ইমরুল-লিটনের ফিফটিতে চট্টগ্রামকে গুঁড়িয়ে দিল কুমিল্লা
উইল জ্যাকসের ঝড় থামিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান ৫ উইকেট নেওয়ায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স পেল মাঝারি লক্ষ্য। পরে অধিনায়ক ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস মিলে আগ্রাসী উদ্বোধনী জুটিতে শতরান এনে একদম সহজ করে দিলেন সমীকরণ। দুজনের ফিফটিতে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে বিপিএলের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠল কুমিল্লা।
বৃহস্পতিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে আচমকা বৃষ্টিতে ১৮ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৯ উইকেটে জিতেছে কুমিল্লা। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরুর পরও ৮ উইকেটে ১৩৮ রান করতে পারে চট্টগ্রাম। এরপর ডিএলএস পদ্ধতিতে কুমিল্লার লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৪৪ রান। ইমরুল ও লিটনের ব্যাটে চড়ে ১ উইকেট হারিয়ে ১৪৮ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে তারা। তখনও বাকি ছিল ম্যাচের ৯ বল।
সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বিস্ফোরক ইনিংসে ইমরুল অপরাজিত থাকেন ৬২ বলে ৮১ রানে। আসরে প্রথমবার ওপেনিংয়ে নামা এই বাঁহাতির ব্যাট থেকে আসে ৬টি চার ও ৫টি ছক্কা। ডানহাতি লিটন আউট হওয়ার আগে খেলেন ৩৭ বলে ৫৩ রানের মারমুখী ইনিংস। তিনি মারেন ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা। তারা উদ্বোধনী জুটিতে ৯৭ বলে আনেন ১৩৮ রান। ইমরুল ঝড় তোলায় তিনে নামা ফাফ ডু প্লেসিকে মোকাবিলা করতে হয়নি কোনো বল।
বৃষ্টির পর ফের খেলা শুরু হলে চট্টগ্রামকে কাঁপিয়ে দিয়ে ম্যাচসেরা হওয়া মোস্তাফিজ ৪ ওভারে ২৭ রানে নেন ৫ উইকেট। বিপিএলে এটাই তার ৫ উইকেট পাওয়ার প্রথম নজির।
পাঁচ ম্যাচে কুমিল্লার এটি চতুর্থ জয়। তাদের পয়েন্ট ৮। রান রেটে এগিয়ে থাকায় তারা দুইয়ে ঠেলে দিয়েছে ফরচুন বরিশালকে। টানা তিন জয়ের পর আগের ম্যাচে মিনিস্টার ঢাকার কাছে হেরেছিল তারা। অন্যদিকে, আট ম্যাচে চট্টগ্রামের এটি পঞ্চম হার। তাদের পয়েন্ট ৬। এই নিয়ে টানা তিনে ম্যাচে হারল দলটি।
জবাব দিতে নেমে কুমিল্লাকে ভালো শুরু এনে দেন ইমরুল ও লিটন। সময় নিয়ে উইকেটে মানিয়ে নেওয়ার পর দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী হন তারা। বাহারি সব শটের পসরা সাজিয়ে বসেন দুজনে। পাওয়ার প্লেতে ৫ ওভারে তারা তোলেন ৪১ রান।
শুরুতে ইমরুল ছিলেন কিছুটা নড়বড়ে। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামের বিপক্ষে বেশ পরীক্ষা দিতে হয় তাকে। তবে ভাগ্য এদিন ছিল তার সঙ্গে। দুই দফা বেঁচে যান ইমরুল। প্রথমবার ষষ্ঠ ওভারে। তখন ২৩ রান খেলছিলেন তিনি। অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের বলে তার বিপক্ষে এলবিডব্লিউয়ের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আম্পায়ার। সন্তুষ্ট হতে না পেরে রিভিউ নেন ইমরুল। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল আগে লেগেছিল গ্লাভসে। তাই বেঁচে যান তিনি।
বেনি হাওয়েলের করা একাদশ ওভারে আবার জীবন পান ইমরুল। ৪৪ রানে থাকা অবস্থায় সুইপ করেছিলেন তিনি। শর্ট ফাইন লেগে ডাইভ দিয়েও ক্যাচ হাতে জমাতে ব্যর্থ হন শরিফুল। উল্টো ব্যথা পেয়ে সেবা-শুশ্রূষা নিতে হয় তাকে।
