ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি: কোন নিয়মে চলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়?
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় আদর্শ কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না। উপাচার্যসহ প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলোতে পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতিও বদলায়।
এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান প্রশ্নবিদ্ধ হয় বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের প্রশাসনের কয়েকজন অধ্যাপক।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদেরকে দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ গত ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে শুধুমাত্র একবার পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।
তবে প্রশাসনের দাবি, করোনায় শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে, শুধুমাত্র এবারের জন্যেই এই সুযোগ রাখা হয়েছে।
অর্থাৎ আগামী বছর আবারও পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে রাবি প্রশাসন দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ বন্ধ করে।
পরের বছর ২০১৭ সালে, প্রশাসনের পালাবদল ঘটার সঙ্গে সঙ্গে এই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসে। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান সিদ্ধান্ত নেন, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ চালু থাকবে।
সেসময় উপাচার্য বলেছিলেন, রাবির অধিকাংশ শিক্ষার্থীই আসে দেশের উত্তরের জেলাগুলো থেকে। এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা যাতে জ্ঞান বিজ্ঞানে আরও বেশি এগিয়ে যেতে পারে, সে লক্ষ্যেই দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
কিন্তু এই প্রশাসনই আবার ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেয়। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরের ২ বছর ভর্তি পরীক্ষা হয়।
এছাড়া ২০১৯-২০ সালে প্রথমবারের মতো ভর্তির জন্য লিখিত পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা হয়। এর পরের বছরই এই পদ্ধতি পরিবর্তন করা হয়।
রাবি প্রশাসন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবারের মতো ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীর সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ৫টি ইউনিটে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারবে বলে জানানো হয়।
অথচ ২০২০-২১, শিক্ষাবর্ষে ইউনিট সংখ্যা ৫ থেকে কমিয়ে ৩ করার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষার্থী সংখ্যা বাড়িয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার করা হয়।
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার জন্যে আবারও এই সংখ্যা পরিবর্তন করা হয়েছে। ৩টি ইউনিটে এই সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লক্ষ ১৬ হাজার।
এ ব্যাপারে সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহানের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করা হয়। যারা পরবর্তীতে আমাদের সমাজ, দেশকে পরিচালনা করে, এগিয়ে নিয়ে যায়। কাজে এই পদ্ধতি অবশ্যই সেই মাপের হওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত হবে, নির্দিষ্ট মান নির্ধারণ করা এবং সে অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া।
প্রথমবারের মতো যখন দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ বন্ধ করা হয়, তখন উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজানুদ্দিন। তিনি করেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শিক্ষার মান উন্নত করতে আমরা সেসময় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আন্দোলনের মুখেও আমরা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করিনি, কারণ শিক্ষার মান ধরে রাখতে সেটা জরুরি ছিল। পরে শিক্ষার্থীরাও এটা বুঝতে পেরেছে।
তবে বছর পেরোতেই এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়, যার পেছনে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য ছিল বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এই উপাচার্য।
তিনি বলেন নিয়ম-নীতি নির্দিষ্ট হওয়া উচিত। তবে যখন বারবার নিয়ম পরিবর্তন করা হবে, তখন বুঝতে হবে এর মধ্যে কোনো গলদ আছে, তখন আর এর ওপরে ভরসা করা যায় না। নিয়মটাও ঠিকমতো কাজ করে না তখন।
তাই নিয়ম নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানেরও উন্নয়ন ঘটে।
এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন, এতদিনেও একটা নির্দিষ্ট নিয়ম দাঁড় করানো যায়নি এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যর্থতাও বটে। তবে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ করে পদ্ধতিকে কীভাবে উন্নত করা যায়, আমরা সেই চেষ্টা করব।
তবে পরীক্ষা পদ্ধতিতে বাবার পরিবর্তন আনার ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম নীতি প্রণয়নে আমাদের ব্যক্তিগত কোনো ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রভাব পড়ে না। ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও সেটি প্রতিফলিত হয়েছে। এ সংক্রান্ত উপকমিটি সভা করে আলোচনার মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেভাবেই পরীক্ষা হবে। এ ছাড়া দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকেও নানাভাবে বলা হয়েছিল। আমরা সেটাই অনুসরণ করেছি মাত্র।
তবে নির্দিষ্ট পদ্ধতি থাকা জরুরি কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্থির কিছু নয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, সেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নিয়ম কানুনেও পরিবর্তন আসবে।
Comments