করোনাকালে ব্যাংকে নারীর কর্মসংস্থান কমেছে
দেশের ব্যাংকিং খাতে নারী কর্মসংস্থান হারের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে করোনাভাইরাস। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ব্যাংকে নারী কর্মসংস্থান উদ্বেগজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১ বছর আগের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশের বিপরীতে এ বছরের জুন পর্যন্ত নারী কর্মীর অনুপাত ১৫ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক নারী ব্যাংকার পরিবারের প্রতি আরও মনোযোগী হতে মহামারি চলাকালে চাকরি ছেড়েছেন।
এ ছাড়া, অনেক নারী ব্যাংকার ভাইরাস সংক্রমণ থেকে পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চলাচল সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে চাকরি ছেড়ে দেন বলে জানান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি ব্যাংকের এক নারী কর্মকর্তা বলেন, 'করোনার ক্ষেত্রে সবার নিরাপদে থাকার প্রয়োজন হলেও, পুরুষ-শাসিত সমাজ নারীদের ওপরই এমন কঠিন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়। পুরুষ কর্মীরা সাধারণত এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন না।'
চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে নারী কর্মীর সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ৫১৩ জন। গত বছরের তুলনায় এটি ৫ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।
আগের বছরের ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৩২ জনের বিপরীতে মোট পুরুষ কর্মচারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ২৭১ জনে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'মহামারি চলাকালে অনেক নারী কর্মী চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। বাড়ি থেকে বের হলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছিলেন তারা।'
'বিধিনিষেধের কারণে নারীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে যাওয়াও কঠিন ছিল', যোগ করেন তিনি।
মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, 'কিছু ব্যাংক লকডাউন চলাকালেও বাড়ি থেকে অফিস করার ব্যবস্থা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করেনি। নারী ব্যাংকারদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে এটি।'
ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলীও একই মত পোষণ করেন।
তিনি বলেন, 'বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারী কর্মীরা চাকরির চেয়ে পরিবারকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ফলে তাদের মধ্যে কেউ কেউ চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।'
তবে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় আগামীতে ব্যাংকে নারী কর্মীর সংখ্যা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
১ বছর আগের ১৮ শতাংশ থেকে কমে এ বছরের জুন পর্যন্ত সরকারি ব্যাংকগুলোতে নারী কর্মীদের অনুপাত ১৫ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে এ অনুপাত ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে এ অনুপাত ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
এ ছাড়া, বিদেশি ব্যাংকগুলোতে নারী কর্মীদের অনুপাত আগের বছরের ৩৩ শতাংশ থেকে কমে ২৪ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক জানান, তারা এ বছর বিভিন্ন পদে এন্ট্রি লেভেলের কর্মকর্তা নিয়োগ দিলেও আশানুরূপ নারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে পারেননি। ঢাকা ব্যাংক এন্ট্রি লেভেলে অন্তত ২০ শতাংশ নারী কর্মী নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু আবেদন কম করায় এটি হয়নি।
তিনি বলেন, 'এখানে হয়তো করোনা সংকট নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিম বলেন, 'করোনা মহামারিতে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনার জেন্ডার স্পেসিফিক প্রভাব গুরুতর ছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'করোনা সংকট মোকাবিলায় পরিবারের নারী সদস্যদের আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হয়েছে। এ ছাড়া, অনেক নারী চাকরিপ্রার্থী ব্যাংকে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পরিবারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পাননি।'
আরও বেশি নারীকে নিয়োগ দিতে ব্যাংকগুলোর পজিটিভ ডিসক্রিমিনেশনের পথ অবলম্বন করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন সাদেকা হালিম।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, 'মহামারি প্রতিটি খাতে নারীদের ওপর প্রভাব ফেলেছে।'
কিছু ব্যাংক নারীদের নিয়োগে কম উৎসাহ দেখিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
'যে নারীরা প্রতিকূলতার মধ্যেও চাকরি পেয়েছেন, তারা এখন চাকরি চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। যৌন হয়রানি ও প্রমোশনের অভাব তাদের চাকরি চালিয়ে যেতে নিরুৎসাহিত করছে। কিছু ক্ষেত্রে তারা পরিবারের কাছ থেকে সমর্থন পান না', মালেকা বানু বলেন।
এ বছরের জুনে এন্ট্রি লেভেলের কর্মীদের ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ নারী ছিলেন। কিন্তু মধ্য থেকে উচ্চ স্তরের কর্মীদের মধ্যে নারী কর্মী ছিলেন যথাক্রমে ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম
Comments