ব্যাটে-বলে উজ্জ্বল মঈন, পথ কঠিন হলো খুলনার

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

বড় লক্ষ্য তাড়ায় দরকার ছিল জুতসই শুরু। নাহিদুল ইসলামের প্রথম ওভারে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে নিজেদের পরিকল্পনাটা পরিষ্কার করে দিলেন আন্দ্রে ফ্লেচার। প্রতিপক্ষের ওপর শুরু থেকেই চড়াও হতে চান তারা। কিন্তু সেটা কেবল আভাস হয়েই থাকল। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান পরের ওভারেই দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে নাড়িয়ে দিলেন খুলনা টাইগার্সকে। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে লড়াইও জমাতে পারল না মুশফিকুর রহিমের দল।

শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ৬৫ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতেছে কুমিল্লা। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ম্যাচসেরা মঈন আলী ও লিটন দাসের তাণ্ডবে তারা তোলে ৬ উইকেটে ১৮৮ রান। জবাবে ব্যাটিং ব্যর্থতায় খুলনা ৩ বল বাকি থাকতে গুটিয়ে যায় কেবল ১২৩ রানে। এই হারে বিপিএলের প্লে-অফে খেলার স্বপ্ন দুরূহ হয়ে গেল তাদের। আগামীকাল একই ভেন্যুতে বিকাল সাড়ে ৫টায় ফের মুখোমুখি হবে এই দুই দল।

৯ ম্যাচে খুলনার পয়েন্ট ৮। বিশাল হারে নেট রান রেটে পিছিয়ে তারা নেমে গেছে আসরের পয়েন্ট তালিকার পাঁচ নম্বরে। সমান ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে নেট রান রেটে তালিকার শীর্ষে উঠে গেছে ইমরুল কায়েসের কুমিল্লা। আগেই প্লে-অফে উঠেছিল তারা। ফরচুন বরিশালের পর এবার তারাও নিশ্চিত করল প্রথম পর্বের পয়েন্ট তালিকায় সেরা দুইয়ে থাকা।

চার নম্বরে নামা ইংলিশ অলরাউন্ডার মঈন মাত্র ৩৫ বলে খেলেন ৭৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। ৯টি ছক্কার সঙ্গে একটি চার মারেন এই ডানহাতি। ইনিংসের ১৯তম ওভারে বোলারের মাথার উপর দিয়ে মারা ওই চারের আগে ৮টি ছক্কা হাঁকান তিনি। পরে অফ স্পিনে ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান খরচ করে ২ উইকেট নেন তিনি।

জবাব দিতে নেমে প্রথম ওভারে ১৬ রান তোলার পর দ্বিতীয় ওভারেই বড় ধাক্কা খায় খুলনা। রনি তালুকদার বাজে শটে ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাক মেরে আউট হন। পরের বলে ফ্লেচারকেও এলবিডব্লিউ করে ফেরান মোস্তাফিজ, রিভিউ নিয়ে। ৭ বলে ১৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে। জোড়া আঘাতে রানের চাকা শ্লথ হয়ে যায় খুলনার।

তৃতীয় উইকেটে ৩৪ বলে ২৭ রানের জুটি গড়েন ইয়াসির আলী ও সৌম্য সরকার। দুজনই কুপোকাত হন মঈনের বলে। তাদের বিদায়ের মাঝে হতাশ করেন অধিনায়ক মুশফিক ও জিম্বাবুয়ের সিকন্দার রাজা। তাদের হন্তারক পেসার আবু হায়দার রনি। হাঁকাতে গিয়ে থার্ড ম্যানে সুনীল নারিনের হাতে ধরা পড়েন মুশফিক। ৪ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। রাজা ৮ বলে ৮ করে উইকেটের পেছনে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের গ্লাভসবন্দি হন।

একাদশ ওভারে ৬৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলা খুলনার পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো রোমাঞ্চকর গল্প লেখা সম্ভব হয়নি। শেষদিকে হারের ব্যবধান কমান থিসারা পেরার। আটে নেমে ২৩ বলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৬ রান করেন তিনি। এছাড়া, সৌম্য ২৫ বলে ২২ ও ইয়াসির ১৯ বলে ১৮ রান করেন। কুমিল্লার পক্ষে আবু হায়দার ৪ ওভারে ১ মেডেনসহ ৩ উইকেট নেন ১৯ রানে। মোস্তাফিজ ও নাহিদুলের ঝুলিতে যায় ২টি করে উইকেট।

