কঠোর নজরদারি ও আইনি ব্যবস্থা পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে

আমরা বাংলাদেশিরা অসাধু বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের, বিশেষ করে খাদ্য ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের লোভের বিষয়ে অবগত এবং অভ্যস্ত। তারা সামান্য কোনো কারণ পেলেও দাম বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করেন না। সেটা হতে পারে কোনো ছোটখাটো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা পরিবহন মালিকদের কোনো ধর্মঘট।

আমরা প্রায়ই দেখি, পর্যাপ্ত মজুত এবং চাহিদা স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, ভোক্তারা সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্রের কাছে বন্দি থাকতে বাধ্য হন। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, ইচ্ছে মতো মূল্য বৃদ্ধিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও আদতে তাদের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়নি।

বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, প্রতি বছর রমজানের আগে খাদ্যদ্রব্যের দাম উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যায়। এ কথা সত্যি যে, রোযার মাসে উল্লেখযোগ্যভাবে চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু, খুব কম ক্ষেত্রেই সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকে। বাংলাদেশে একবার যে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায় তা আর সাধারণত কমে না। এই বাজার প্রক্রিয়া স্বাভাবিক গতিতে না চলাটা রাষ্ট্রের ব্যর্থতার সঙ্গে অনেকটাই জড়িত।

এটি উদ্বেগজনক হলেও অবাক হওয়ার মতো নয় যে, নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়ছে। রমজানের আগে এই মূল্য বৃদ্ধি অপ্রত্যাশিত ছিল না। কিন্তু, রমজানের এখনো প্রায় ১ মাস বাকি। ব্যবসায়ীরা এখন মূল্য বৃদ্ধি করছেন চলমান রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে। এই যুদ্ধ কম বা বেশি প্রভাব ফেলবে বাজারে। কিন্তু, এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর যে প্রায় পক্ষকাল আগে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের প্রভাব ইতোমধ্যে আমাদের দেশের বাজারে পৌঁছে গেছে।

তাহলে কি আমরা এটাই মনে করব যে আমাদের মজুদের অবস্থা অতি খারাপ? এতটাই খারাপ যে এই স্বল্প সময়ের ধাক্কাও আমরা সামাল দিতে সক্ষম না? যুদ্ধের কারণে বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার যুক্তিতে একমত নন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রভাব বাংলাদেশের বাজারে পড়তে কমপক্ষে ৩ সপ্তাহ সময় লাগবে। করোনা মহামারির কারণে সারা পৃথিবীতেই সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। কিন্তু পণ্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারকে ছাপিয়ে গেছে বাংলাদেশ।

এর আসল কারণ হচ্ছে ব্যবসায়ীদের একাংশের অতিরিক্ত লোভ। তারা পরিস্থিতিকে কাজে লাগাচ্ছেন এবং অনৈতিক ও বেআইনিভাবে ভোক্তাদের পকেট কাটছেন। যদি তা না হয়ে থাকে, তাহলে গত ৮ মাসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আমদানি করা হয়নি এমন পণ্যের দাম বৃদ্ধির যুক্তিটা ব্যবসায়ীরা কীভাবে দেবেন?

আমরা বিশ্বাস করি, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনের উচিত ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের অসম্মান না করে কঠোরভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ শুরু করা। অসাধু ব্যবসায়ীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে এবং মজুতদারদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করতে হবে। পরিকল্পনা থেকে শুরু করে পণ্য সরবরাহের প্রতিটি পর্যায় হতে হবে নির্বিঘ্ন।

Comments

The Daily Star  | English

Some news outlets, people spreading lies about number of cops killed in uprising: CA press wing

PHQ published list of 44 killed; anyone claiming a higher number is requested to provide proof

34m ago