কুমিল্লার ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন

প্রতীকী ছবি। বিপ্লব চক্রবর্তী

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর কাকতালীয়ভাবে বেশ কয়েকদিন 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহতের ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি। এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কোনো সংবাদ না আসায় গত ৪ মাস আমরা স্বস্তিবোধ করেছি।

যদিও আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নির্যাতনে ৩ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া, র‍্যাব হেফাজতে আটক এক ব্যক্তি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।

কিন্তু, গত শনিবার দিবাগত রাতে কুমিল্লার গোলাবাড়ি সীমান্ত এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধের' ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে র‍্যাব। এ ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

র‌্যাব এ ঘটনার বর্ণনা কিছুটা ভিন্নভাবে দিলেও, আমরা অতীতে এর কাছাকাছি গল্প শুনেছি। আমাদের জিজ্ঞাসা করা উচিত যে সে সব ঘটনা থেকে র‍্যাব কি কিছু শিক্ষা নেয়নি? কুমিল্লার 'বন্দুকযুদ্ধের' বিবরণে র‍্যাব জানায়, তারা দুষ্কৃতিকারীদের ফাঁদে পা দেওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে।

কিন্তু, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে যখন অপরাধীদের একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, তখন এর ফলাফল প্রকৃতপক্ষে কী দাঁড়ায়?

যে কোনোভাবেই বিবেচনা করা হোক না কেন, এ ঘটনায় পেশাদারিত্বের কোনো ছাপ পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়াও, প্রকৃতপক্ষে সেদিন কী ঘটেছিল, র‍্যাবের বর্ণনা শুনেই তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।

তাদের বর্ণনা বিশ্বাস করলেও প্রশ্ন থেকে যায় যে কেন ওই অভিযানটির পরিকল্পনা এত দুর্বল ছিল? অভিযান শুরুর আগে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল কি?

সেদিন র‌্যাবের অভিযানে নিহত ব্যক্তি একজন চিহ্নিত অপরাধী ছিলেন। তারপরও তাকে বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন ছিল। র‌্যাবের অতীত রেকর্ড নিয়ে ওঠা প্রশ্ন আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তিতে যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কুমিল্লার এ ঘটনায় র‍্যাবের বর্ণনা মেনে নিলেও, দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে এতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা র‍্যাবের দ্বারা কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না, বা এটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে স্বাধীনভাবে তদন্ত হওয়া উচিত।

মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় আমরা দেখেছি যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য কীভাবে একজন মানুষকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে এবং 'বন্দুকযুদ্ধের' অজুহাত দিয়ে দায়মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেছে।

সিনহা হত্যার ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা তৈরি হওয়ায়, একটা দীর্ঘ সময় দেশে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। দুর্ভাগ্য হলো, এ অবস্থাটা খুব বেশি দিন স্থায়ী হলো না।

'বন্দুকযুদ্ধের' ঘটনা স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরে আসবে না। এর মাধ্যমে বিশ্বের সামনে আমাদের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে না। তাই আশা করছি, আমরা আর আগের অবস্থায় ফেরত যাচ্ছি না।

Comments

The Daily Star  | English

Shutdown is another economic peril

Vowing to continue an indefinite work stoppage and stage a protest march on tax offices, the NBR Reform Unity Council has intensified its demands

8h ago