পরিকল্পনার ছাপ নেই সিলেটের দলে

বিপিএলে সিলেটের ফ্র্যাঞ্জাইজির অংশগ্রহণ নিয়মিত না, কিন্তু অংশ নিলে প্রশ্নবিদ্ধ দলগঠন নিয়মিত ঘটনা। ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা বদলায় কিন্তু বদলায় না সিলেটের ভাগ্য। এবারও হয়নি ব্যতিক্রম।

প্রগতি গ্রিন অটো রাইস মিলস লিমিটেড নামক এক কোম্পানিকে এবার দেওয়া হয় সিলেটের ফ্র্যাঞ্চাইজি। তারা দলটির নাম দিয়েছে সিলেট সানরাইজার্স। ড্রাফটের আগে দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে দলটি নিয়েছে তাসকিন আহমেদকে। ছন্দে থাকা এই পেসার অবশ্য তাদের ভালো পছন্দ।

বিদেশিদের মধ্যে ড্রাফটের বাইরে তারা দলে নেয় শ্রীলঙ্কার দীনেশ চান্দিমাল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেসরিক উইলিয়ামস ও দক্ষিণ আফ্রিকার কলিন ইনগ্রামকে। বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলে বেড়ানোর কেসরিক জুতসই ক্রিকেটার। ইনগ্রাম বেশ ভালো পছন্দ। তবে বাংলাদেশের মন্থর উইকেটে তিনি কেমন করবে তা নিয়ে আছে সংশয়।

চান্দিমালকে বেছে নেওয়া বেশ বিস্ময়ের। শ্রীলঙ্কান এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টিতে খুব একটা আদর্শ নন। থিতু হতে তার লাগে সময়। ড্রাফট থেকে তারা নিয়েছে ইংলিশ অলরাউন্ডার রবি বোপারাকে। বাংলাদেশে অনেক খেলার অভিজ্ঞতা আছে বোপারার। বিপিএলে তিনি নিয়মিত মুখ। মন্থর উইকেটে বেশ কার্যকর ক্রিকেটারও। তবে বোপারা তার সেরা সময়টা পেছনে ফেলে এসেছেন। এছাড়া বাকি দুজন বেশ আনকোরা। শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো পেরেরা আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের সিরাজ আহমেদ দল পেয়েছেন চমক হিসেবে। বাঁহাতি পেসার সিরাজ আবুধাবি টি-১০ লিগে খেলেছেন। তবে আহামরি কিছুই করতে পারেননি তিনি।

এবার বিপিএলে একাদশে বিদেশি খেলানো যাবে মাত্র তিনজন। কাজেই শক্তিশালী দলের জন্য চাই স্থানীয় ভালো ক্রিকেটারদের উপস্থিতি। এই জায়গায় বড় ঘাটতি সিলেটের।

তাসকিন ছাড়া বর্তমান জাতীয় দলের আর কেউই নেই তাদের। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার অলক কাপাপি। তবে সেরা সময় পেরিয়ে এসেছেন তিনি। যদিও ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলোতে লেগ স্পিন বোলিং, আর শেষের ব্যাটিং দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটের আরেক অভিজ্ঞ নাদিফ চৌধুরী অনেক আগে থেকেই চলছেন বেলা শেষের পথে। এরপরেই থাকবেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মোহাম্মদ মিঠুন, এনামুল হক বিজয়, আল-আমিন হোসেনরা। মিঠুন মিডল অর্ডারে ভরসা হতে পারলেও বাকিদের উপর 'ভরসা' করা মুশকিল। বেশ অনেকদিন ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটেও রানে নেই বিজয়। মোসাদ্দেক বেশ অধারাবাহিক।

ওপেনিংয়ে মিজানুর রহমানকে দলে নিয়েছে তারা। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে মিজানুর একটি সেঞ্চুরি করলেও সেই ম্যাচটি ছিল টুর্নামেন্টের দুর্বল দলের বিপক্ষে, কেবল আনুষ্ঠানিকতার। ওই আসরে তারচেয়ে অনেক ভালো স্ট্রাইকরেটে বেশি রান করেন মুনিম শাহরিয়ার। তিনি থেকে গেছেন অবিক্রীত। আনিসুল ইসলাম ইমন, তানজিদ তামিমদের মতো তরুণদেরও দলে নেওয়ার সুযোগ ছিল সিলেটের। তারা নিয়েছে শফিউল হায়াত হৃদয়কে। এই ক্রিকেটার ২০১৬ সালে যুব বিশ্বকাপের দলে ছিলেন। তবে এরপর আর দেশের ক্রিকেটে কোথাও ছাপ রাখতে পারেননি। গত দুই-তিন বছরে কোন পর্যায়েই তাকে তেমন একটা খেলতে দেখা যায়নি।

সেদিক থেকে পেস অলরাউন্ডার মুক্তার আলি হতে পারেন দলটির জন্য কার্যকর। বিশেষজ্ঞ পেস বোলার হিসেবে তাসকিনের বাইরে পুরো স্কোয়াডে দেশিদের মধ্যে সিলেটে রেখেছে আর কেবল আল-আমিনকে। তিনি কোন কারণে চোটে পড়লে মুশকিলে পড়া অবধারিত তাদের।

বাঁহাতি স্পিনে নাজমুল ইসলাম অপুর উপর আস্থা সিলেটের। জাতীয় দলের হয়ে এক সময় খেললেও অপু ছন্দ হারিয়ে একদমই বিবর্ণ। একই অবস্থা লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখনের বেলাতেও। লিখন যদিও কোয়ালিটি লেগ স্পিনার। ভালো করার সম্ভবনা তার আছে। এই দুজন ছাড়া সিলেটের স্পিনার  বলতে মোসাদ্দেক ও অলক। যদিও তারা কেউ বিশেষজ্ঞ স্পিনার নন। অথচ বিপিএলে বেশিরভাগ ম্যাচ হবে মন্থর উইকেটেই।

সিলেট সানরাইজার্স:

সরাসরি: তাসকিন আহমেদ, দিনেশ চান্দিমাল (শ্রীলঙ্কা), কেসরিক উইলিয়ামস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), কলিন আলেক্সজান্ডার ইনগ্রাম (দক্ষিণ আফ্রিকা)।

ড্রাফট থেকে দেশি: মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মোহাম্মদ মিঠুন, আল-আমিন হোসেন, নাজমুল ইসলাম অপু, এনামুল হক বিজয়, সোহাগ গাজী, অলক কাপালি, মুক্তার আলী, মিজানুর রহমান, নাদিফ চৌধুরী, জুবায়ের হোসেন লিখন, শফিউল হায়াত হৃদয়।

ড্রাফট থেকে বিদেশি: রবি বোপারা (ইংল্যান্ড), অ্যাঞ্জেলো পেরেরা (শ্রীলঙ্কা), সিরাজ আহমেদ (সংযুক্ত আরব আমিরাত)।

Comments