আইইএলটিএস: প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

ছবি: সংগৃহীত

যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি না, তাদের ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতিকে বলে ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম (আইইএলটিএস)।

এক সময় যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য আইইএলটিএস অপরিহার্য ছিল। তবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এ পরীক্ষার স্কোর গ্রহণ করছে এবং ইউরোপের বেশির ভাগ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইইএলটিএস গ্রহণ করে থাকে। 

ব্রিটিশ কাউন্সিল, আইডিপি: আইইএলটিএস অস্ট্রেলিয়া ও কেমব্রিজ ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাসেসমেন্ট যৌথভাবে এটি পরিচালনা করে।

আইইএলটিএস পরীক্ষায় যে কেউ অংশ নিতে পারেন, কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। এখানে বয়সেরও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

আইইএলটিএস পরীক্ষার ধরন

আইইএলটিএস পরীক্ষা ২ ধরনের পদ্ধতিতে নেওয়া হয়। একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেনিং। 

একাডেমিক মডিউল

বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর অথবা পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য একাডেমিক মডিউলে পরীক্ষা দিতে হয়।

জেনারেল ট্রেনিং

কোনো শিক্ষার্থী যদি কারিগরি বিষয় বা প্রশিক্ষণে ভর্তি হতে চান, তবে তাকে জেনারেল ট্রেনিং মডিউলে পরীক্ষা দিতে হয়। এ ছাড়া যারা ইমিগ্রেশনের জন্য যেতে চান, তাদেরকেও জেনারেল ট্রেনিং মডিউলে পরীক্ষা দিতে হয়।

ছবি: সংগৃহীত

পরীক্ষা পদ্ধতি

আইইএলটিএস পরীক্ষায় দুই ধরনের মডিউলেই ৪টি অংশ থাকে। লিসেনিং (Listening), রিডিং (Reading), রাইটিং (Writing) ও স্পিকিং (Speaking)।

লিসেনিং 

রেকর্ডিং কথোপকথন শুনে এ অংশে প্রশ্নের উত্তর করতে হয় পরীক্ষার্থীদের। কথোপকথন শুনে বোঝার ক্ষমতা যাচাই করা হয়। যেখানে ৪০টি প্রশ্ন থাকে। ৩০ মিনিটে ৪টি অংশে এ পরীক্ষা নেওয়া হয়। একটি বিষয় কেবল একবারই বাজিয়ে শোনানো হয়।

এ অংশে পরীক্ষার্থীদের অ্যাকসেন্ট বুঝতে হয়। তারা ৪ রকম অ্যাকসেন্টের মুখোমুখি হতে পারেন। যেমন- ব্রিটিশ, আমেরিকান, ক্যানাডিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ান। 

এক্ষেত্রে বিভিন্ন অনলাইন ভিডিও ও ইউটিউব ভিডিও, চলচ্চিত্র, খেলার ধারাভাষ্য সহায়ক হতে পারে। 

রাইটিং

এ অংশে ইংরেজি লেখার দক্ষতা যাচাই করা হয়। যেখানে ১ ঘণ্টায় দুটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয়। দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে প্রথম প্রশ্নের চেয়ে বেশি নম্বর থাকে।

রাইটিং-এ ২ ধরণের টাস্ক থাকে। টাস্ক-১-এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন লেখচিত্র বা গ্রাফ-এর বর্ণনা দিতে হতে পারে।

টাস্ক-২-এর ক্ষেত্রে মূলত বিশ্লেষণী দক্ষতা, সমালোচনামূলক মূল্যায়ন এর দরকার হয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন বা সমালোচনামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ বিস্তারিতভাবে পড়া থাকলে বেশ সহায়ক হয়। 

এক্ষেত্রে একটি ফরম্যাট অনুসরণ করা যায়। প্রথম ও দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে আগে সূচনা। এরপর মূল কথা বা আইডিয়া, তারপর কারণ বা যৌক্তিক বিশ্লেষণ। সবশেষে উদাহরণ। এ নিয়মটি অনুসরণ করলে স্কোর ভালো এসে থাকে।
 
