লুকানোর কিছু না থাকলে তথ্য সরবরাহে বাধা কেন?

একজন মানবাধিকারকর্মী তথ্য অধিকার আইনে পুলিশের কাছে তথ্য চেয়ে তদন্তের মুখে পড়েছেন, এটা খুবই বিরক্তিকর বিষয়। ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযুক্ত ও গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা সম্পর্কে তিনি তথ্য চেয়েছিলেন।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হয়ে শ্রীলঙ্কায় কাজ করছেন সাদ হাম্মাদি। তিনি ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে এ বিষয়ে তথ্য দিতে অনুরোধ করেছিলেন। ২ বার তথ্য দিতে অস্বীকার করায় তিনি বিষয়টি তথ্য কমিশনকে জানান।

গত ১১ জানুয়ারি পুলিশের এক আইনি প্রতিনিধি তথ্য অধিকার আইনের একটি ধারার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তথ্যগুলো 'অত্যন্ত সংবেদনশীল' ও সেটি সরবরাহ করা হলে 'আইন প্রয়োগে বাধা হতে পারে।'

অন্য এক দেশে বসে তথ্য চাওয়ার বিষয়ে হাম্মাদির উদ্দেশ্য নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন।

এ ছাড়া, গত ২২ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে কমিশন পুলিশকে হাম্মাদির বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা যাচাইয়ের নির্দেশ দেয়।

ঘটনাগুলোর এই অপ্রত্যাশিত মোড়—জনস্বার্থে তথ্য প্রকাশ করা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তথ্য চাওয়ার কারণে তদন্তের মুখে পড়ার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, তথ্য অধিকার আইন থাকার পরও জনগণ তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে কতটা দূরে রয়েছে।

এটা আমাদের মনে প্রশ্ন জাগায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় অভিযুক্ত ও গ্রেপ্তারের সংখ্যার বিষয়ে এত সংবেদনশীল কী রয়েছে? এটা ইতোমধ্যেই সরকারি হিসাবের অংশ এবং যে কারো সেখান থেকে তথ্য পাওয়া অধিকার আছে।

এ সব তথ্য কোন পরিস্থিতিতে আইন প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করতে পারে তাও স্পষ্ট নয়। এমনকি আমরা যদি দাবি করি, তথ্যগুলো 'অত্যন্ত সংবেদনশীল' তাহলে আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, সেগুলো প্রকাশের সম্ভাব্য ফলাফল ব্যাখ্যা করা এবং একজন নাগরিকের উদ্দেশ্য ও পরিচয়ের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তাকে অপমানিত করা হয়েছে। এটি পুলিশের স্বচ্ছতার দাবির সঙ্গেও মেলে না।

তথ্য কমিশনের প্রতিক্রিয়ার বিষয়েও আমরা সমানভাবে বিস্মিত। তথ্য অধিকার আইন বিষয়ে এক বিশেষজ্ঞ দ্য ডেইলি স্টারের কলামে বলেছেন, 'তথ্য কমিশন যখন নিজেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তথ্য অস্বীকারের সঙ্গে একমত হয়, তখন তথ্য সন্ধানীরাই বিভ্রান্তিতে পড়েন।'

তথ্য অধিকার আইনের ধারা ৭-এর অধীনে সরকারি সংস্থাগুলোর তথ্য সরবরাহের অনুরোধ উপেক্ষা করার সুযোগ থাকায় সেটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। কমিশনের জানা উচিত, নাগরিকদের তথ্য জানার অধিকার ও জনস্বার্থ রক্ষায় সরকারের অধিকারের সমন্বয় করা তার কাজের মূল অংশ। কাজটি এমনভাবে করতে হবে যাতে নাগরিকরা তথ্য অধিকার আইন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত না হন।

এখন পর্যন্ত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধ্বংসাত্মক প্রভাব ও ভিন্নমত দমনে কীভাবে তা প্রায়শই অপব্যবহার করা হয়েছে সে সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়। আইনটির আরও বেশি অপব্যবহারের সুযোগ না দিয়ে প্রকৃত পরিস্থিতি চিত্রিত করে তথ্য প্রকাশের যেকোনো প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানানো উচিত।

তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে সবার যাতে সুরক্ষা ও অধিকারপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয় যে জন্য আমরা কমিশনকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

Comments