পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো যুদ্ধের বাইরে রাখুন

ইউক্রেনে জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রুশ হামলা। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গত শুক্রবার রুশ হামলার পর বিশ্বসম্প্রদায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং প্রশ্ন তুলেছে, পুতিন কেন এরকম স্পর্শকাতর লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।

আমরা নিশ্চিত যে তার মতো অভিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়কের পরিষ্কার ধারণা আছে, এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আগামী কয়েক দশক ধরে ওই অঞ্চলের মানুষ এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য কী পরিণতি বয়ে আনতে পারে।

আমরা বিশ্বাস করি, ১৯৮৬ সালের চেরনোবিল পারমাণবিক প্ল্যান্টে দুর্ঘটনাক্রমে সংঘটিত বিপর্যয় এবং এর মর্মান্তিক পরিণতি সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট পুতিন ও তার সামরিক কমান্ডাররা পুরোপুরি সচেতন। সেটিও ইউক্রেনে ছিল এবং কয়েক শ নাগরিকের মৃত্যুর পাশাপাশি ইউরোপজুড়ে মারাত্মক তেজস্ক্রিয় দূষণ ছড়িয়ে দেয়।

জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু করার রুশ সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমরা মর্মাহত। হামলার ফলে ভবনের একটি অংশে আগুন লেগে গিয়েছিল। সেখানে দায়িত্বরত লোকজন ইউক্রেনীয় সৈন্যদের সহায়তায় আগুন নেভাতে সক্ষম হন এবং এখন পর্যন্ত প্ল্যান্ট থেকে রেডিয়েশন নির্গত হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। খুব অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। তা না হলে দুঃস্বপ্নময় পরিণতি হতে পারতো।

আমরা এই খবরে আরও শঙ্কিত যে, রুশ ফেডারেশনের সামরিক বাহিনী সেখানে ইউক্রেনের সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধের পর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর থেকে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলো অন্যতম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইতোমধ্যে গত শুক্রবার একটি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়, আশঙ্কাই সত্যি হলো।

বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলার ঘটনাকে নজিরবিহীন 'পারমাণবিক সন্ত্রাস' হিসেবে অভিহিত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এবং তার পশ্চিমের মিত্ররা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু করে কয়েক লাখ মানুষের জীবন বিপন্ন করার জন্য অভিযুক্ত করেছে মস্কোকে। তাদের মধ্যে অনেকেই পুতিনকে তার সব সেনা প্রত্যাহার করে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বলেছে, তারা ইউক্রেনের সমর্থনে এবং ইউরোপীয় নাগরিকদের সুরক্ষায় মিত্রদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানাবে।

অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, পুতিন এখন পারমাণবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি নিচ্ছেন এবং তাকে অবশ্যই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

ইউক্রেনের সবশেষ পরিস্থিতি যেটা ইঙ্গিত করে, তা হলো কোনো জায়গার দখল ছেড়ে দেওয়ার লক্ষণ নেই রুশ বাহিনীর। তারা বরং বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

দুর্ভাগ্যবশত, বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে এবং শরণার্থীর সংখ্যা ইতোমধ্যেই ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

ইউক্রেনের একটি নদীবন্দর অতিক্রমকারী বাণিজ্যিক জাহাজে বিনা উসকানিতে রকেট হামলার নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশি। হামলায় আমাদের এক নাবিক নিহত হয়েছেন এবং জাহাজটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বাকি ক্রু-দের নিরাপদ অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেটা আমাদের জন্য কিছুটা স্বস্তির।

আমরা ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়ার হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা জোরের সঙ্গে বলছি, পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে হবে। যাতে চেরনোবিলের মতো কোনো বিপর্যয় আর না ঘটে।

পারমাণবিক বিপর্যয়ের কিছু স্মৃতি এখনো আমাদের কাছে সতেজ থাকায় আমরা প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে সংলাপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজার আহ্বান জানাই।

Comments

The Daily Star  | English

Explosions rock Indian Kashmir

Sirens ring out in Jammu, projectiles in night sky; Islamabad says Indian drones earlier entered its airspace

6h ago