এর আগে কুমিল্লার ইনিংসের ১৩তম ওভারে শুরু হয় মঈনের আগ্রাসনের। প্রথম ৮ বলে ৪ রান করা এই তারকা অফ স্পিনার শেখ মেহেদীকে টানা দুই ছক্কা মারেন যথাক্রমে ডিপ মিড উইকেট ও লং অন দিয়ে। ওভারের শেষ বলটি আবার ডিপ মিড উইকেট দিয়ে সীমানার বাইরে ফেলেন তিনি। সৌম্য, থিসারা ও সৈয়দ খালেদ আহমেদের পরের ওভারগুলোতে আসে একটি করে ছক্কা।

সৌম্যের করা ১৭তম ওভারে ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন মঈন। প্রথম বলটি ফাইন লেগ দিয়ে সীমানাছাড়া করেন তিনি। হাফসেঞ্চুরি পূরণ করতে তার লাগে মোটে ২৩ বল। ঠিক পরের বলেই ফের ছয়! তার টর্নেডো ইনিংস থামান শ্রীলঙ্কান পেস অলরাউন্ডার থিসারা। ফুল টসে ঠিকঠাক টাইমিং করতে না পেরে লং অফে মঈন ধরা পড়েন ফ্লেচারের হাতে। ততক্ষণে মুশফিকের খুলনার বিপক্ষে বড় সংগ্রহ পাওয়া নিশ্চিত হয়ে যায় কুমিল্লার।

বিপিএলের চলতি আসরে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছয় মারার কীর্তি এখন মঈনের। তার ধারেকাছে নেই আর কেউ। এর আগে ৫টি করে ছয় মেরেছিলেন তিন ক্রিকেটার। তারা হলেন সিলেট সানরাইজার্সের লেন্ডল সিমন্স, খুলনার ফ্লেচার ও কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।

মঈনের আগে ওপেনার লিটনও ছিলেন মারমুখী মেজাজে। দলকে দুরন্ত শুরু এনে দেওয়ার কৃতিত্ব তার। ২৪১.১৭ স্ট্রাইক রেটে ১৭ বলে ৪১ রান করেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল ৪টি চার, ৩টি ছয়। তার নৈপুণ্যে বাঁহাতি স্পিনার নাবিল সামাদের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে কুমিল্লা তোলে ১৬ রান, খালেদের করা তৃতীয় ওভারে ১৯ রান।

ব্যক্তিগত ২১ রানে অবশ্য জীবন পান লিটন। খালেদের বলে তার ক্যাচ ফেলেন উইকেটরক্ষক মুশফিক। পরে মুশফিকই বল গ্লাভসবন্দি করে ফেরান লিটনকে। থিসারার ডেলিভারিতে আলগা শটে শেষ হয় তার ইনিংস।

পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৫২ রান তোলা কুমিল্লা শতরান পেরোয় ১৩তম ওভারে। শেষ ৫ ওভারে তারা যোগ করে ৬৭ রান। মঈন ও লিটন ছাড়া রান পান দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজ্ঞ ব্যাটার ফাফ ডু প্লেসি। ৩৬ বলে ৩৮ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

খুলনার হয়ে ৩ ওভারে ২৮ রানে ২ উইকেট নেন থিসারা। পরে আঁটসাঁট বোলিংয়ে নাবিল ৪ ওভারে ২৪ রানে পান ১ উইকেট। তবে খরুচে ছিলেন বাকিরা। শেখ মেহেদী ৪ ওভারে ৪০ রান, খালেদ ৪ ওভারে ৩৭ ও সৌম্য ২ ওভারে ৩১ রান দেন।

Comments

The Daily Star  | English

Grim discovery: Five bodies found on vessel in Meghna, 2 more die later

The incident had occurred on the Meghna river under Chandpur Sadar upazila in an area adjacent to Shariatpur

2h ago