বুড়িগঙ্গার ১০০ একর জমি এখনো বেদখল

সীমানা পিলার বসানোর পরও বুড়িগঙ্গা নদীর ২ তীরের প্রায় ১০০ একর জায়গা মাটি দিয়ে ভরাট করা অবস্থায় রয়ে গেছে।

দখল করা এসব জমির বেশিরভাগই কেরানীগঞ্জ, কালিন্দী, জিনজিরা, শুভাঢ্যা ও কোন্ডা এলাকায়।

এ ছাড়াও কামরাঙ্গীরচরের কুতুবপুরে নদী ভরাট করা রয়েছে বলে উঠে এসেছে বেসরকারি সংস্থা রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) পরিচালিত একটি জিআইএসভিত্তিক জরিপে।

বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) দখলকৃত জমি থেকে কিছু স্থাপনা অপসারণ করে।

গত শনিবার কামরাঙ্গীরচরের ধলচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ না করেই বিআইডব্লিউটিএ সেখানে সীমানা পিলার স্থাপন করেছে।

স্থানীয় প্রভাবশালী হাজী মো. মনির হোসেন ওই এলাকায় নদীর একটি অংশ দখল করে কারখানা গড়ে তোলেন। দেখা যায়, শ্রীখণ্ড মৌজায় তার বাড়ির সীমানা দেওয়াল পিলার থেকে ১০ ফুটেরও বেশি বিস্তৃত।

মনির হোসেনের বাড়িটি ঝাউচর গুদারাঘাটে ফাতেমা এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের পাশে।

এর পাশের প্লটের মালিক আবুল হোসেনও নদীর একটি অংশ দখল করে বাড়ি তৈরি করেছেন। বাড়িটি তিনি ভাড়া দিয়েছেন একটি তৈরি পোশাক কারখানাকে।

বুড়িগঙ্গার ২৩ নম্বর সীমানা পিলারটি দাঁড়িয়ে আছে এই দুটি বাড়ির মাঝখানে। বাড়ি ২টির প্রবেশদ্বারও নদীর জমিতেই।

দখল করা জমিতে বাড়ি তৈরির বিষয়ে মন্তব্য জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

সরেজমিন ঘুরে এবং ২০২০-২১ সালে ভৌগলিক তথ্যব্যবস্থা (জিআইএস) ব্যবহার করে আরডিআরসি বুড়িগঙ্গার একটি মানচিত্র তৈরি করেছে।

সংস্থাটি দেখতে পায়, বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার পরও ৯৮ দশমিক ৭৫ একর জমি এখনও বালু ও মাটি দিয়ে ভরাট করা রয়েছে।

আরডিআরসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, 'আমরা বেশ কয়েক মাস আগে জরিপ চালিয়েছিলাম। দখলকৃত জমির পরিমাণ নিশ্চয়ই এতদিনে বেড়েছে।'

তিনি জানান, বিআইডব্লিউটিএ দখলদারদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরপরই তারা এই জরিপটি করেছিলেন।

ঢাকার অংশে বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে সরকার একটি ওয়াকওয়ে নির্মাণ করেছে।

মোহাম্মদ এজাজ বলেন, 'এ কারণে এই দিকে কোনো নতুন দখলদার আমরা দেখতে পাইনি।'

তবে কেরানীগঞ্জের পাশে বাণিজ্যিক প্লট তৈরির জন্য নতুন করে দখল করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নদীর বেশির ভাগ জায়গা দখল হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'বুড়িগঙ্গার ধারে ৯০টি শিপইয়ার্ড আছে। সবগুলোই নদী ভরাট করে স্থাপন করা হয়েছে।'

আরডিআরসির তৈরি বুড়িগঙ্গার মানচিত্রে দেখা যায়, বিআইডব্লিউটিএ কিছু জমি পুনরুদ্ধার করলেও সেগুলোর অধিকাংশই মাটি দিয়ে ভরাট করা রয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্মপরিচালক গুলজার আলী বলেন, তারা বুড়িগঙ্গাকে 'প্রায় দখলমুক্ত' করেছেন।

তবে নদী দখল করার জন্য যারা মসজিদ তৈরি করেছিলেন, তাদেরসহ বেশকিছু দখলদারদের তারা উচ্ছেদ করতে পারেননি বলে স্বীকার করেন তিনি। তবে সীমানা পিলারের ভেতরের সব জমিই নদীর জায়গায় এবং সেগুলো নদীর জায়গা হিসেবেই থাকবে বলে মন্তব্য করেন গুলজার আলী।

দখলদারদের সতর্ক করে তিনি বলেন, 'আমরা বাকি দখলদারদের তালিকা তৈরি করছি। তাদের সবাইকে উচ্ছেদ করা হবে।'

বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করেই কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত অধিকাংশ উচ্ছেদ পরিচালনা করেছে উল্লেখ করে পরিবেশবাদী আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'তবুও তারা নদীকে পুরোপুরি দখলমুক্ত করতে পারেনি।'

তার ভাষ্য, প্রকৃতপক্ষে সরকার একটি নদীকে পুরোপুরি দখলমুক্ত করার উদাহরণ তৈরি করতে পারেনি।

২০০৯ সালে হাইকোর্ট বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু এবং শীতলক্ষ্যা নদীকে আগের অবস্থায় ফেরাতে এবং দূষণ ও দখল থেকে রক্ষা করতে সরকারকে নির্দেশ দেন।

পাশাপাশি হাইকোর্ট নদী ভরাট করতে ব্যবহৃত মাটি অপসারণের জন্য দখলদারদের কাছ থেকেই প্রয়োজনীয় খরচ আদায় করার আদেশ দেন। বিআইডব্লিউটিএ যা এখনো করতে পারেনি।

Comments

The Daily Star  | English

Time to build the country after overcoming dictatorship: Tarique

Highlights need to build skilled generations across all sectors

57m ago