিয়ে দর্শকরা ছবি দেখেন না।
একবারও ভাবা হয় না, গাঁটের টাকা খরচ করে হলে গিয়ে তারা টেলিফিল্ম দেখবেন কেন?
আমার মনে আছে, একবার মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী সিডনিতে গিয়ে বলেছিলেন, 'বাংলাদেশের দর্শকরা আমার ছবি হলে গিয়ে দেখেন না। অথচ ওই ছবিই বিদেশে সমাদৃত হয়।'
একটি অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমার এক নাট্যপরিচালক বন্ধু একটি টিভি চ্যানেলের জন্য ২ লাখ টাকা চুক্তিতে একটি টেলিফিল্ম বানিয়েছিলেন কয়েক বছর আগে। চ্যানেলে সেটি জমা দেওয়ার পর তাকে ডেকে নিয়ে বলা হলো, বাড়তি আরও ৩ লাখ টাকা তাকে দেওয়া হবে। টেলিফিল্ম টিকে আরেকটু বড় করে নির্মাণ করতে হবে। ডাবিং, কালার গ্রেডিং, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ও ২টি গান যুক্ত করে একটি চলচ্চিত্র বানানোর কথা বলা হলো।
অর্থাৎ ৫ লাখ টাকায় ওই চ্যানেল 'একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র' নির্মাণ করে সিনেপ্লেক্সে মুক্তি দিলো।
মীর সাব্বিরের 'রাত জাগা ফুল' দেখতে বসে মনে হলো, তিনি প্রথম ছবিতেই নাট্যপরিচালকের ইমেজটি ভাঙতে পেরেছেন। একবারও মনে হয়নি, এটি 'সরকারি টাকা' দিয়ে বানানো ছবি। ছবির গল্প, চিত্রনাট্য, সংলাপ, গান লিখেছেন মীর সাব্বির। প্রধান চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন তিনি নিজেই।
ছবিটি দেখবার পর কেউ বলতে পারবে না যে সাব্বির তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। কাহিনীর চমক, চিত্রনাট্যের গাঁথুনি, শক্তিশালী সংলাপ এবং মন ছুঁয়ে যাওয়া সঙ্গীত দর্শকদের সারাক্ষণ উদ্দীপ্ত করে রাখবে।
'রাত জাগা ফুল' দেখে বের হয়ে সাব্বিরকে বললাম, 'তোমার দায়িত্ব তুমি পালন করেছো। এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য অপেক্ষা কর।'
আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক
Comments