নামে টিকে আছে বেসরকারি এয়ারলাইন্স

আমাদের বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোকে নানান সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বিষয়টি আমাদের জন্য সত্যিই চিন্তার বিষয়। ফলে শুধু তাদের প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তাই নয় বরং তারা বেশ কিছু কার্যক্রমও সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি দ্য ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে- নিয়ন্ত্রণমূলক ত্রুটি, অত্যধিক পরিমাণে শুল্ক, জেট ফুয়েলের উচ্চ মূল্য এবং তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে দেওয়া অযৌক্তিক পৃষ্ঠপোষকতা এর পিছনে অন্যতম কারণ।

বাংলাদেশে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মতে, ২০০০ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ১৩ লাখ মানুষ ভ্রমণ করলেও ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ লাখে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময় আমাদের বেসরকারি এয়ারলাইন্স সংস্থাগুলো উড়োজাহাজ ভ্রমণের উচ্চ চাহিদার সুযোগে তাদের কার্যক্রমের পরিমাণ বাড়াতে পারতো। কিন্তু, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সমর্থনের অভাবে তা করতে পারেনি।

রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত বিমানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এখন এয়ারলাইন্সগুলোর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ বিমানের একটি নির্দিষ্ট ওয়্যারহাউজ সুবিধার পাশাপাশি বিমানবন্দরে হ্যাঙ্গার আছে, যা অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলোর নেই। ফলে, বিমানের সার্ভিসিং বা খুচরা যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপনে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশ বিমানের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। কারণ তারা বিমানবন্দরে খুচরা যন্ত্রাংশ রাখতে পারে না। ফলে ফ্লাইটের সময়সূচি নিয়মিত ব্যাহত হয়। অনেক সময় বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোকে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়।

তাছাড়া, অযৌক্তিক হারে ট্যাক্স দিতে হয় বলে উড়োজাহাজে ব্যবহৃত বহুবিধ জেনারেটর, বিভিন্ন ধরনের এলসিডি প্যানেল এবং ককপিটে ব্যবহৃত কম্পিউটার ডিসপ্লের মতো অনেক যন্ত্রাংশই উচ্চ মূল্যে আমদানি করতে হয়। এই খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, কিছু পার্টসের জন্য ১৫ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত ট্যাক্স দিতে হয়। যেগুলো আসলে শুল্কমুক্ত হওয়া উচিত। এ ছাড়া, সেখানে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর (এটি) দিতে হয়। যা সাম্প্রতিককালে উড়োজাহাজ, ইঞ্জিন ও খুচরা জিনিসপত্র আমদানির ওপর আরোপ করা হয়েছে। বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো যে কারণে সমস্যায় পড়ছে তার আরেকটি বড় কারণ হলো বকেয়া সারচার্জ। উড়োজাহাজ খাতের বিশ্লেষকদের মতে, সারচার্জের কারণেই জিএমজি এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজকে তাদের উড়োজাহাজ পরিচালনা বন্ধ করতে বাধ্য করেছে। জেট ফুয়েলের উচ্চ মূল্যও তাদের জন্য আরেকটি প্রতিবন্ধকতা।

সুতরাং আমাদের অ্যাভিয়েশন খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর ওপর থেকে কর আরোপের স্বেচ্ছাচারী ও খামখেয়ালী ব্যবস্থা বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা দরকার। তাদের উড়োহাজাজগুলোকে সহজে পরিষেবা দেওয়ার জন্য এবং প্রয়োজনে খুচরা যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপনে বিমানবন্দরে নির্দিষ্ট সুবিধা থাকা প্রয়োজন। যন্ত্রাংশ আমদানিতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেতেও এত বেশি সময় লাগা উচিত নয়। সবচেয়ে বড় কথা, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মতো বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোরও সরকার থেকে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। অন্তত তাদের জন্য প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র সমান না হওয়া পর্যন্ত।

Comments

The Daily Star  | English

Dengue testing fees to remain Tk 50 in govt hospitals

DGHS issues circular extending the fixed charges for dengue tests till Dec 31

32m ago