আবার রাইটিং এর জন্য বিবিসি বা ইকোনোমিস্টের মতো সংবাদমাধ্যমগুলোর নিবন্ধ নিয়মিত পড়ার অভ্যাস থাকলে ভালো হয়। টেড টক বা টেডএক্স-এর মতো অনলাইন পডকাস্টগুলোতে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলা হয়। ভিডিওগুলো লেখার পাশাপাশি শোনা ও পড়ার দক্ষতাও বৃদ্ধি করতে পারে। 

স্পিকিং 

স্পিকিং অংশে পরীক্ষার্থীদের মোটামুটি ১১ থেকে ১৪ মিনিটের পরীক্ষা দিতে হয়। প্রথম অংশে পরীক্ষার্থীকে কিছু সাধারণ প্রশ্ন করা হয়, যেমন: পরিবার, পড়াশোনা, শখ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। 

দ্বিতীয় অংশে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে ২ মিনিট কথা বলতে হয়। এর আগে প্রস্তুতির জন্য এক মিনিট সময় দেওয়া হয়। 

তৃতীয় অংশে থাকে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে পরীক্ষকের সঙ্গে ৪-৫ মিনিটের কথোপকথন।

এ অংশে বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়। যেমন- কথার গতি ও সাবলীলতা (ফ্লুয়েন্সি), শব্দভাণ্ডারের বিস্তৃতি (লেক্সিকাল), ব্যাকরণের বৈচিত্র্যময় ও নির্ভুল ব্যবহার (গ্রামাটিক্যাল রেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাকুরেসি) এবং নির্ভুল ও বোধগম্য উচ্চারণ (প্রনানসিয়েশন)।

রিডিং 

এ অংশে পরীক্ষার্থীদের ১ ঘণ্টায় ৩টি অনুচ্ছেদ থেকে মোট ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। বিভিন্ন জার্নাল, বই, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন থেকে কিছু অংশ তুলে দেওয়া হয়ে থাকে। সেখান থেকেই বাক্য পূরণ, সংক্ষিপ্ত উত্তর, সঠিক উত্তর খুঁজে বের করা ইত্যাদি প্রশ্ন থাকে।

রিডিংয়ের ক্ষেত্রে আগে প্রশ্ন পড়ে নেওয়া ভালো। তা না হলে পুরো অনুচ্ছেদ পড়তে গিয়ে পরীক্ষার্থীরা খেই হারিয়ে ফেলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যাদের নিয়মিত ইংরেজি পত্র-পত্রিকা পড়ার অভ্যাস আছে তারা ভালো করতে পারেন। ইংরেজি সাহিত্যে দখল থাকলে আরও ভালো। আর বিশেষত ভোকাবুলারি বা শব্দভান্ডার যার যত ভালো, রিডিং টেস্ট বা পড়ে বোঝার ক্ষমতায় তারা ততটাই এগিয়ে থাকেন।

ছবি: সংগৃহীত

আইইএলটিএস প্রস্তুতি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন তাওসিফ ফেরদৌস তান। তিনি সম্প্রতি আইইএলটিএস পরীক্ষা দিয়ে বেশ ভালো স্কোর করেছেন। এখন অপেক্ষায় আছেন ইউরোপের কোনো দেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাওয়ার। 

তাওসিফ তার প্রস্তুতি সম্পর্কে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি কোনো কোচিংয়ে ভর্তি হইনি। নিজেই পড়তাম। এমনিতে কেমব্রিজের আইইএলটিএস বইটাই বেশি প্রচলিত। তবে, আমি ইন্ডিয়ান বই ফলো করেছি। বিভিন্ন মক টেস্ট দিতাম। লিজ (Liz) কিংবা ইংলিশ উইথ স্পিকারস সার্চ-এর মতো কিছু ইউটিউব চ্যানেল অনুসরণ করেছি।'

