অনুশীলনে প্রাণবন্ত এক সাকিবের 'মিডিয়াম পেস বোলিং'
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উত্তর দিকের নেটে বল করছিলেন সাকিব আল হাসান। ব্যাট করছিলেন আফিফ হোসেন। সাকিবের বল আফিফের ব্যাট ছুঁয়ে চলে গেল পেছনে। তরুণ এই বাঁহাতি ব্যাটার সেদিকে তাকিয়ে জোরে বললেন, 'এক রান।'
বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেরা বিজ্ঞাপন সাকিব অবশ্য জানান অসম্মতি। তিনি পাল্টা জবাব দিলেন, 'কীসের এক? আমি তিন স্লিপ রেখে বোলিং করছি। এটা আউট।'
তিন স্লিপ কেন? সাকিব তো স্পিনার। চমক এখানেই! আফিফের বিপক্ষে বল করাতে তেমন কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। তখন সাকিব ছিলেন সেখানেই দাঁড়িয়ে। ডমিঙ্গোর কথায় তিনি যান আফিফকে বল করতে। তবে স্পিন নয়, বাঁহাতি সাকিব করেন মিডিয়াম পেস! ঠিক পেসারদের মতো করে বলের সিম ধরছিলেন তিনি। এভাবে চালিয়ে যান কয়েক ওভার। তার বোলিংয়ে পরাস্তও হন আফিফ।
চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে নামার আগের দিন মঙ্গলবার অনুশীলনে পাওয়া যায় প্রাণবন্ত, উচ্ছল এক সাকিবকে। সঙ্গত কারণেই তার দিকে নজর থাকে মাঠে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের। এদিন তার সরব উপস্থিতি যেন আরও আকর্ষণ করছিল সবাইকে। তিনি হয়ে উঠেছিলেন আসরের মধ্যমণি।
সকালে সবার আগে অনুশীলনে ঢোকেন সাকিব। সবশেষ বিপিএল থেকেই তিনি চর্চা করছেন এই অভ্যাসের। ঢুকেই নেটে নেমে পড়েন ব্যাটিংয়ে। তার দিকে নজর ছিল দলের নতুন ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সের। আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়ে সোমবার রাতে যোগ দিয়ে এদিন কাজে নেমে পড়েন এই অস্ট্রেলিয়ান। টাইগারদের সাবেক প্রধান কোচের বাংলাদেশে দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথম দিন ছিল এটি।
ব্যাটিং অনুশীলনের পর সাকিব করেন বোলিং অনুশীলন। নেটে আফিফের পাশাপাশি তিনি বল করেন মাহমুদউল্লাহর বিপক্ষেও। তবে মিডিয়াম পেস নয়, স্পিন। সাকিবের একটি বল মিড অনের দিকে ঠেলে দিয়ে মাহমুদউল্লাহ দৌড় দেওয়ার ভঙ্গি করে চিৎকার করে ওঠেন, 'সিঙ্গেল!'
মাহমুদউল্লাহ হয়তো সাকিবকেই নন-স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা ব্যাটার ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের বলে রান বের হয়ে যাওয়া কি মানতে পারেন কোনো বোলার? না, পারেন না। সাকিব তাই যেন অসম্মতি জানিয়ে বলে ওঠেন, 'না, এখানে কোনো রান হয় না।'
এরপর সাকিবকে দীর্ঘ সময় ধরে মাঠের সবুজ ঘাসে বসে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে কথা বলেন। সেই আলাপে তাদেরকে দেখা যায় খোশ মেজাজে। যেন বহুদিন পর দুই বন্ধুর দেখা হয়েছে। গল্প শেষই হচ্ছে না! এর আগে প্রধান কোচ ডমিঙ্গোর সঙ্গেও মত বিনিময় করতে দেখা যায় সাকিবকে।
অনুশীলনে যেমন মাতিয়ে রাখলেন সাকিব, মূল ম্যাচেও অবধারিতভাবে তেমন সাকিবকে চাইবে বাংলাদেশ দল। ব্যাটে-বলে তার সাম্প্রতিক দুরন্ত ফর্মও ইঙ্গিত দিচ্ছে ভালো কিছুর। সবশেষ বিপিএলে তিনি ২৮৪ রান করার পাশাপাশি নেন ১৬ উইকেট। এমন উজ্জ্বল পারফরম্যান্সে আরও একবার আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন তিনি।
সংস্করণ ভিন্ন দাবি করে প্রশ্ন তুলতে পারেন কেউ কেউ। তবে পেছনে ঘুরে তাকালে দেখা যায়, গত জুলাইতে বাংলাদেশের সবশেষ ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়ে সফরেও সেরা খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে খেলেছিলেন অপরাজিত ৯৬ রানের ইনিংস। তিন ম্যাচে নিয়েছিলেন মোট ৮ উইকেট।
Comments