চট্টগ্রামের বিশাল রানের জবাব দিতে পারল না মুশফিকের দল
দুইশোর কাছাকাছি পুঁজি, তবু দলের কারোরই নেই ফিফটি। এটাই জানান দিচ্ছে কতটা সম্মিলিত প্রয়াসে ছুটেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। চট্টগ্রামের আগ্রাসী ক্রিকেটের জবাবে ঠিক দল হয়ে জ্বলে উঠা হলো না খুলনা টাইগার্সের। রেজাউর রহমান রাজার বাউন্সারে ঘাড়ে চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে আভাস দিয়েছিলেন আন্দ্রে ফ্লেচার, তার বদলি নেমে সিকান্দার রাজার ঝড় হয়নি বড়, ইয়াসির আলি রাব্বি দেখিয়েছিলেন ঝাঁজ। কিন্তু অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের আরেকটি মলিন দিনে ইয়াসিরের একার পক্ষে হিসাব মেলানো হয়নি। দারুণ বোলিংয়ে পেসার রাজা কেড়েছেন আলো।
সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খুলনা টাইগার্সকে ২৫ রানে হারিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। আগে ব্যাট করে বেশ কয়েকজনের অবদানে ১৯০ রান করে চট্টগ্রাম। জবাবে মাঝপথে খেই হারিয়ে খুলনা করতে পারে ১৬৫ রান।
চট্টগ্রামের পাহাড়ে চড়ায় কেনার লুইসের ১৪ বলে ২৫, উইল জ্যাকসের ৭ বলে ১৭, মেহেদী হাসান মিরাজের ২৩ বলে ৩০, বেনি হাওয়েলের ২০ বলে ৩৪, নাঈম ইসলামের ৫ বলে ১৫ রানের বড় ভূমিকা ছিল। মাঝে সাব্বির রহমান ৩৩ বলে ৩২ রানের ইনিংসটা গতিময় হলে চট্টগ্রাম ছাড়াত দুশো।
বল হাতে ২০ রানে দলের সবচেয়ে সফল পেসার রাজা। আগের ম্যাচে হিরো নাসুম আহমেদও খারাপ করেননি। ৩০ রান দিয়ে পেয়েছেন ১ উইকেট। ২৯ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম।
বিশাল রান তাড়ায় নেমে প্রথম দুই ওভারে এসেছিল জুতসই রান। এরপরই তাল হারায় খুলনা। দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। এরমধ্যে ফিরে যান আগের ম্যাচে হিরো রনি তালুকদারও।
হাল ধরে রাখছিলেন ফ্লেচার। পাওয়ার প্লেতে আসে ৪৫ রান। তবে রাজার আচমকা বাউন্সারে থিতু অবস্থায় হকচকিয়ে যান তিনি, ঘাড়ে বল লেগে লুটিয়ে পড়েন মাঠে। ফ্লেচার মাঠ ছাড়লে বদলে যায় ছবিও। মন্থর হতে থাকে রানের চাকা। শেখ মেহেদি হাসান-মুশফিকুর রহিম মিলে নিয়ে নেন বাড়তি সময়।
খোলস ছেড়ে বেরিয়ে রান বাড়ানোর তাড়ায় ২৪ বলে ৩০ করে থামেন মেহেদী। শরিফুলের বলে উইকেটের পেছনে লাফিয়ে অসাধারণ এক ক্যাচ জমান কেনার লুইস। থিতু হতে অনেকটা সময় নিয়েও পারেননি মুশফিক। ১৪ বলে ১১ করে থামে তার দৌড়। হাওয়েলের বলে কাট করে শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন খুলনার অধিনায়ক।
ফ্লেচার আর মাঠে ফিরতে না পারায় কনকাশন বদলি নামেন সিকান্দার। জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডার নেমেই তুলেছিলেন ঝড়। কিন্তু ২ ছক্কা ১ চারে তার ১২ বলে ২২ রানের ঝড়ও থামিয়ে দেন রাজা। ইয়াসিরের সঙ্গে যোগ দিয়ে এদিন আর বিস্ফোরক হওয়া হয়নি থিসারা পেরেরার।
আস্কিং রান রেট পাহাড়সম হয়ে গেলে ইয়াসিরের একার পক্ষে কাজটা হয়ে যায় অসম্ভব। ১৯তম ওভারে ২৬ বলে ৪০ করে থামেন তিনিও। ম্যাচের উত্তেজনা তখন আর কিছু ছিল না।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে গিয়ে সোহরাওয়ার্দি শুভকে পিটিয়ে প্রথম ওভারেই ২৩ রান নিয়ে নেন জ্যাকস-লুইস। দুই ওপেনার ইনিংস লম্বা না করলেও উড়ন্ত শুরু ধরে পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে আসে ২ উইকেটে ৬৪। দুইশো ছাড়ানোর আভাস তখন স্পষ্ট।
তবে তা মিইয়ে যায় সাব্বিরের মাঝের ওভারের মন্থর গতিতে। তিনে নামা আফিফ হোসেন হন এদিনও ব্যর্থ। ১৩ বলে ১৫ রান করে সাব্বিরের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে তিনি রান আউটে কাটা। সাব্বির পুষিয়ে দিতে পারেননি। একের পর এক ডট বলে বাড়িয়েছেন চাপ। পাঁচে নেমে অধিনায়ক মিরাজও থিতু হতে নেন সময়। জুটি এলেও দুজনই পান জীবন।
শেষ পর্যন্ত সাব্বির-মিরাজের ইনিংস থামে ত্রিশের ঘরে। মাঝের মন্থরতা এদিনও অনেকটা পুষিয়ে দেন বেনি হাওয়েল। আরও একবার তাকে পাওয়া যায় আগ্রাসী মেজাজে। ১৭০ স্ট্রাকরেটে ২০ বলে ৩৪ করেছেন তিনি।
আট নম্বরে সুযোগ পেয়ে অভিজ্ঞ নাঈম ইসলামও তুলেন ঝড়। মাত্র ৫ বলে তার ১৫ রানের ইনিংস দলকে নিয়ে যায় দুশোর কিনারে। ওই পুঁজি নিয়ে টুর্নামেন্টে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে আপাতত পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে চট্টগ্রাম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৯০/৭ ( লুইস ২৫, জ্যাকস ১৭, আফিফ ১৫, সাব্বির ৩২, মিরাজ ৩০, হাওয়েল ৩৪*, শামীম ৯, নাঈম ১৫ ; শভ ০/২৩, কামরুল ২/৩৫, নাবীন ১/৪৮, শেখ মেহেদী ০/২৩, থিসারা ০/২৫, রেজা ১/৩৫)
খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ১৬৫/৯ (তানজিদ ৯, ফ্লেচার ১৬* (আহত অবসর), রনি ৭, মেহেদী ৩০, মুশফিক ১১, ইয়াসির ৪০, সিকান্দার (কনকাশন সাব) ২২, থিসারা ০, রেজা ৬, শুভ ১, কামরুল ১৪*, নাবীন ১* ; নাসুম ১/৩০, শরিফুল ২/২৯, মিরাজ ২/৪২, রাজা ২/২০, হাওয়েল ১/৩৭)
ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ২৫ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: বেনি হাওয়েল।
Comments