রিডিং-এ ৯, স্পিকিং ও লিসেনিং এ ৮.৫ ও রাইটিং এ ৭ ছিলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমার মনে হয় রিডিং ও লিসেনিং আনুপাতিকভাবে সহজ। যারা নিয়মিত পেপার পড়েন, ইংলিশ বই পড়েন তাদের সমস্যা হবার কথা না। আমি ক্রিকেট খেলার ধারাভাষ্য কিংবা বিভিন্ন সিনেমা বা সিরিজের ডায়ালগগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতাম। আর ভালোভাবে প্রিপারেশন নিয়েছিলাম ১৫ দিন। যদি আপনার বেসিক ইংরেজিতে ঘাটতি থাকে, তাহলে কোনো কোচিংয়ের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।'

তিনি বলেন, 'আমি ইউটিউবে ১.২৫ গুণ গতিতে ভিডিওগুলো শুনতাম। এটা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আর স্পিকিং-এ বেশি দরকার ফ্লুয়েন্সি। আপনি কতটা সাবলীল, ভোকাবুলারি কিংবা বেসিক কতটা ভালো- এটা গুরুত্বপূর্ণ। রিডিং এ গাইড সলভ করলে ভালো ফল আশা করা যায়। রাইটিং এর জন্য ইংরেজিতে বিভিন্ন আর্টিকেল নিয়মিত পড়া দরকার। এখানে কিছু ফরম্যাটের ব্যাপার আছে। ফরম্যাট অনুসরণ করে লিখলে নাম্বার আরও ভালো আসতে পারে।'

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিদ্যুৎ ও তড়িত প্রকৌশল বিভাগ থেকে  স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ঋত্বিক দত্ত বর্তমানে প্রভাষক পদে কর্মরত আছেন চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। আইইএলটিএস নিয়ে তার আগ্রহ এবং এর সুবিধা-সুবিধার বিষয়ে বললেন, 'আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা সাধারণত উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ যাবার জন্য IELTS, TOEFL, DUOLINGO ও PTE- এই টেস্টগুলো দেয়। এর ভেতর প্রথম দুটো বেশি প্রচলিত। আমি আইইএলটিএস নিয়ে আগ্রহী হয় কারণ, ইউরোপের দেশগুলোর স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাবার ইচ্ছা ছিল। তাই আগে থেকেই এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা অর্জন করি। আমি সামনে আমেরিকায় যাচ্ছি। এজন্য সাধারণত টোফেল বেশি কার্যকর। তবে আইইএলটিএস দিয়েও আমি ওখানে স্কলারশিপ পেয়েছি। এতে কোনো সমস্যা হয়নি। 

প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমি মূলত নিজে নিজেই পড়তাম। মক টেস্ট দিতাম। লিজ (Liz) নামে একটি ওয়েবসাইট আছে। এদের চ্যানেল ও সাইট খুবই সহায়ক।  লিসেনিং ও রিডিং এর জন্য ইউটিউবে ভিডিও দেখেছি, বিভিন্ন বই-পত্র, আর্টিকেল পড়েছি। এ দুটো আমার মনে হয় তুলনামূলক সহজ। তবে, স্পিকিং ও রাইটিং এর জন্য একজন শিক্ষক বা মূল্যায়নকারী থাকা ভালো, যিনি আপনাকে এক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারবেন। আমি এরকম একজনের সাহায্য নিয়েছিলাম। উনি মক টেস্টের মূল্যায়ন করে আমাকে সাহায্য করেছেন। তবে একটা অসুবিধার কথাও বলি। টোফেল এর ফল নিজেই সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো যায়, কিন্তু আইইএলটিএস-এর ফল আইডিপি বা ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে পাঠাতে হয়। যাতে প্রায় পনের দিন সময় লাগে।' 

নিজে নিজে প্রস্তুতি নিতে চাইলে কেমব্রিজ আইইএলটিএস স্টুডেন্টস' বুক এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো সহায়ক হতে পারে। এ ছাড়া Ielts liz, Ielts Simon, Ielts exam, Ielts for free, Ielts mentor, Ielts fighter, Ielts podcast, Ielts buddy ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলগুলো সহায়ক হতে পারে।

 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

12h ago