যেভাবে শুরু করবেন জিআরই প্রস্তুতি

ছবি: সংগৃহীত

ইউরোপ-আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের জন্য জিআরই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞান, মানবিক বা বাণিজ্য যে বিষয়ে পড়তে চান না কেনো, বিশ্বমানের এই পরীক্ষা পদ্ধতি হতে ভর্তির ক্ষেত্রে রাখতে পারে বিশেষ ভূমিকা। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাইলে এখন থেকে শুরু করা উচিত আপনার জিআরই প্রস্তুতি।

 জিআরই কী?  

জিআরইর পূর্ণরূপ গ্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশন। সাধারণত একজন শিক্ষার্থীর বিশ্লেষণী দক্ষতা যাচাই এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য। গবেষণাধর্মী কাজের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীর বিশ্লেষণ ক্ষমতা প্রখর হতে হয়। আর সেটি যাচাইয়ের জন্য অনলাইনে ৩ ধাপে এই পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। 

পরীক্ষা পদ্ধতি

জিআরই ২ ভাবে দেওয়া যায়। সাবজেক্ট টেস্ট ও জেনারেল টেস্ট। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীরা মূলত জেনারেল টেস্টই দিয়ে থাকেন। এটি ৩ ধাপে গ্রহণ করা হয়। যেমন, অ্যানালিটিক্যাল রাইটিং, ভার্বাল রিজনিং ও কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিং।  

অ্যানালিটিক্যাল রাইটিং

অ্যানালিটিক্যাল অংশটি মূলত লিখিতভাবে পরীক্ষা নেওয়া হয়। শূন্য থেকে ৬ স্কেলের মধ্যে নম্বর দেওয়া হয়। শিক্ষার্থী কীভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতি যাচাই বা মূল্যায়ন করবেন এই অংশে মূলত সেটা পরখ করা হয়। সাধারণত ভালো প্রস্তুতি থাকলে সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ পাওয়া যায়। 

এখানে আবার দুটো অংশ থাকে। ইস্যু ও আর্গুমেন্টেটিভ অংশ। প্রতিটি অংশের জন্য আধাঘণ্টা করে মোট একঘণ্টা সময় দেওয়া হয়।              

ছবি: সংগৃহীত

ভার্বাল রিজনিং
                         
ভার্বাল অংশটির জন্য সবচেয়ে ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়। এটা ২ ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক ধাপে ২০টা করে প্রশ্ন থাকে, যার জন্য ৩০ মিনিট করে মোট ১ ঘণ্টা সময় পাওয়া যায়। এখানে ৩ ধরনের প্রশ্ন আসে। নিয়মিত ইংরেজি সাহিত্য পাঠ ও বিভিন্ন নিবন্ধ পাঠ করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। 

টেক্সট কমিপ্লিশন

শূন্যস্থান পূরণ। একটা শূন্যস্থান থাকলে ৫টা অপশন, সেখান থেকে একটা সঠিক উত্তর বাছাই করতে হয়। একাধিক শূন্যস্থান থাকলে প্রত্যেকটার জন্য ৩টা কেরে অপশন থাকবে। সেখান থেকে একটা করে বাছাই করতে হয়। 

সেনটেন্স ইকুইভ্যালেন্স

এটাও এক ধরনের শুন্যস্থান পূরণ। তবে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। একটা শূন্যস্থান পূরণের জন্য ৬টা অপশন থাকে, সেখান থেকে দুইটা সঠিক উত্তর বাছাই করতে হয়। ইংরেজি ভাষার শব্দভাণ্ডার ভালো থাকলে এ অংশে ভালো নম্বর পাওয়া যাবে। 

রিডিং কমপ্রিহেনশন

এ অংশে ৩-৪টা অনুচ্ছেদ (প্যাসেজ) থাকে। পড়ে বুঝতে কী বোঝাতে চাচ্ছে। এর জন্য কী কী প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়। একটা প্রশ্ন দিয়ে বলতে পারে, প্যাসেজের কোন লাইন দিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে প্যাসেজ থেকে একটা লাইন সিলেক্ট করতে হবে।

কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিং

আরেকটি ধাপ হলো কোয়ান্টেটিভ রিজনিং বা ম্যাথ সেকশন। অর্থাৎ, এ অংশ গণিত সংক্রান্ত বিষয়াদীর প্রাধান্য থাকে। 

এটাও ২ ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক ধাপে ২০টা করে প্রশ্ন মোট ৪০টা প্রশ্ন থাকে। ২০টা প্রশ্নের জন্য ৩৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়। এখানে ৪ ধরনের প্রশ্ন আসে।

স্কোরিং প্যাটার্ন

সব মিলিয়ে জিআরইতে ৩৪৬ নাম্বারের পরীক্ষা নেওয়া হয়। ভার্বাল রিজনিংয়ে ১৭০, কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিংয়ে ১৭০ ও অ্যানালিটিক্যাল রাইটিংয়ে ৬ নম্বর। 

মজার বিষয় হলো জিআরইতে ৩৪৬ নম্বর থাকলেও ভার্বাল রিজনিংয়ে ৪০ নম্বর, কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিংয়ে ৪০ নম্বর ও অ্যানালিটিক্যাল রাইটিংয়ে ৬ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয়। অর্থাৎ পরীক্ষায় অংশ নিলে ভার্বাল ও কোয়ান্টিটেটিভ অংশে ১৩০ নম্বরের পর থেকে আপনার প্রাপ্ত নম্বর যোগ হবে। 

