৫০ বছর বয়সে ছেলে-মেয়ের সঙ্গে সিরাজুল ইসলামের আলিম পাস

মেয়ের সঙ্গে বিজয়ের হাসি হাসছেন সিরাজুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

কথায় আছে শিক্ষার কোনো বয়স নেই। সেই কথা যেন আরও একবার প্রমাণ করলেন খাগড়াছড়ির সিরাজুল ইসলাম। ৫০ বছর বয়সে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে আলিম পাস করেছেন তিনি। সিরাজুল ইসলাম মাটিরাঙ্গা উপজেলার কাচালং ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা।

পাস করার পর দ্য ডেইলি স্টারকে সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'আমি রেজাল্ট প্রকাশের পর খুবই আনন্দিত। আমার নাতি-নাতনি ও মেয়ের সঙ্গে সেই আনন্দ উপভোগ করছি। আমার মনে হচ্ছে আমি জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন পার করছি।'

এই বয়সে এসে পড়ালেখা শুরু করায় কোনো সমস্যায় পড়তে হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার আসলে বড় কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। দু'একজন সমালোচনা করেছিলেন। আসলে সবখানেই এমন দু'একজন থাকে। তাছাড়া কিন্তু সবাই আমার পাশে ছিলেন, সবাই আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন, প্রেরণা যুগিয়েছেন। আমার সঙ্গে যারা পরীক্ষা দিয়েছে তারাও খুব আন্তরিক ছিল। তারা আমাকে নানা বলে ডাকত। পরীক্ষা শেষে বাইরে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরত। অনেক সময় আমার সঙ্গে ছবিও তুলত।'

'আবার আমাকে নিয়ে এলাকাতে আলোচনা হতো। আমার সঙ্গে মেয়ে, আমার ছেলে ও আমার বড় মেয়ের নাতি সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছে- এসব শুনে মানুষ কিন্তু আমাদের প্রশংসা করত। সবাই বলত, পুরো পরিবার শিক্ষার দিকে যাচ্ছে। আমার কথা হচ্ছে শিক্ষার জাগরণ হতে হবে। কথায় আছে তো যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। আর জাতি উন্নত হলে শিক্ষার উন্নয়ন হবে। আমি আশাকরি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ুক। সেখানে বয়স যেন কোনো বাধা না হয়,' যোগ করেন তিনি।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'আমি দাখিল পাস করেছিলাম ১৯৮৭ সালে। তারপর আমার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। এর বড় কারণ ছিল পরিবারে আমি সবার ছোট ছিলাম। বাবা-মায়ে বয়স তখন অনেক। তখন গ্রাম থেকে আলিম পড়াও সম্ভব ছিল না। কারণ আমাদের গ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। পড়তে হলে গ্রাম ছেড়ে শহরে যেতে হবে। কিন্তু, আমার পক্ষে পরিবার রেখে যাওয়া সম্ভব ছিল না। কারণ, আমার বাবা-মাকে দেখার মতো কেউ ছিল না। এজন্য পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়।'

রেজাল্টের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'রেজাল্ট তেমন ভালো হয়নি। তবে, যা হয়েছে তাতেই আমি খুশি। আমার রেজাল্ট হয়েছে ২.১৪। আমি তো এখন চাকরির জন্য পরীক্ষা দেইনি। আমার দরকার মানুষের মাঝে প্রেরণা যোগানো এবং সবাইকে শিক্ষা সচেতন করা।'

শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, 'এখনো কোনো পরিকল্পনা করিনি। পরিবারের সদস্যরা বলছেন ডিগ্রিতে ভর্তি হতে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।'

জানতে চাইলে তাইন্দং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পেয়ার আহমেদ বলেন, 'আমি বিষয়টি জেনেছি। আসলে ওনার এখন সার্টিফিকেট প্রয়োজন নেই। উনি আনন্দ থেকে পরীক্ষা দিয়েছেন। আমি খুব খুশি হয়েছি। তাকে দেখে অনেকে হয়তো উৎসাহী হবে।'

শুধু সিরাজুল ইসলাম নন এবছর তার সঙ্গে তার ছেলে-মেয়ে এবং বড় মেয়ের নাতিও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। তার ছোট মেয়ে মাহমুদা সিরাম খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ ৪.১৭ পেয়ে এইচএসসি পাস করেছেন। তার একমাত্র ছেলে নেছারুদ্দীন আহমদ চট্টগ্রাম বায়তুশশরফ কামিল মাদরাসা থেকে আলিম পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৪.০০ পেয়েছেন। এছাড়া, তার বড় মেয়ের নাতি মো. নাজমুল হাসান জিপিএ ৪.৬৭ পেয়ে এইচএসসি পাস করেছেন।

ছয় কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

Comments

The Daily Star  | English

Dhanmondi’s dining delights

In the 1990s, Dhanmondi was just another quiet neighborhood in Dhaka, with the occasional tinny tinkle of rickshaws on Satmasjid Road. If you craved something to renew your taste buds, Bailey Road, Gulshan, or Banani were the places to go.

11h ago