নিরাপদ অভিবাসনে ‘নারী অভিবাসীদের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর’

ছবি: এএফপি

এটি দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে নারী অভিবাসী শ্রমিকরা দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে একটি। দেশে থাকা অবস্থায়  অভিবাসন প্রত্যাশী নারীদের দালাল ও পাচারকারীদের পরিকল্পিত হয়রানির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বিদেশে গিয়েও তারা নিয়োগকর্তাদের দুর্ব্যবহার ও সহিংসতার শিকার হন।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানায়, ৭০ শতাংশ নারী অভিবাসী শ্রমিক তাদের নিয়োগকর্তাদের দ্বারা নির্যাতিত এবং মারধরের শিকার হন, তাদের চলাফেরা সীমাবদ্ধ করা হয় এবং মজুরি আটকে রাখা হয়।

আমরা সবাই পাচারের ভয়ঙ্কর কাহিনী সম্পর্কে জানি। নিজের এবং পরিবারের জন্য একটি উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখা নারীদের অনেককেই অসাধুচক্র ও দালালদের ফাঁদে পড়ে আধুনিক যুগের দাসত্বকে বরণ করে নিতে হয়।

এমনকি যারা আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশে যান, তারাও তাদের অধিকার রক্ষায় কোনো অভিযোগ আমলে নেবে এমন কাউকে পাশে না পেয়ে বিদেশের মাটিতে অসহায় হয়ে পড়েন।  

নারী অভিবাসী শ্রমিকদের ভয়াবহ দুর্দশা সত্ত্বেও বিদেশে নিরাপদ কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো স্থির প্রচেষ্টা নেই বলেই মনে হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো আমাদের নারী অভিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোতে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিক্রিয়া এবং কার্যকর উপায়ে মোকাবিলা করতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক। এর ফলে আমাদের নারী শ্রমিকরা বিদেশের মাটিতে অসহায় হয়ে পড়েন, যেখানে তাদের কেউ চেনে না কিংবা তাদের ভাষাও বোঝে না।

অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে দুর্বল নারীদের টার্গেট করে এমন অসাধু চক্র সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বরাবরই ভুক্তভোগী এবং তাদের 'লোভ'-কে দায়ী করেছে।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নারী অভিবাসীদের শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও যৌন নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিকার ও প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে গঠিত 'নারী অভিবাসীদের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর' জোটকে আমরা স্বাগত জানাই। বর্তমানে ২২ সদস্য নিয়ে গঠিত এই জোটে ৭টি জাতীয় পর্যায়ের এবং ১৫টি স্থানীয় এনজিও রয়েছে। এর লক্ষ্য হলো নিরাপদ নারী অভিবাসন নিশ্চিত এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য ও সহিংসতার সমস্যা মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার জন্য নারী অধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে নেটওয়ার্কিং শক্তিশালী করা।

এই জোট নতুন অভিবাসীবান্ধব আইন ও নীতির পক্ষে কাজ করবে এবং নারী অভিবাসীদের চাহিদা ও দাবির কথা বলার ক্ষমতা তৈরি করবে।

আমরা আশা করি, জোটটি অবৈধ উপায়ে দালালের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং নারী শ্রমিকদের দক্ষতা তৈরিতে কাজ করবে, যাতে তারা বিদেশে ভালো বেতনে এবং নিরাপত্তা আছে এমন কর্মস্থলে চাকরি পেতে পারেন। বিদেশে যাওয়ার পর যেন কোনো নারী সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের পাশাপাশি জোটের সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতে পারেন, এমন নেটওয়ার্কিংও জোটটি তৈরি করবে বলে আমরা আশা করি। রেমিট্যান্সের ওপর নারী শ্রমিকদের অধিকারকে প্রাধান্য দিতে সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

আমরা সরকারকে নারী অভিবাসীদের মূল চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করতে এবং ভবিষ্যতে এই জোটের দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের আহ্বান জানাই। আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করাই সবার অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

Comments

The Daily Star  | English

Exporters fear losses as India slaps new restrictions

Bangladesh’s exporters fear losses as India has barred the import of several products—including some jute items—through land ports, threatening crucial trade flows and millions of dollars in earnings.

2h ago