আমার ময়লা করার অধিকার আছে, পরিষ্কার করবে শুধু সিটি করপোরেশন

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্‌মুদ। ছবি: সংগৃহীত

শহর পরিষ্কার রাখতে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব আছে।

তিনি বলেন, ঢাকায় সোয়া ২ কোটি মানুষ। সবাই মনে করে আমার ময়লা করার অধিকার আছে, পরিষ্কার করবে শুধু সিটি করপোরেশন। আমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে ময়লা ফেলবো। নর্দমায় ফেলবো, বাড়ির উপর থেকে নিচে ছুড়ে মারবো, রাস্তায় ফেলবো—আমার কোনো দায়িত্ব নেই। প্রত্যেকটা মানুষ যেন মনে করে আমার কোনো দায়িত্ব নেই। দায়িত্ব শুধু সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের। এভাবে কোনো দিন একটা শহর বসবাসযোগ্য রাখা সম্ভব না। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব আছে।

আজ শুক্রবার আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটি আয়োজিত সেমিনারে অংশ নিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, পলিথিন বন্ধের একটা আইন আছে। এখন সব কিছুতে পলিথিন দেওয়া হয়। মাঝে মাঝে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করে তারপর আবার হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। মানুষ অসচেতন। মানুষ যদি পলিথিন না নিত, পলিথিন দিতো না। আইন হওয়ার পর থেকে আমি পলিথিন নেই না। ২০০০ সালে আইন হয়েছে, সরকারে এসেছি তো পরে। আমার স্টাফরা যদি কেউ নেয় আমি নিষেধ করি। মানুষকে সচেতন করা দরকার। এটি না হলে কোনো কিছু রক্ষা করা সম্ভব না।

আমরা চট্টগ্রামের মানুষ। নোয়াখালী, সিলেট এসব এলাকার প্রচুর বিদেশে থাকে। বাড়ি করার সময় বড় বিলের মাঝখানে একটা জায়গা কেনে। সেখানে বাড়ি করে যাতে বড় রাস্তা থেকে দেখা যায়। গ্রামের ভেতরে করলে তো বড় রাস্তা থেকে দেখা যায় না। বাড়ি করার সময় পরিবেশ-প্রকৃতি কোনো দিকে খেয়াল নেই। আগে শহরে নর্দমার গন্ধের মধ্যে বসবাস করতে হতো বা করতে হয়, এখন গ্রামেও নর্দমার গন্ধের মধ্যে বসবাস করতে হয়। যেসব ঘন বসতিপূর্ণ গ্রাম। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে, বলেন তথ্যমন্ত্রী।

বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির উদ্দেশে বলেন, আপনাদের অনুরোধ জানাবো মাঝে মাঝে ইন্ডাস্ট্রিতে গিয়ে আপনারা যদি ট্যুর দেন এবং সেখানে গিয়ে বলেন; এভাবে প্রকৃতি ধ্বংস করবেন না। আপনারা টেলিভিশনের ক্যামেরা সঙ্গে নিয়ে যান। যেহেতু ক্ষমতাসীন দল, সে জন্য অন্য কোনো মেজার নেওয়ার কথা বলবো না। শত কোটি টাকার মালিক, হাজার কোটি টাকার মালিক, গুলশান-বনানীতে অট্টালিকা বানিয়েছেন কিন্তু প্রকৃতি মেরে ফেলবেন না। আমাদের নদীগুলোকে মেরে ফেলবেন না—এই কথা ঢাকা শহরে দুতিনটা টিম করে বললে মানুষ গ্রহণ করবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ রক্ষা করার জন্য অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা পরিকল্পনা করার পর অন্যান্য দেশ সহযোগিতা চেয়েছে তাদের পরিকল্পনা করতে। আমেরিকা থেকেও ডাক পেয়েছে অনেকে। অনেক উন্নত দেশ থেকে ডাক পেয়েছে তাদের সহায়তা করার জন্য। বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড করেছে। যেখানে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৮ শতাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যারা নিজের স্বার্থে প্রকৃতি ধ্বংস করছে, যারা বড় বড় শিল্পপতি, তারা শিল্প উৎপাদনের সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণের কথা মাথায় রাখেনি। বরং পরিবেশ প্রকৃতি ধ্বংস করছে। যারা নদীকে গলা টিপে মারছে তারা মানুষের শত্রু। এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকলেও আমি পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্র। আমি অ্যাক্টিভিস্ট ছিলাম। ১০ বছর আমি আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। সে জন্য বিষয়গুলো আমাকে ভাবায়। পৃথিবীটা যদি বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায় তাহলে অন্য সংবাদের আর গুরুত্ব থাকে না। পৃথিবীতে চতুর্থ পর্যায়ের প্রাণ আমরা। আমাদের আগে ৩ বার, কারো কারো মতে ৫ বার প্রাণের সঞ্চার হয়েছিল সেগুলো আবার বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিছু কিছু প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী বেঁচে আছে ভিন্ন রূপে। আগে যে প্রাণীগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেই কারণ ছিল প্রাকৃতিক। আজকে পৃথিবীর যে উষ্ণায়ন এর কারণ কিন্তু প্রাকৃতিক না। এখনেই হচ্ছে পার্থক্য। শিল্প বিপ্লবের পর ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেড়েছে। আমাদের কারণে বেড়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka condemns desecration of national flag in Kolkata

Condemns violent protests outside its Deputy High Commission in Kolkata

1h ago