১২তম ওভারে মিরাজকে ছক্কা মেরে ফিফটি পূরণ করেন ইমরুল, ৪২ বলে। ১৫তম ওভারে একই কায়দায় হাফসেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেলেন লিটন। তার লাগে ৩৫ বল। তিনি ছক্কা হাঁকান বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে। শুরুতে লিটন ছিলেন ধীরস্থির। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হাত খোলেন তিনি। ম্যাচ যখন কুমিল্লার মুঠোয়, তখন তাকে ফেরান বাঁহাতি পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। কিন্তু ইমরুলকে থামানো যায়নি।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শুরুতেই ধাক্কা খায় চট্টগ্রাম। তৃতীয় বলে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার চ্যাডউইক ওয়ালটন। নাহিদুল ইসলামকে মিড অফের ওপর দিয়ে ওড়াতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেলেন এই ক্যারিবিয়ান। সহজ ক্যাচ অনায়াসে লুফে নেন ইমরুল। তখনও স্কোরবোর্ডে ওঠেনি কোনো রান।
উইকেট হারানোর আঘাত সামলে রানের চাকায় দম দেন আরেক ওপেনার জ্যাকস ও আফিফ। ঝুঁকি ছাড়াই রান বাড়াতে থাকেন তারা। দুজনই রানের খাতা খোলেন চার মেরে। পাওয়ার প্লের প্রতি ওভারেই আসতে থাকে বাউন্ডারি। ষষ্ঠ ওভারে স্পিন সরিয়ে প্রথমবারের মতো আক্রমণে পেস আনে কুমিল্লা। কিন্তু মোস্তাফিজ আঁটসাঁট বোলিংয়ের বদলে উল্টো দেন ১৪ রান। তার শেষ দুই ডেলিভারিতে চার ও ছক্কা মেরে দলের সংগ্রহ পঞ্চাশ ছাড়িয়ে নেন জ্যাকস।
অষ্টম ওভারে ফিরেই কুমিল্লাকে ব্রেক থ্রু এনে দেন তানভীর। তার নিচু হয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে বোল্ড হন আফিফ। আরও একবার থিতু হয়ে ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন তিনি। তার বিদায়ে ভাঙে ৪০ বলে ৬২ রানের জুটি। আফিফের ব্যাট থেকে ৪টি চারে আসে ২১ বলে ২৭ রান।
প্রতিপক্ষকে চেপে ধরার সুযোগ না দিয়ে শামীমকে নিয়ে আরেকটি জুটি জমান ইংলিশ ব্যাটার জ্যাকস। দ্বাদশ ওভারে তাদের সংগ্রহ পেরিয়ে যায় শতরান। এর আগেই ফিফটি স্পর্শ করেন জ্যাকস, ৩১ বলে। চলতি বিপিএলে এটি তার তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি।
চট্টগ্রামের ইনিংসের ১২.৫ ওভারের পর আচমকা নামে মুষলধারে বৃষ্টি। তখন তাদের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ১০৭ রান। বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ থাকে এক ঘণ্টা চার মিনিট। সময় নষ্ট হওয়ায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে যায়। কিন্তু ফের ব্যাট-বলের লড়াই শুরু হলে খেই হারায় দলটি। মোস্তাফিজের তোপে পড়ে কাঙ্ক্ষিত পুঁজি পায়নি তারা।
চতুর্দশ ওভারে আক্রমণে ফিরে দুই সেট ব্যাটার জ্যাকস ও শামীমকে সাজঘরে পাঠান মোস্তাফিজ। পয়েন্টের ওপর দিয়ে হাঁকাতে গিয়ে নাহিদুলের তালুবন্দি হন শামীম। ৪টি চারে ২২ বলে ২৬ রান করেন তিনি। তাতে ভাঙে ৩৮ বলে ৪৭ রানের জুটি। দুই বল পর লং অনে ডু প্লেসির হাতে ক্যাচ দেন জ্যাকস। তিনি ৩৭ বলে করেন ৫৭ রান। তার ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ৩টি ছক্কা।
নিজের পরের ওভারে চট্টগ্রামের অধিনায়ক নাঈম ইসলাম ও হাওয়েলকে বিদায় করেন মোস্তাফিজ। আর ইনিংসের শেষ ওভারে মিরাজকে মিড অফে ইমরুলের ক্যাচ বানিয়ে ৫ উইকেট পূরণ করেন কাটার মাস্টার খ্যাত এই তারকা। তার কল্যাণে লক্ষ্য নাগালে থাকার পর বাকি কাজটা সারেন ইমরুল ও লিটন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৮ ওভারে ১৩৮/৮ (ওয়ালটন ০, জ্যাকস ৫৭, আফিফ ২৭, শামীম ২৬, হাওয়েল ৩, নাঈম ৩, মিরাজ ৪, আকবর ১২*, মৃত্যুঞ্জয় ১; নাহিদুল ১/২১, তানভীর ১/২১, নারিন ০/৩২, মোস্তাফিজুর ৫/২৭, মঈন ০/২৭, সুমন ০/৭)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: (লক্ষ্য ১৪৪) ১৬.৩ ওভারে ১৪৮/১ (ইমরুল ৮১*, লিটন ৫৩; ডু প্লেসি ০*; নাসুম ০/২৬, শরিফুল ০/২৬, মিরাজ ০/৩১, হাওয়েল ০/২৯, আফিফ ০/১০, মৃত্যুঞ্জয় ১/২১)
ফল: কুমিল্লা ৯ উইকেটে জয়ী।
Comments