দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপ থেকে আমাদের রক্ষা করুন

ভর্তুকির চাপ কমাতে আগামী মার্চের মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বৃদ্ধির কথা ভাবছে সরকার। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।

যদি সরকার এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে তাহলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে এবং ভোক্তাদের ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে। এখানেই শেষ নয়। দাম বৃদ্ধির ফলে একপর্যায়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে, যা জীবনযাত্রার সামগ্রিক ব্যয় বাড়িয়ে দেবে। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ ইতোমধ্যেই প্রচণ্ড আর্থিক চাপের মধ্যে আছে।

এই অর্থবছরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৩০ শতাংশকে ছাড়িয়ে গিয়ে ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে পৌঁছেছে। ১৪ মাসের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। খাদ্য ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশের কাছাকাছি।

দ্য ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম এবং মার্চের মধ্যে সারের দাম বাড়তে পারে। কেরোসিন ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ২ মাসের মধ্যেই এগুলোর দাম বাড়ানোর কথা চলছে। অথচ কেরোসিন ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব আমরা ইতোমধ্যেই দেখেছি।

দাম বৃদ্ধির পক্ষে থাকা কর্মকর্তাদের একাংশ বিশ্বাস করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমবর্ধমান দামের মধ্যে সরকারের ভর্তুকির বোঝা 'সহনীয় মাত্রায়' নামিয়ে আনতে 'মূল্য সমন্বয়' প্রয়োজন। তারা মনে করছেন, করোনার টিকা, বুস্টার ডোজের মতো জরুরি স্বাস্থ্যসেবা উপকরণ সংগ্রহ, কৃষকদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে চাল ক্রয় বৃদ্ধি, উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা ইত্যাদি কাজের জন্য তহবিল নিশ্চিত করতে এই 'মূল্য সমন্বয়' সাহায্য করবে।

এর সবই যৌক্তিক হলেও প্রশ্ন থেকে যায়, জনগণের পকেট থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে কেন এগুলো করতে হবে? সরকারের মেয়াদের শেষ বছরে এমন একটি সিদ্ধান্ত কেবল রাজনৈতিক অপরিণামদর্শীতার পরিচয়ই নয়, জনসাধারণের জন্যও একটি অপ্রয়োজনীয় বোঝাও বটে।

আমরা বুঝতে পারছি, আন্তর্জাতিক দামের ঊর্ধ্বগতির মুখে পড়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে অতিরিক্ত ভর্তুকি দেওয়ার অনুরোধ করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করছে এবং মার্চের মধ্যে একটি সংশোধিত বাজেট নিয়ে আসবে বলে জানা গেছে। কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকির বোঝা কমানোর চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু আমরা মনে করি, তাদের এমন চিন্তা থেকে সরে আসা উচিত এবং জনসাধারণকে বিপদের মুখে ঠেলে না দিয়ে বিকল্প পথ খুঁজে বের করা উচিত।

করোনা মহামারি আরও কিছুটা সময় সরবরাহ ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে। কাজেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকারই কথা। কিন্তু দাম বৃদ্ধির দিকে না গিয়ে সরকারের উচিত অন্যান্য উপায়ে খরচ কমানোর কথা ভাবা। পদ্ধতিগত ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে খরচ হওয়া বাড়তি অর্থ রক্ষা, জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি করা, অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্প বাদ দেওয়া বা স্থগিত রাখা ইত্যাদি উপায়ে খরচের লাগাম টানার কথা ভেবে দেখতে পারে সরকার।

সরকার যাই করুক না কেন, জনগণের ওপর বোঝা চাপানোর মধ্যে সমাধান নেই। মহামারি ইতোমধ্যেই মানুষের জন্য অপরিমেয় দুর্ভোগ ও কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের একটি বিশাল অংশকে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিয়েছে। বেকারত্ব উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের চাপ সামলাতেও লড়াই করছে মানুষ। এখন আরেক দফা দাম বাড়ালে তাদের পক্ষে চাপ সামলানো কঠিন হয়ে যাবে।

Comments

The Daily Star  | English

BGB, BSF DG-level talks postponed

The director general-level border talks between Bangladesh and India, initially set for next month in New Delhi, have been postponed.

2h ago