সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার কাছে জিম্মি ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোর

কেন বাতিল হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের পরিকল্পনা?
ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে। ছবি: স্টার

দেশের অর্থনীতির জন্য লাইফলাইন হিসেবে বিবেচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরকে উন্নত করার পরিকল্পনায় সরকারের ক্ষীণদৃষ্টি আমাদের বিভ্রান্ত করছে। বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে এই রুটে একটি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ৭ বছর ধরে সম্ভাব্যতা যাচাই, বিশদ নকশা এবং প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য ১০০ কোটি টাকা খরচ করার পর প্রকল্পটি পুরোপুরি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

২০০৯ সালে যখন প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছিল, তখন মহাসড়কে দৈনিক যানবাহনের সংখ্যা ছিল গড়ে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজারের মধ্যে এবং অনুমান করা হয় যে, ২০৩০ সালের মধ্যে সংখ্যাটি ৬৬ হাজার ছুঁয়ে যাবে।

এখন প্রতিদিন দীর্ঘ যানজটে থাকা এই মহাসড়কটি সচল রাখতে ছোট ছোট কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যা যথেষ্ট নয়।

এদিকে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে ১১০ কোটি টাকা ব্যয় করে একটি উচ্চগতির ট্রেনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং বিস্তারিত নকশা করেছিল। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার কমাতে নারায়ণগঞ্জ হয়ে ঢাকা ও কুমিল্লার মধ্যে একটি কর্ড লাইন নির্মাণের জন্য বর্তমানে আরেকটি সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।

নির্মিত হলে রুটটি ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যাতায়াতের সময় খুবই কম লাগবে। তবে এটি নির্মাণ এখনো অনেক দূর। বাংলাদেশ রেলওয়ে কেবল এই বিষয়ে গবেষণার জন্য পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেল এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলেও দেশের বাণিজ্যের ৮০-৯০ শতাংশ পরিবহনের জন্য এক্সপ্রেস হাইওয়ের প্রয়োজন হবে।

অর্থনৈতিক কার্যক্রম মসৃণ করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের গুরুত্বের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করার পরেও এই প্রকল্পকে পুরোপুরি বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল অকল্পনীয়। এমন সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তি কী ছিল?

রেল এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এবং হাইওয়েতে আরও লেন বাড়ানো যে কখনোই এক্সপ্রেস হাইওয়ের কার্যকর বিকল্প হতে পারে না এটি কি সরকার বিবেচনা করেনি? কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে? এটি কি বছরের পর বছর ধরে পরিচালিত ব্যয়বহুল সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর অসম্ভব কোনো প্রকল্প মনে হয়েছিল? আমরা বিশ্বাস করি যে জনসাধারণ, যাদের অর্থ দিয়ে এই গবেষণা এবং প্রকল্পগুলো পরিচালিত হয়, তাদের এসব প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার। 

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বর্তমানে এক্সপ্রেসওয়ের অভাব পূরণের জন্য যে প্রকল্পগুলো নিয়েছে তা তাদের নিজেদের কাছেই যথেষ্ট নয়। অনেক প্রকল্প এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আটকে আছে যেগুলো কখন শেষ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই অথবা শত কোটি টাকা পাবলিক ফান্ড খরচের পর কোনো দৃশ্যমান উন্নতি নাও হতে পারে।

সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে ইতোমধ্যেই শত কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে এবং ভবিষ্যতে অকার্যকর প্রকল্পের কারণে আরও কত টাকা খরচ হতে পারে— আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে সরকারকে আরও সর্তক হওয়ার পাশাপাশি সরকারের অবস্থান পুনর্বিবেচনা এবং আরও সম্ভাব্য ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান আনতে পারে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানাই।

Comments

The Daily Star  | English
explosions at Jammu airport today

Explosions rock Indian Kashmir

Sirens ring out in Jammu, projectiles in night sky; Islamabad says Indian drones earlier entered its airspace

2h ago