কার্বন নিঃসরণ কমাতে বাংলাদেশের ১৭৬ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন

গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ ২০৩০ সালের মধ্যে ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমাতে বাংলাদেশের ১৭৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ বৈশ্বিক উষ্ণতাকে কমিয়ে শিল্প বিপ্লবের আগের সময়ের মতো ১.৫ সেলসিয়াসের নিচে রেখে জলবায়ু বিপর্যয় এড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সচেষ্ট হবে।

গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ ২০৩০ সালের মধ্যে ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমাতে বাংলাদেশের ১৭৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ বৈশ্বিক উষ্ণতাকে কমিয়ে শিল্প বিপ্লবের আগের সময়ের মতো ১.৫ সেলসিয়াসের নিচে রেখে জলবায়ু বিপর্যয় এড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সচেষ্ট হবে।

যদি নিঃসরণ কমানোর জন্য বিশেষ কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০৯ দশমিক ৪ মিলিয়ন টন গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করবে। তবে একে আভ্যন্তরীণ কার্যক্রম এবং বাইরের সহায়তার মাধ্যমে ৩১৯ দশমিক ৯৪ মিলিয়নে নামানো যাবে। হালনাগাদ করা ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশান্স (এনডিসি) এ এই লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হয়েছে।

এই এনডিসি জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ নামক সংস্থার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। কপ২৬ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ২০০ দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে প্যারিস চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলবে।

এনডিসিতে বাংলাদেশ দুই ধরনের পরিকল্পনা উল্লেখ করেছে: শর্তাধীন ও নিঃশর্ত পরিকল্পনা।

নিঃশর্ত পরিকল্পনার জন্য শুধুমাত্র সেসব উদ্যোগকে বিবেচনা করা হয়েছে, যেগুলো বর্তমান স্থানীয় সক্ষমতা ও অর্থায়নের আভ্যন্তরীণ উৎসের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

শর্তাধীন পরিকল্পনাগুলো আন্তর্জাতিক তহবিল ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার মাধ্যমে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।

নিঃশর্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী, গ্রীন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ ২০৩০ এর অনুমিত নিঃসরণ বা বিজনেস এস ইউজুয়াল (বিএইউ) মাত্রার চেয়ে ২৭ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন টন (৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ) কমানোর কথা বলা হয়েছে।

এই উদ্যোগের বাস্তবায়নে ১০ বছরে ৩২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।

শর্তাধীন পরিকল্পনায় গ্রীন হাউস গ্যাসের নিঃসরণের হার ২০৩০ সালে বিএইউ এর চেয়ে ৬১ দশমিক ৯ মিলিয়ন টন (১৫ দশমিক ১২ শতাংশ) কমে যাবে। এর জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন হবে অতিরিক্ত ১৪৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার।

সার্বিকভাবে, নিঃসরণের পরিমাণ ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমাতে জালানি ও পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিনিয়োগ প্রয়োজন, যার মূল্য মান ১৬৮ দশমিক ২৭ বিলিয়ন।

প্রয়োজনীয় তহবিল পাওয়া গেলে দেশে ৪ হাজার ১১৪ দশমিক ৩ মেগাওয়াটের নবায়নযোগ্য জালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন, কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার (১২ হাজার ১৪৭ মেগাওয়াট উৎপাদনের জন্য), একটি নতুন কমবাইন্ড সাইকেল গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ (৫ হাজার ৬১৩ মেগাওয়াট), বর্তমান গ্যাস টার্বাইন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের দক্ষতা বাড়ানো (৫৭০ মেগাওয়াট) এবং প্রিপেইড মিটার বসানো এবং ২০৩০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিদ্যুৎ বিতরণ সংক্রান্ত ক্ষতি কমানো, ইত্যাদি উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বড় শহরগুলোতে বিদ্যুৎচালিত বাস সেবা চালু করা হবে এবং একটি চার্জিং স্টেশন নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা হবে।

এছাড়াও রাস্তায় যানজট কমানোর জন্য অর্থ ব্যয় করা হবে (জালানি উপযোগিতা ১৫ শতাংশ বাড়বে), রাস্তা প্রশস্ত করা (২ থেকে ৪ লেন) এবং রাস্তার গুণগত মানোয়ন্নন, অযান্ত্রিক যানবাহন তৈরি এবং বাইসাইকেলের জন্য আলাদা লেন, ইলেক্ট্রনিক রোড প্রাইসিং অথবা কনজেশন চার্জিং, রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমানো এবং ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়ি ব্যবহারকে উৎসাহিত করা।

এই খাতের লক্ষ্যমাত্রা হবে এনার্জি এফিশিয়েন্সি অ্যান্ড কনসারভেশান মাস্টার প্ল্যান (ইইসিএমপি) অনুযায়ী বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে ২০ শতাংশ জালানি দক্ষতা অর্জন। সবুজ শিল্প ও কার্বন অর্থায়নেরও প্রচারণা চালানো হবে।

কৃষি ও বনায়ন খাতে সর্বমোট ৩ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।

কৃষি খাতে ধান খেত থেকে মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে শুষ্ক মৌসুমে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার এবং শস্য শুকানোর বিকল্প পন্থা ব্যবহার করা হবে। ২১ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে উন্নত ধানের জাত ব্যবহার করা হবে। এসব উদ্যোগের জন্য তহবিলের প্রয়োজন।

বনায়ন খাতে বন ধ্বংস ঠেকানো, বনায়ন উদ্যোগ, বন রক্ষণাবেক্ষণ সহ আরও অনেক কার্যক্রমের জন্য এই তহবিল ব্যয় করা হবে।

পৌরসভাগুলোতে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের জন্য ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। এতে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার আধুনিক প্রক্রিয়া চালু করা হবে এবং পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থারও উন্নয়ন কর হবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, 'এনডিসিতে উল্লিখিত উদ্যোগগুলো ইতিবাচক।'

তিনি আরও জানান, তবে সরকার এককভাবে এগুলো বাস্তবায়নের জন্য দায়বদ্ধ নয়। বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণও জরুরি, জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'সারা বিশ্বে বেসরকারি খাত কার্বন নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।'

তিনি যোগ করেন, উন্নত দেশ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক বাস ও গাড়ি উৎপাদনে বিনিয়োগ করার বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন জানান, উন্নত দেশগুলো, বিশেষ করে জি-২০ দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য হাতে নেওয়া বৈশ্বিক উদ্যোগে নেতৃত্ব দিতে হবে।

বৈশ্বিক নেতাদের গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে, জানান তিনি। তিনি গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটির প্রতি আহ্বান জানান বর্তমান সময়ের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করতে, যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলো প্যারিস জলবায়ু চুক্তির আওতায় বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার অনুদান পেতে পারে।

প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Dengue danger not over yet

As rain and thunderstorms are expected in various parts of the country over the next few days, experts warn that the dengue season could extend further this year.

1h ago