গ্যাস অনুসন্ধান না করে আমদানিতে কেবল ভোক্তার বোঝাই বাড়াবে

গ্যাস অনুসন্ধানে সরকারের অবহেলা এবং আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতায় আমরা উদ্বিগ্ন। যা আমাদের গ্যাস সংকটের দিকে নিয়ে এসেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৯৯ সালে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণের পর থেকে বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধান প্রায় বন্ধই হয়ে আছে। প্রতি বছর গ্যাসের চাহিদা বাড়লেও সরকার নতুন কূপ খনন কিংবা সমুদ্রে গ্যাসের মজুদ অনুসন্ধানে কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেয়নি। এ ছাড়া বিদ্যমান অনেক গ্যাসক্ষেত্রও প্রয়োজন অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতও করা হয়নি। বরং অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে অনেক বেশি খরচে এলএনজি আমদানি শুরু করেছে সরকার। ফলস্বরূপ, সরকারের ভর্তুকির পরও, বছরের পর বছর ধরে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বেড়েছে।

যেহেতু দেশের অনেক এলাকায় গ্যাস সংকট তীব্র আকার নিয়েছে এবং গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল শিল্পকারখানা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে, সেহেতু ঘাটতি মেটানোর জন্য সরকার যেসব কৌশল নিয়েছে সেগুলো কাজ করেনি বলেই মনে হচ্ছে। উচ্চ মূল্যে এলএনজি আমদানি উদ্বেগজনক পরিকল্পনা- কেননা এর বোঝা শেষ পর্যন্ত গিয়ে ভোক্তাদের ওপরেই পড়ে। দুর্ভাগ্যবশত, সরকার ইতোমধ্যে ভর্তুকির বোঝা কমাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে।

প্রশ্ন হলো, কেন গ্রাহকের ওপর গ্যাসের উচ্চ মূল্যের বোঝা চাপাতে হবে, যখন নিজেদের গ্যাসের মজুদ অনুসন্ধান ও উত্তোলন করে কম দামে তা গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ব-দ্বীপ হওয়ায় বাংলাদেশ গ্যাস সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার কথা। তবুও, দেশের উপকূলীয় বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গ্যাসের মজুদ আছে কিনা তা অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমা বিরোধ মিটে যাওয়ার পরও আমরা সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করিনি। এ জন্য জরিপের বিষয়টি ২০১৫ সাল থেকে আলোচনা হলেও তা এখনো হয়ে ওঠেনি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) গত ২ বছরে মাত্র একটি কূপ খনন করেছে, যদিও তাদের ১ বছরে ৩ থেকে ৪টি অনুসন্ধান কূপ খননের সক্ষমতা রয়েছে। এমনকি, নতুন কোনো এলাকাতেও তারা সিসমিক জরিপ পরিচালনার বড় কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনীহা ও অদক্ষতা খুবই স্পষ্ট। সরকার এসব সমস্যার দিকে নজর না দিলে, ভবিষ্যতে গ্যাস সংকট সমাধান কঠিন হয়ে পড়বে। জরুরি কিছু খাতের সাময়িক সংকট মেটাতে স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত গ্যাসের চেয়ে ২৪ গুণ বেশি দামে সরকার এলএনজি আমদানি করতেই পারে। তবে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে দেশে গ্যাসের মজুদ অনুসন্ধানের বিকল্প নেই।

Comments

The Daily Star  | English
IMF sets new loan conditions

Bangladesh needs more time for fully flexible exchange rate, says IMF

Bangladesh is currently going through a transition towards a fully flexible exchange rate regime, and the process may take time, said the International Monetary Fund (IMF).

9h ago