রানে ফিরতে চট্টগ্রামেও সাকিবের বাড়তি খাটুনি
সতীর্থরা হয়তো তখন কেবল আড়মোড়া ভেঙেছেন। কেউ হয়তো ঘুম থেকেই ওঠেননি। অথচ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হাজির ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দুই থ্রোয়ার নিয়ে একা একা প্রায় দুই ঘণ্টা ঘাম ঝরান বাংলাদেশের এই তারকা অলরাউন্ডার।
ব্যাট হাতে রানে নেই সাকিব। ওয়ানডে ও টেস্টে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু রান পেলেও টি-টোয়েন্টিতে শেষ ফিফটির দেখা পেয়েছেন প্রায় আড়াই বছর আগে। এই সংস্করণে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ৭০ রানই তার শেষ বড় ইনিংস। মাঝে অবশ্য এক বছরের নিষেধাজ্ঞায় ছিলেন। তবে করোনাভাইরাসের কারণে ওই সময় সে অর্থে মাঠে ছিল না খেলা।
বল হাতে অবশ্য খারাপ করছেন না সাকিব। এই বিপিএলেই পেয়েছেন সব ধরনের টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ইতিহাসে পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে ৪০০ উইকেটের স্বাদ। কিন্তু ব্যাট হাতে রয়েছেন খোলসেই বন্দি। রানখরা থেকে মুক্তি পেতেই হয়তো এদিন তাই কেবল ব্যাটিং অনুশীলন করেন। বোলিং করেননি, অংশ নেননি দলের ফিল্ডিং অনুশীলনেও।
সবার আগে মাঠে এসে ব্যাটিং নিয়ে বাড়তি কাজ করেন সাকিব। অবশ্য বিপিএলের শুরু থেকেই অনুশীলনে দারুণ সিরিয়াস তিনি। মিরপুর শেরে বাংলা স্তেদিয়ামের একাডেমি মাঠেও সতীর্থদের আগে এসে অনুশীলন করেছেন। অভিজ্ঞ কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিমকে নিয়ে আলাদা করে কাজ করেছেন। সে ধারা চট্টগ্রামেও বজায় রাখলেন সাকিব।
বৃহস্পতিবার সাগরিকায় বরিশালের অনুশীলন ছিল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে। সাকিব মাঠে আসেন দুই ঘণ্টা আগে। মাঠে পৌঁছেই চলে যান সেন্ট্রাল উইকেটে। উইকেট দেখে তৃপ্ত এই তারকা সামনে থাকা কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবুর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। উইকেট সম্পর্কে জেনে নেন ভালোভাবেই।
প্রাথমিক পরামর্শটা কিউরেটর বাবুর কাছ থেকে নিয়ে মাঠের পূর্ব প্রান্তের অনুশীলন উইকেটে ব্যাটিং করতে চলে যান সাকিব। অনুশীলনে বাড়তি ঘামই ঝরাতে দেখা যায় তাকে। সচরাচর যেমনটা দেখা যায় না। থ্রোয়ার রমজান আলী ও সহকারী কোচ আশিকুর রহমানকে নিয়ে ব্যাটিং অনুশীলন শুরু করেন তিনি। শুরুর দিকে বারবারই পরাস্ত হন। এমনকি তাদের বাউন্সার লাগে হেলমেটেও। খুব বেশি গতি না থাকায় অবশ্য ঝুঁকির কিছু ঘটেনি।
সোজা ব্যাটে কিছুটা সাবলীল হলেও অফ সাইডের দিকে খেলতে গিয়ে বিভ্রান্ত হন সাকিব। পরে অবশ্য রমজানের থ্রোতে দারুণ এক কভার ড্রাইভ খেলতে পারেন। তাতে কিছুটা সন্তুষ্টি মেলে তার। আধা ঘণ্টার মতো এই ধারায় অনুশীলন করে বিরতিতে যান সাকিব। মাঠের এক পাশে শুয়ে বিশ্রাম নেন।
এরপর নতুন করে হয় শুরু। এবার যেন ভিন্ন সাকিব। এবার সেই দুই থ্রোয়ার তাকে পরাস্ত করতে পারেন খুব কমই। বড় শট খেলাতেই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। একেবারে ঠিকঠাক না হলেও মিড উইকেট, লং অন, লং অফের উপর দিয়ে দারুণ কিছু শট খেলেন। ততক্ষণে বেলা অনেক গড়িয়েছে। ধীরে ধীরে মাঠে ঢুকতে শুরু করেন তার সতীর্থরা।
ঘণ্টা দেড়েক ব্যাটিংয়ের পর মাঠের এক প্রান্তে দলের কোচ খালেদ মাহমুদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন সাকিব। এরপর পাশের চেয়ারে বসে ঘন্টাখানেক বিশ্রাম নেন। মুঠোফোনেও কিছুক্ষণ ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় তাকে। এরপর মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম খেলোয়াড়।
টি-টোয়েন্টিতে শেষ যে ফিফটি করেছিলেন সাকিব, সেটা ছিল এই চট্টগ্রামের মাঠেই। আর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্তেদিয়ামের মাঠ বরাবরই সহায়তা করে আসছে ব্যাটারদের। এই মাঠই হতে পারে সাকিবের ঘুরে দাঁড়ানোর আদর্শ মঞ্চ।
Comments