মাহমুদউল্লাহ-রাসেলের ব্যাটে ঢাকার প্রথম জয়
কী ভয়ানক সূচনা! প্রথম তিন ওভার শেষ না হতেই শেষ প্রথম সারীর চার উইকেট। এরপর শুভাগত হোমকে নিয়ে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর লড়াই। পরে আন্দ্রে রাসেলের দুর্দান্ত ফিনিশিং। এ ক্যারিবিয়ানের দানব তো পরে ফরচুন বরিশালকে লড়াইটুকুও করতে দিলেন না। তাতে অসাধারণ এক জয় তুলে নিয়েছে মিনিস্টার ঢাকা। চলতি আসরে এটাই তাদের প্রথম জয়।
সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ম্যাচে ফরচুন বরিশালকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে মিনিস্টার ঢাকা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১২৯ রান করে বরিশাল। জবাবে ১৫ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় ঢাকা।
দিনের প্রথম ম্যাচ মানেই লো স্কোরিং ম্যাচ। বিপিএলে এখন পর্যন্ত এমনটাই দেখা গিয়েছে। সেখানে ১৩০ রানের লক্ষ্য ছিল বেশ বড়ই। তার উপর সেই পুঁজি নিয়ে শুরুতেই চার উইকেট তুলে নিয়ে রীতিমতো চোখ রাঙাচ্ছিল বরিশাল। জয় মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। সেখান থেকে কী দারুণ ভাবেই না ম্যাচের পরিস্থিতি বদলে দিল ঢাকা।
অথচ তারকা সমৃদ্ধ দল গড়ে আসরের প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে গেছে ঢাকা। এদিনও লক্ষণ ছিল তার পুনরাবৃত্তির। ওপেনিংয়ে নামা তামিম ইকবালকে বোল্ড করে ঢাকার শিবিরে প্রথম ধাক্কা দেন শফিকুল ইসলাম। পরের ওভারে আলজেরি জোসেফ দেন জোড়া ধাক্কা। মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও জহুরুল ইসলামকে ফেরান তিনি। পরের ওভারে ফিরে মোহাম্মদ শাহজাদকে বোল্ড করেন শফিকুল।
দ্রুত চার উইকেট হারানো দলটির ইনিংস মেরামতের কাজ শুভাগত হোমকে নিয়ে করতে শুরু করেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। অধিনায়ক দেখে শুনে খেললেও রানের গতি বাড়ানোর কাজটা চালান শুভাগত। পঞ্চম উইকেটে এ দুই ব্যাটার স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৬১ রান। এ জুটি ভাঙেন ডোয়াইন ব্রাভো। অবশ্য মিডঅনে দারুণ ক্যাচ লুফে নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম।
জোসেফের করা পরের ওভারে ফিরতে পারতেন আরেক সেট ব্যাটার মাহমুদউল্লাহও। মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন তিনি। ঝাঁপিয়ে চেষ্টা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তবে তালুবন্দি করতে পারেননি। উল্টো চার মিলে যায় তাদের। পরের বলে আরও একটি বাউন্ডারি মেরে পাল্টা আক্রমণ করেন ঢাকার অধিনায়ক।
আন্দ্রে রাসেল নেমেই আগ্রাসী ঢঙ্গে ব্যাট চালাতে থাকেন। মাহমুদউল্লাহও চালাচ্ছিলেন। তাতে শেষ দিকে রান হচ্ছিল দ্রুত। জয় থেকে মাত্র ১ রান দূরে থাকতে কভারে সহজ ক্যাচ তুলে দেন অধিনায়ক। তবে বাকি কাজটুকু শেষ করতে কোনো সমস্যা হয়নি রাসেলের।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৭ রানের ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহ। ৪৭ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। মাত্র ১৫ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩১ রান করে অপরাজিত থাকেন রাসেল। ২৫ বলে ২টি চারের সাহায্যে ২৯ রান আসে শুভাগতর ব্যাট থেকে।
বরিশালের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন শফিকুল ও জোসেফ।
আগের দুই ম্যাচেই ফিল্ডিং যাচ্ছেতাই ছিল ঢাকার। মিস ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে প্রচুর ক্যাচও মিস করেছিল দলটি। এদিনও শুরুটা ছিল এমনই। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে কভারে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন সৈকত আলী। অবিশ্বাস্যভাবেই তা ছেড়ে দেন তামিম ইকবাল। যদিও বড় ক্ষতি করার আগে সেই সৈকতকে পরের ওভারে ক্যাচ ধরে ফিরিয়েছেন তিনিই।
অবশ্য এর আগেই নাজমুল হোসেন শান্তকে ফিরিয়ে ২১ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙেন শুভাগত হোম। চার নম্বরে নামা তৌহিদ হৃদয়কে বোল্ড করেন দেন আন্দ্রে রাসেল। ফলে পাওয়ার প্লের আগে ৩টি উইকেট হারায় দলটি। তুলতে পারে ২৪ রান।
এরপর অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে নিয়ে দলের হাল ধরেন ক্যারিবিয়ান তারকা ক্রিস গেইল। সাধারণত ওপেনিংয়ে ব্যাট করলেও এদিন নামেন পাঁচ নম্বরে। ৩৭ রানের জুটিতে প্রাথমিক চাপ সামলে নিচ্ছিলেন তারা। তবে রুবেল হোসেনের এক্সট্রা বাউন্সারে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ তুলে দেন সাকিব।
এরপর স্কোরবোর্ডে আর ২ রান তুলতেই মাহমুদউল্লাহর বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন কোভিড থেকে ফিরে আসা নুরুল হাসান সোহান। সাত নম্বরে নামা ডোয়াইন ব্রাভো সঙ্গ দেন গেইলকে। ৩৩ রানের জুটি গড়ে ইসুরু উদানার বলে সীমানায় ক্যাচ তুলে দেন গেইল।
শেষ দিকে এক প্রান্তে দারুণ ব্যাটিং করে বরিশাল লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন ব্রাভো। ২৬ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি। এ রান করতে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন এ অলরাউন্ডার। তবে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৬ রান আসে গেইলের ব্যাট থেকে। ৩০ বলে ৩টি চার ২টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। এছাড়া সাকিব করেন ২৩ রান।
ঢাকার হয়ে কমবেশি উইকেট ভাগাভাগি করেছেন সব বোলারই। ২টি করে উইকেট নেন উদানা ও রাসেল।
Comments