রনি-থিসারার ব্যাটে খুলনার রোমাঞ্চকর জয়
উইকেটের বিচারে লক্ষ্যটা ছিল বেশ বড়। ১৮৪ রানের। সে লক্ষ্যে জয়ের ভিতটা গড়ে দিলেন আন্দ্রে ফ্লেচার ও রনি তালুকদার। তবে মাঝে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরে ঢাকা। কিন্তু ছয়ে নেমে ঝড় তোলেন থিসারা পেরেরা। তার অসাধারণ ফিনিশিংয়ে পেরে উঠল না মিনিস্টার ঢাকা। দারুণ এক জয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) শুভ সূচনা করল খুলনা টাইগার্স।
শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মিনিস্টার ঢাকাকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে খুলনা টাইগার্স। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮৩ রান করে ঢাকা। জবাবে ৬ বল বাকি থাকতেই লক্ষ্যে পৌঁছায় খুলনা।
লক্ষ্য তাড়ায় অবশ্য খুলনার শুরুটা ভালো ছিল না। দলীয় ৮ রানেই ফিরে যান ওপেনার তানজিদ হাসান। আরেক ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচারকে নিয়ে দলের হাল ধরেন রনি তালুকদার। গড়েন ৭২ রানের জুটি। রনি কিছুটা দেখে শুনে ব্যাট করলেও আগ্রাসী ঢঙ্গে রানের গতি বাড়ানোর কাজটা করেন ফ্লেচার। রুবেল হোসেনের করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারে চারটি চার ও একটি ছক্কায় নেন ২২ রান।
রুবেলের দিনটি অবশ্য ভালো যায়নি। পরে ফিরে এসেও দুই ওভারে খরচ করেছেন ২০ রান। তবে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ফ্লেচারকে ফেরান স্বদেশী আন্দ্রে রাসেল। যদিও তার উপরও আগ্রাসী হচ্ছিলেন ফ্লেচার। রাসেলের প্রথম ওভারে দুটি ও পরের ওভারে একটি বাউন্ডারি মারেন। তবে শেষ পর্যন্ত সেই ওভারেই আউট উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ফ্লেচার।
খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি দেশ সেরা ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। ইবাদত হোসেনের বাউন্সারে আনাড়ির মতো ব্যাট চালিয়ে সহজ ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ শাহজাদের কাছে। এরপর ইয়াসির আলীকে নিয়ে দলের হাল ধরেন রনি। স্কোরবোর্ডে ৩৩ রান যোগ করে ইবাদতের বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ইয়াসির অবশ্য দেখে শুনে খেলছিলেন। তাকে ছাঁটাই করেন রাসেল। তাতে ম্যাচে ফেরে ঢাকা।
তখনও ৩২ বলে ৪৯ রান করতে হবে খুলনাকে। উইকেট ছিল ৫টি। তবে শেখ মেহেদী হাসানকে নিয়ে বাকি কাজ সহজেই শেষ করেন থিসারা। এক প্রান্তে ঝড় তোলেন এ লঙ্কান। মাত্র ১৮ বলে ৩৬ রানের ক্যামিও খেলেন থিসারা। এ রান করার পথে চার মেরেছেন ৬টি। তবে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬১ রানের ইনিংস খেলেন রনি। ৪২ বলে ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। ২৩ বলে ৪৫ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন ফ্লেচার। তিনিও মারেন ৭টি চার ও ১টি ছক্কা।
ঢাকার পক্ষে ২টি করে উইকেট পেয়েছেন রাসেল ও ইবাদত।
এদিন টসটা জিতেছিলেন খুলনার অধিনায়ক মুশফিক। ঢাকাকে ব্যাটিংয়ে পাঠান তিনি। তবে তার সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করে শুরু থেকেই দারুণ ব্যাটিং করতে থাকেন ঢাকার দুই ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ ও তামিম ইকবাল। গড়েন ৬৯ রানের দারুণ এক জুটি। এ জুটি লম্বা হতে পারতো আরও। কিছুটা খামখেয়ালীপনায় আউট হয়েছেন শাহজাদ। নির্ভারভাবে দৌড়ে রানআউট হন এ আফগান তারকা।
এরপর মোহাম্মদ নাঈম শেখকে নিয়ে দলের হাল ধরেন তামিম। ৪০ রানের আরও একটি জুটি গড়ে কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে সীমানায় ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফিরে আসেন এ ওপেনার। এরপর খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি নাঈম ও পাঁচে নামা রাসেল। থিসারা পেরেরা স্লোয়ার বুঝতে না পেরে অনেকটা আনাড়ির মতো ব্যাট চালিয়ে বোল্ড হয়ে যান নাঈম।
রাসেল অবশ্য আউট হয়েছেন কিছুটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে। বল শর্ট থার্ডম্যানে ঠেলে দিয়ে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রাসেল। দ্রুততার সঙ্গে ফিল্ডিং করে স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভাঙেন খুলনা টাইগার্সের শেখ মেহেদী হাসান। কিন্তু বল স্ট্রাইক প্রান্তের উইকেট ভেঙে দিক পাল্টে চলে যায় অপর প্রান্তে। ভাঙে নন স্ট্রাইক প্রান্তের উইকেটও। ঝুঁকি নেই ভেবে কিছুটা নির্ভারভাবেই ছুটছিলেন রাসেল। কিন্তু বল দেখে তড়িঘড়ি ব্যাট নামালেও উইকেট বাঁচাতে পারেননি এ ক্যারিবিয়ান।
তবে শেষ দিকে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে লড়াইয়ের বড় সংগ্রহই পেয়ে যায় ঢাকা। ২০ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন অধিনায়ক। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫০ রান করেন তামিম। ৪২ বলে ৭টি চারে এ রান করেন এ ওপেনার। ২৭ বলে ৮টি চারের সাহায্যে ৪২ রান করেন শাহজাদ।
খুলনার পক্ষে ৪ ওভারে ৪৫ রান খরচ করে ৩টি উইকেট পান রাব্বি।
Comments