দেড় লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম ১০০ টাকা

স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

ফেনীতে কোরবানির গরুর চামড়ার আশানুরূপ দাম মেলেনি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পরেও দেখা পাওয়া যায়নি মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। পরে কেউ কেউ নামমাত্র মূল্যে চামড়া বিক্রি করেছেন। আবার কেউ কেউ চামড়া বিক্রি করতে না পেরে মাদ্রাসা বা এতিমখানায় দান করেছেন।

পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের সত্যনগরের বাসিন্দা আবু ইউছুপ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সারা দিন ক্রেতার আশায় বসেছিলাম। পরে ক্রেতা না পেয়ে একজনের কাছে দেড় লাখ টাকার গরুর চামড়া মাত্র ১০০ টাকায় বিক্রি করেছি।'

একই কথা বলেন ফেনী সদর উপজেলার উত্তর কাশিমপুর গ্রামের বেলাল হোসেন। তিনি  বলেন, 'আমি দেড় লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি করেছি মাত্র ১৫০ টাকায়।'

ফেনী পৌরসভার শহীদ শহীদুল্লাহ সড়কের বাসিন্দা মীর হোসেন চামড়া নিয়ে বিকেল পর্যন্ত মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীর অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু, দুপুর পর্যন্ত কাউকে পাননি। বিকেলে একজন মৌসুমি ক্রেতা ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা দামের গরুর চামড়াটি মাত্র ১০০ টাকা দাম বলে চলে যান। পরে তিনি চামড়াটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় দিয়ে দেন।

দাগনভূঁঞার ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম জানান, তার এলাকার একজন মৌসুমি ব্যবসায়ী গ্রামে গ্রামে হেটে গড়ে ২০০ টাকা করে ২২টি চামড়া কিনেন। পরে কয়েকশ টাকা রিকশা ভাড়া করে বাজারে নিয়ে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।

রাত ৮টায় ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে একজন মৌসুমি ৫টি চামড়া নিয়ে বসে ছিলেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শহরের দাউদপুর এলাকা থেকে আমি চামড়াগুলো গড়ে ২০০ টাকা করে কিনেছি। নিজের খরচ ও রিকশা ভাড়া করে বিক্রি করতে এনেছি। গড়ে ৩০০ টাকা দাম চেয়েছি। কিন্তু, ব্যাপারীরা ১৫০ টাকা বলে চলে গেছেন।'

ফেনীতে এ বছর গ্রামে গ্রামে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দেখা মেলেনি। এলাকা ভেদে গরু ও মহিষের ছোট বড় সব ধরনের চামড়া ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এলাকায় কোনো মৌসুমি ব্যবসায়ীর দেখা না পেয়ে ৯৮ শতাংশ কোরবানির চামড়া স্থানীয় মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান হিসেবে দেওয়া হয়েছে। কোরবানির ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই মাটিতে পুতে ফেলেছেন।

ফেনীর সব চেয়ে বড় চামড়ার মোকাম পাঁচগাছিয়া বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ঢাকা থেকে তারা কোনো নির্দিষ্ট দর পাননি। তাছাড়া ঢাকায় ট্যানারিতে বা বড় আড়তে চামড়া বিক্রি করে বকেয়া টাকা ৫ বছরেও আদায় করা যায় না।

রোববার সন্ধ্যায় ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ এলাকার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আলী হোসেন জানান, তিনি গড়ে ৩৫০ টাকা করে ১১টি বড় গরুর চামড়া কিনে ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে গড়ে ৫০ টাকা লাভে ৪০০ টাকায় বিক্রি করেন। তবে, সংগ্রহ খরচ যোগ করা হলে কোনো লাভই হয়নি।

শহরের শান্তি কোম্পানি রোডের ইসলামিয়া এতিমখানার সভাপতি কেবিএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'আমাদের এতিমখানায় পাওয়া ২৬৭টি ছোট-বড় চামড়া গড়ে ৩৭০ টাকা বিক্রি হয়েছে। আমরা কোনো ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করিনি।'

ফেনীর পাঁচগাছিয়া বাজারের সবচেয়ে বড় আড়তদার নিজাম উদ্দিন দাবি করেন, তিনি এবছর গড়ে ৩৫০-৪৫০ টাকায় ১০ হাজার গরু-মহিষের চামড়া ক্রয় করেছেন।

আরেক আড়তদার মো. নুর নবী জানান, তিনি গড়ে ৩৫০-৪০০ টাকা দরে প্রায় মাত্র এক হাজার চামড়া কিনেছেন।

তিনি বলেন, 'ঢাকায় চামড়া বিক্রি করে ৫ বছরেও টাকা পাওয়া যায় না।'

পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত  চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন বলেন, 'জেলায় একমাত্র আমার ইউনিয়নের পাঁচগাছিয়া বাজারে চামড়ার ছোট বড় ৫৫-৬০ জন আড়তদার ছিলেন। গত কয়েক বছরে লোকসানের কারণে অনেকেই ব্যবসায় গুটিয়ে নিয়েছেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

4h ago