এক মামলার শুনানি ২৪ বছর ধরে কীভাবে চলে

অলঙ্করণ: বিপ্লব চক্রবর্তী

একটি মামলার বিচার কি ২৪ বছর ধরে চলতে পারে? বিচার শেষ হওয়ার কোনো আশা ছাড়াই যদি একটি মাদক মামলা এতদিন ধরে চলে, তবে সেই বিচার ব্যবস্থাকে কী বলা যায়? যে দেশে আইনের শাসনকে অক্ষরে অক্ষরে মানা হয়, সেখানে এটা বোধগম্য নয়।

আহাদ আলী মাদক রাখার অভিযোগে ১৯৯৮ সাল থেকে জটিল আইনি মারপ্যাঁচে ফেঁসে গেছেন। তার বিরুদ্ধে মামলাটি এবার আমাদের আইনি ব্যবস্থার সব ভুল-ভ্রান্তির দিকে আঙুল তুলেছে।

প্রথমত, তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনাটিই সন্দেহজনক। গাবতলীতে বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় তিনি যেখানে বসেছিলেন, তার পাশেই একটি প্যাকেটে হেরোইন পাওয়া গিয়েছিল। প্যাকেটটি কিন্তু তার কাছে ছিল না।

কারো পাশে নিষিদ্ধ মাদক পাওয়া গেলেই কি কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়? যদি তাই হয়, তাহলে ওই এলাকায় সে সময় একমাত্র কি তিনিই ছিলেন?

আহাদ আলীর বক্তব্য শুনে যেটা মনে হয়, তা হচ্ছে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশের উদ্দেশ্য ছিল তার কাছ থেকে কিছু টাকা আদায় করা। পুলিশের দাবি করা ৫ হাজার টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তার জীবনের মূল্যবান ২৪ বছর ওই মামলার পেছনেই চলে গেল।

দ্বিতীয়ত, মামলা নিষ্পত্তি করতে কি ২ যুগ সময় লাগার কথা? আমাদের অবশ্যই প্রশ্ন করা উচিত যে এত বছরে কেন একজন সাক্ষীকেও আদালতে হাজির করা হয়নি?

মামলাটি এত পুরনো যে মিরপুর থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আহাদকে গ্রেপ্তারের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যরা কে কোথায় আছেন তাও জানেন না তিনি। আমরা অনুমান করতে পারি, হয়ত তাদের অনেকে অবসরে গেছেন। কেউ মারা গেছেন।

মামলার ২৪ বছর পর কয়েকদিন আগে প্রধান সাক্ষী হাজিরা দিলেন। এই ২ যুগের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়া একমাত্র সাক্ষী মামলা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। মামলার ২ নম্বর সাক্ষীর ক্ষেত্রেও তাই। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে?

যেহেতু ২৫ গ্রামের বেশি হেরোইন রাখার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, তাই এ কথা স্বীকার করতে হবে যে মামলাটি গুরুতর। কিন্তু, চিন্তার বিষয় হলো—আদালত কেন মামলা খারিজের বিষয়ে বিবাদীপক্ষের আবেদন বারবার ফিরিয়ে দিয়েছেন? রাষ্ট্র যদি মামলা সঠিকভাবে তৈরি করতে এবং আদালতের কাছে তথ্য-প্রমাণাদি উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়, তবে সেটা কি অভিযুক্তের দোষ?

আমরা জানি যে উপস্থাপিত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিচারকরা আদালতে বিচারকাজ পরিচালনা করেন। অভিযোগ প্রমাণের জন্য যদি ২৪ বছরের মধ্যে কোনো সাক্ষীকে হাজির করা না যায়, তাহলে আদালতের রায় কি অভিযুক্তের পক্ষে যাওয়া উচিত নয়? দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তো সবাই নির্দোষ।

আমরা মনে করি, হাইকোর্টের মামলাটি আমলে নেওয়া উচিত। কোনো সাক্ষীকে হাজির করতে না পারার পরও প্রতিবার শুনানির নতুন তারিখ দেওয়ার যুক্তি ও আইনি অবস্থান হাইকোর্টের সামনে ব্যাখ্যা করতে হবে। ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যর্থতা শুধরে নেওয়া উচিত যেন এ রকম ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি না হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Exporters fear losses as India slaps new restrictions

Bangladesh’s exporters fear losses as India has barred the import of several products—including some jute items—through land ports, threatening crucial trade flows and millions of dollars in earnings.

2h ago