নাহিদুলের ঘূর্ণিতে লড়াইও করতে পারল না সাকিবের বরিশাল
দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে দেড়শ ছাড়ানো ইনিংস হচ্ছে অনায়াসেই। দুইশর কাছাকাছি হয়েছে একাধিক ম্যাচে। সেখানে ১৫৮ রানের পুঁজি নিয়ে লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল দারুণ সূচনা। আর সেই সূচনাটা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে এনে দিলেন নাহিদুল ইসলাম। বিপিএলের কিপ্টে বোলিংয়ের রেকর্ড গড়ে টপ অর্ডার ধসিয়ে দিলেন ফরচুন বরিশালের। তাতে সহজ জয়ই পেল দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফরচুন বরিশালকে ৬৩ রানে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৮ রান করে তারা। জবাবে ১৫ বল বাকি থাকতে ৯৫ রানে গুটিয়ে যায় বরিশাল।
অথচ বিপিএলের শুরু হওয়ার আগে সবচেয়ে বেশি আলোচনা বেশি ছিল এ দুই দল নিয়েই। দুই দলের কোচ নিয়েও আলোচনা কম হয়নি। অনেকটা সেয়ানে সেয়ানে লড়াই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে লড়াইটা হলো এক পেশে। টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিল কুমিল্লা।
এদিন নাজমুল হোসেন শান্তকে ছাড়া বরিশালের আর কোনো ব্যাটারই দায়িত্ব নিতে পারেননি। সেই শান্ত ফিরতে পারতেন খালি হাতে। শর্ট থার্ডম্যানে তার সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন ক্যামেরুন ডেলপোর্ট। ফিরতে পারতেন ব্যক্তিগত ২২ রানেও। এবার কভারে তার ক্যাচ ছাড়েন নাহিদুল। দুই ক্ষেত্রেই অভাগা বোলারের নাম মোস্তাফিজুর রহমান। অবশ্য বরিশালের শেষ ব্যাটার হিসেবে শান্তকে শেষ পর্যন্ত তুলে নেন কাটার মাস্টারই।
লক্ষ্য তাড়ায় এদিন নাহিদুলের ঘূর্ণিতে পড়ে স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ না করতেই আউট সৈকত আলী। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ফিরলেন দলীয় ৭ রানে। ফলে শুরুতেই বড় চাপে পড়ে বরিশাল। সেখান থেকে তরুণ তৌহিদ হৃদয়কে নিয়ে দলকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ২৭ রানের জুটি গড়ে চেষ্টাও চালান। কিন্তু করিম জানাতের অসাধারণ এক বলে বোল্ড হয়ে যান হৃদয়। ফের চাপে পড়ে যায় বরিশাল।
দলের সবচেয়ে বড় আশা হয়ে ছিলেন ক্যারিবিয়ান তারকা ক্রিস গেইল। কিন্তু নাহিদুলের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে পড়েছেন স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে। উইকেটে কিছুটা সেট হয়েছিলেন নুরুল হাসান সোহান। ১৭ রানের ইনিংস খেলে ভালো কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু লংঅনে ক্যাচ তুলে ফিরেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
হতাশ করেন ডোয়াইন ব্রাভোও। খালি হাতেই ফিরেন তিনি। রানের খাতা খুলতে পারেননি জিয়াউর রহমানও। জ্যাক লিন্টট অবশ্য কিছুটা অভাগা বলতে পারেন নিজেকে। সীমানায় দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরেছেন ফাফ দু প্লেসি। ফলে বড় হারই মানতে হয় বরিশালকে।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন শান্ত। ৪৭ বলে ২টি চারের সাহায্যে এ রান করেন তিনি। এছাড়া হৃদয় ১৯ ও সোহান ১৭ রান করেন। বরিশালের এই তিন ব্যাটারই দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পেরেছেন। চার জন আউট হয়েছেন কোনো রান না করেই।
বরিশালের হয়ে ৪ ওভার বল করে মাত্র ৫ রান খরচ করে পান ৩টি উইকেট। যা বিপিএলে সবচেয়ে কিপ্টে বোলিংয়ের রেকর্ড। এর আগে ২০১৫ সালে সিলেট সুপার স্টার্সের হয়ে বরিশাল বুলসের বিপক্ষে ৫ রানে ২টি উইকেট নিয়েছিলেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি। এছাড়া ২টি করে উইকেট নিয়েছেন শহিদুল ইসলাম, তানভির ইসলাম ও করিম জানাত।
বিপিএলে এবার প্রথম ম্যাচে যেমন তেমন, দ্বিতীয় ম্যাচে রান হচ্ছে নিয়মিতই। তবে আগের তিন দিনের তুলনায় এদিন লক্ষ্যটা খুব বড় দিতে পারেনি কুমিল্লা। দলের অন্যতম ভরসা দুই প্রোটিয়া তারকা জ্বলে উঠতে পারেননি। ফাফ দু প্লেসি (৫) আজও ব্যর্থ। ক্যামেরুন ডেলপোর্ট অবশ্য ভালো শুরু করেছিলেন। কিন্তু এদিনও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ফিরেছেন ব্যক্তিগত ১৯ রানে।
ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটিটা আসে বাংলাদেশের দুই টেস্ট ট্যাগের ব্যাটার মুমিনুল হক ও মাহমুদুল হাসান জয়ের কাছ থেকে। চতুর্থ উইকেটে ৪৪ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটার। আর শেষ দিকে দারুণ এক ক্যামিও খেলেন আফগান তারকা করিম জানাত। তাতেই লড়াইয়ের পুঁজি মেলে কুমিল্লার।
অথচ টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা কুমিল্লার শুরুটা ছিল ভালোই। ডেলপোর্টকে নিয়ে ওপেনিং জুটিতে ৩৩ রান করেন জয়। এক প্রান্তে দারুণ ব্যাটিং করে হাফসেঞ্চুরির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন এ তরুণ। কিন্তু চায়নাম্যান জ্যাক লিন্টটের বলে শর্ট থার্ডম্যানে ক্রিস গেইলের হাতে তুলে দেন সহজ ক্যাচ। ৩৫ বলে ৪৮ রান করেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও ১টি ছক্কা।
ছয় নম্বরে নামা জানাত ১৬ বলে ২৯ রানের ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন। ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান এ আফগানী। ১৭ রান করেন মুমিনুল। এক জীবন পেয়েও ১৫ রান করেছেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।
৪ ওভার বলে করে ৩০ রানের খরচায় ৪টি উইকেট নিয়েছেন ডোয়াইন ব্রাভো। ৪ ওভারে ২৫ রানের বিনিময়ে ২টি উইকেট পান সাকিব।
Comments