গ্যাস অনুসন্ধানে অবহেলা অযৌক্তিক

বাংলাদেশের গ্যাস সংকট একই সঙ্গে কিছুই না করার এবং অতিরিক্ত কিছু করার এক সতর্কতামূলক গল্প। কোনো এক অজানা কারণে উচ্চ হাইড্রোকার্বন সম্ভাবনার দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমরা নিজেদের গ্যাস অনুসন্ধান বন্ধ করে দিয়ে ব্যয়বহুল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি।
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের গ্যাস সংকট একই সঙ্গে কিছুই না করার এবং অতিরিক্ত কিছু করার এক সতর্কতামূলক গল্প। কোনো এক অজানা কারণে উচ্চ হাইড্রোকার্বন সম্ভাবনার দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমরা নিজেদের গ্যাস অনুসন্ধান বন্ধ করে দিয়ে ব্যয়বহুল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি।

আমরা যখনই পর্যাপ্ত গ্যাস মজুদ রাখার কথা বলি, তখন স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কথা বলি না এবং বাস্তবতাও হয়তো এটাই যে, সেটা কখনোই হবেও না। তবে, বাংলাদেশের স্থল ও জলভাগে গ্যাস খুঁজে বের করার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। এর মাধ্যমে দেশে গ্যাসের মজুদ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং জ্বালানিখাতে আমদানি নির্ভরতা কমতে পারে।

আমদানি নির্ভরতা কমলে স্বাভাবিকভাবেই জ্বালানির দাম কম ও সরবরাহ আরও স্থিতিশীল হবে। তাহলে কেন আমরা সেটা করছি না?

দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই খাতের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের ২৮টি গ্যাসক্ষেত্রের বেশিরভাগই আগের তুলনায় কম গ্যাস উৎপাদন করছে। যার অর্থ বর্তমান গ্যাস সংকট আগামীতে আরও বাড়তে পারে।

যেকোনো গ্যাসক্ষেত্র বা কূপের ধারণক্ষমতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই কমে যেতে পারে। তবে কূপগুলো রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে আরও বেশি গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব, যা বেশিরভাগ গ্যাস ক্ষেত্রেই করা হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা তাই নতুন গ্যাস পেতে এই ক্ষেত্রগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি দ্রুত গ্যাস অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।

বর্তমানে বাংলাদেশে যে পরিমাণ গ্যাস মজুদ আছে, তা দিয়ে আনুমানিক ৯ থেকে ১০ বছর চলবে। স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খোঁজা জরুরি। যদিও এলএনজি আমদানির মতো সাময়িক সমাধানের মাধ্যমে আমরা জরুরি চাহিদা মেটাতে পারি। তবে, সেটি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গ্যাসের চেয়ে ২৪ গুণ বেশি ব্যয়বহুল এবং এই পদ্ধতি জ্বালানি-নীতির মূল ভিত্তি হতে পারে না।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমান অনিশ্চয়তার কারণ হচ্ছে ২০১১ সালে পরামর্শক নিয়োগ করে তৈরি করা 'গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধিতে পরামর্শ' প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো সরকার মানছে না। সেখানে বর্তমান কূপগুলো রক্ষণাবেক্ষণ বা ওভারহলিং, সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারে রিস্ক-বেইজড পদ্ধতির ওপর জোর দিতে বলা হয়েছিল।

উপকূলীয় ও পার্বত্য অঞ্চলে গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। সহজ সমাধান খুঁজতে গিয়ে আমাদের ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা ও নতুন গ্যাস অনুসন্ধানের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর সুযোগ নষ্ট করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গত ২০ বছরে মাত্র ২৮টি অনুসন্ধান কূপ খনন করেছে। যদিও এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, আমরা প্রতি ৩টি কূপ খনন করে একটিতে গ্যাস পেয়েছি, যেখানে বৈশ্বিক গড় ৫টিতে একটি। এমন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে না পারাটা খুবই দুঃখজনক। আর গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়টি অনেক দূরেই রয়ে গেছে।

সরকারকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, বর্তমান জ্বালানির চাহিদা মেটানো যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এর জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে। এলএনজির ওপর অতিরিক্ত নির্ভর করে আমরা জিম্মি হয়ে থাকতে পারি না।

Comments