সিলেটের কাছে পাত্তাই পেল না অভিজ্ঞদের ঢাকা
সিলেট সানরাইজার্সের স্পিনে শুরুতেই নাকাল মিনিস্টার ঢাকার ইনিংস হয়ে পড়ল শম্বুক গতির। সেই খোলস ছেড়ে তারা আর বেরুতেই পারল না। বাঁহাতি স্পিনে নাজমুল ইসলাম অপু নিলেন ৪ উইকেট। মামুলি রান তাড়ায় পরে এনামুল হক বিজয়ের ব্যাটে অনায়াসে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় সিলেট।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অভিজ্ঞতায় ভরপুর ঢাকা পুরো ম্যাচ ছিল কোণঠাসা। সিলেটের সঙ্গে কোন লড়াই করতে পারেনি তারা। ঢাকার মামুলি পুঁজি পেরিয়ে সিলেট জিতেছে ৭ উইকেটে। এই নিয়ে চার ম্যাচের তিনটাতেই হারল মাহমুদউল্লাহ-তামিম ইকবাল-মাশরাফি মর্তুজাদের দল।
এদিন আগে ব্যাট করে মাত্র ১০০ রান করতে পারে ঢাকা। উইকেট মন্থর হলেও ওই রান টপকে যাওয়া ছিল একদম সহজ কাজ। সিলেট সেই পথে করেনি কোন ভুল। ১৮ বল আগেই কাজ সেরে ফেলে তারা। দলকে লক্ষ্য পৌঁছে দিতে ৪৫ বলে ৪৫ করেন বিজয়। এর আগে ১৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সিলেটের বোলিং হিরো অপু।
রান তাড়ায় নেমে মারার চেষ্টায় ছিলেন লেন্ডল সিমন্স। তবে ব্যাটে-বলে করতে পারছিলেন না তিনি। ছটফট করে ফেরেনও সবার আগে। যদিও লক্ষ্য একদম নাগালে থকায় ২১ রানের উদ্বোধনী জুটি খুব একটা মন্দ বলা যাচ্ছে না।
৪০২ দিন পর ফেরা মাশরাফি তার দ্বিতীয় ওভারে পান সিমন্সের উইকেট। মাশরাফি আগের বলেই একটি ভাল শট খেলেছিলেন সিমন্স। ফিল্ডার তামিম বল ধরতে গিয়ে পা দিয়ে বাউন্ডারি লাইন স্পর্শ করলেও চার দিতে খেয়াল করেননি আম্পায়ার। পরের বলে তুলে মারতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দেন ক্যারিবিয় ওপেনার।
বিজয় শুরু থেকেই ছিলেন সতর্ক। এগুচ্ছিলেন রানে-বলে মিল রেখে, দলের লক্ষ্য আর উইকেটের কন্ডিশন বিচারে তা ছিল জুতসই। তিনে নেমে মোহাম্মদ মিঠুন দ্রুত গতিতেই রান বাড়াতে থাকেন। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনের জুটিতে আসে গুরুত্বপূর্ণ ৩৮ রান। তাতেই খেলার উত্তেজনা উবে যায়। থিতু হওয়া মিঠুন ১৫ বলে ১৭ করে হাসান মুরাদের বলে টাইমিংয়ে গড়বড় করে উঠিয়ে দেন সহজ ক্যাচ। এরপর কলিন ইনগ্রামকে নিয়ে বাকি কাজ সেরে ফেলেন বিজয়। জয়ের একদম কাছে গিয়ে মাশরাফির বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন বিজয়।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে গিয়ে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে ঢাকা। মোহাম্মদ শেহজাদ আউট হলে দ্বিতীয় ওভারে ক্রিজে আসেন নাঈম শেখ। ওই ওভারে তামিম ইকবাল ফিরে গেলে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটি গড়েন নাঈম। পুরোটা সময় নাঈম ছিলেন খোলস বন্দি। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ব্যাট ছিল সাবলীল। ৪১ বলে তাদের ৪০ রানের জুটিতে ২১ বলে ২৭ রানই আসে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। এই সময়ে ২০ বল খুইয়ে মাত্র ১৩ রান করতে পারেন বাঁহাতি নাঈম।
নাঈমকে বোতলবন্দি করে রাখতে শুরুতে অফ স্পিনার লেলিয়ে দেয় সিলেট। সোহাগ গাজী, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতদের বলে খেলতে থাকেন একের পর এক ডট বল। মুক্তার আলির মিডিয়াম পেসেও হাত খুলতে পারেননি তিনি।
বাঁহাতি স্পিনার অপু বল করতে এসে কাটেন নাঈমকে। তার বলে আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিপ্লেতে দেখা যায় বল লেগেছে গ্লাভসে। ওই ওভারে ৪ বলে ০ করে ফিরে যান আন্দ্রে রাসেলও। তবে তার সিদ্ধান্তটিও ভুল দেন আম্পায়ার শরফুদৌল্লাহ সৈকত।
শুভাগত হোম নেমে ১৫ বলে ২১ করলে তিন অঙ্ক স্পর্শ করার পথ হয় ঢাকার। পরে রুবেল হোসেনের ৬ বলে ১২ রান একশোতে যায় ঢাকা। কিন্তু কোন অবস্থাতেই এত ছোট পুঁজি নিয়ে লড়াই করার বাস্তবতা ছিল না তাদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মিনিস্টার ঢাকা: ১৮.৪ ওভারে ১০০ (তামিম ৩, শাহজাদ ৫, নাঈম ১৫, জহুরুল ৪, মাহমুদউল্লাহ ৩৩, রাসেল ০, শুভাগত ২১, মাশরাফি ২, উদানা ১, রুবেল ১২, মুরাদ ০; তাসকিন ৩/২২, সোহাগ ২/১৭, মোসাদ্দেক ১/১২, মুক্তার ০/১২, নাজমুল অপু ৪/১৮, সানজামুল ০/১৭)।
সিলেট সানরাইজার্স: ১৭ ওভারে ১০১/৩ (সিমন্স ১৬, বিজয় ৪৫, মিঠুন ১৭, ইনগ্রাম ২২* , বোপারা ০*; রুবেল ০/১০, মাশরাফি ২/২১, মুরাদ ১/৩১, রাসেল ০/১৭, উদানা ০/৭, শুভাগত ০/১১, মাহমুদউল্লাহ ০/৪)
ফল: সিলেট সানরাইজার্স ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নাজমুল ইসলাম অপু।
Comments