ভার্বাল ও কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিংয়ে মোট ৩৪০ নম্বরের মধ্যে ৩০৫ মোটামুটি স্কোর এবং ৩১৫-এর বেশি হলো ভালো স্কোর। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩২০-এর উপরে স্কোর থাকলে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সহজ হয়। তবে মানবিক বা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবজেক্টগুলোর জন্য ৩০৫ মোটামুটি মানের স্কোর। 

এ ছাড়া এনালিটিক্যাল রাইটিংয়ে ৩-এর ওপরে পাওয়া উচিৎ।   

ছবি: সংগৃহীত

কোন দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষা নিতে জিআরই প্রয়োজন

ইটিএস বা এডুকেশনাল টেস্টিং সেন্টারের মাধ্যমে বিশ্বের ১৬০টি দেশের ১ হাজারের বেশি কেন্দ্রে জিআরই পরীক্ষার প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করা হয়। 

সাধারণত আমেরিকা, কানাডা, ইউকে, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হতে  জিআরই'র প্রয়োজন হয়। 

শিক্ষার্থীদের স্কলারাশিপ বা ফান্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও বেশ ভালো ভূমিকা রাখে জিআরই স্কোর। বিশেষত বিজ্ঞানের বিষয়গুলো নিয়ে যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও গবেষণায় আমেরিকাতে যেতে চান। আর এ ক্ষেত্রে ভর্তি হওয়ার জন্য জিআরই সবচেয়ে বেশি উপযোগী। 

শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে কেন?  

বাংলাদেশ থেকে জিআরই স্কোরসহ আবেদন করে প্রতিবছর বহু শিক্ষার্থী আমেরিকা, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পড়তে যাচ্ছেন। যদিও আমাদের দেশে অভিভাবক বা তরুণদের বড় একটা অংশের পছন্দ সরকারি চাকরি বা বিসিএস; তবে উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ যাওয়ার জন্য আগ্রহী মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন শান্ত কৈরী। বর্তমানে তিনি পড়াশোনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহামা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জিআরই দিয়েছি মূলত ফান্ডিং পেতে। ইউএসএতে পড়তে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কোচিং না, নিজে নিজেই পড়েছি। তবে জিআরই এখানে শেষ ধাপ না। জিআরইতে যার যত ভালো স্কোর থাকে, তার তত ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশনের সম্ভাবনা থাকে। আর আমি বিসিএস দিইনি, ইচ্ছা তেমন ছিল না। কাজেই আমেরিকায় পড়তে আসার জন্য অ্যাডমিশন টেস্ট হিসেবে জিআরই সেরা অপশন ছিল আমার জন্য।'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএতে পড়াশোনার পাশাপাশি জিআরইর প্রস্তুতি নিচ্ছেন আলভী ফাহাদ। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুলাই মাসে পরীক্ষায় বসবো।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি প্রথম বর্ষে থাকতে অ্যাসাইনমেন্টের অংশ হিসেবে বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানি নিয়ে খোঁজ নিয়েছিলাম। আমার নির্ধারিত দেশ ছিল ফ্রান্স। ফরাসি কোম্পানি সংক্রান্ত খোঁজ নিতে গিয়ে দেখলাম আমাদেরই বিভিন্ন বড় ভাই সেসব কোম্পানিতে আছেন। আগ্রহটা মূলত ওখান থেকেই। আমাদের বিভাগে অন্তত অর্ধেকের মতো শিক্ষার্থী জিআরই দিয়ে বাইরে যায়। বাকিরা করপোরেট সেক্টরে কাজ করেন। আমিও আমেরিকা, যুক্তরাজ্য বা কানাডার কোনো কোম্পানিতে কাজের কথা ভাবছি। তাই জিআরই-এর প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ জন্য আলাদাভাবে কোনো কোচিংয়ে ভর্তি হইনি, ম্যাগুশ নামে একটি সুপরিচিত ওয়েবসাইট থেকে আমি প্রস্তুতির সব উপকরণ সংগ্রহ করেছি।'

যেভাবে  শুরু করবেন জিআরইর প্রস্তুতি 

রাজধানীর নীলক্ষেতে বেশকিছু বইয়ের দোকানে পাওয়া যায় জিআরই'র সব ধরনের বই ও মডেল টেস্টের বিভিন্ন উপকরণ।

এ ছাড়া জিআরই প্রস্তুতির জন্য বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে। যেখান থেকে প্রস্তৃুতি নেওয়া যায়। সেরা ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে আছে, ম্যাগুশ, কাপলান, দ্য প্রিন্সটন রিভিউ, গ্রিনলাইট টেস্ট প্রিপ, ক্রানক্রেপ, প্রিপস্কলার, জিআরইএজ ইত্যাদি। 

এসব ওয়েবসাইটে ৩ মাস থেকে ৬ মাস কিংবা বছরব্যাপী বিভিন্ন কোর্স রয়েছে। আগ্রহী শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে সাইন-আপ করে জিআরইর প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে পারেন। অটুট লক্ষ্য ও দুর্বার অধ্যবসায় থাকলে সাফল্য হাতের মুঠোয় ধরা দেবেই। 
 

Comments