অজানার পথে যাত্রা ও স্বপ্নভঙ্গের পর দেশে ফেরা

স্টার ফাইল ছবি

গত সপ্তাহে গ্রিস থেকে একদল বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এ ঘটনায় দেশের বেকার যুবকদের করুণ অবস্থার চিত্র আরও স্পষ্ট করে ফুটে উঠল। তাদের অনেকেই বিভিন্নভাবে চেষ্টা করার পর মানবপাচারকারী চক্রের প্রলোভনের শিকার হয়েছিলেন। বিদেশে ভালো কাজ ও উন্নত বেতনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তাদের।

বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেতে গত ৩ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট ও প্রতীকী অনশন করেন গ্রিসফেরতরা। গণমাধ্যমের কাছে তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। অনেকে জানিয়েছেন যে, গ্রিসে যেতে এজেন্টরা তাদের কাছ থেকে ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে।

উদ্বেগের বিষয় এই যে, তাদের মধ্যে কয়েকজন কয়েক বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের নিয়োগদাতারা দুই মাস তাদের বেতন না দেওয়ায় কিছু অভিবাসী সহকর্মীর পরামর্শে তারা গ্রিসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ইউরোপের দেশগুলোতে ভালো সুযোগ আছে বলে তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

গ্রিস থেকে ফেরত আসা ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পাচারকারীরা ২০ জন বাংলাদেশিসহ প্রায় ৭০ জন অবৈধ অভিবাসীকে অবৈধ পথে তুরস্ক থেকে গ্রিসে নিয়ে যায়। দুই সপ্তাহ ধরে দুর্গম ওই পথ পাড়ি দিতে হয় তাদের। জঙ্গল ও পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে দিনে প্রায় ২০ ঘণ্টা করে তাদের হাঁটতে হয়েছিল। এমনকি প্লাস্টিকের নৌকায় করে নদীও পার হতে হয়েছিল।

পৌঁছানোর প্রায় ২ মাস পর গ্রিক পুলিশের হাতে ধরা পড়বার পর এ কষ্টের গল্পের শেষ অধ্যায় শুরু হয়। দেশটিতে অবৈধ প্রবেশ এবং অনুমোদনহীন কর্মী হিসেবে কাজ করার জন্য তাদের আটক করা হয়। প্রায় ১৮ জন বাংলাদেশিকে একটি কারাগারে পাঠানো হয় এবং প্রায় ১৫ মাস পর তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিয়মিতই ঘটছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রচারণার পরও, আমাদের দেশের তরুণরা একটি উন্নত জীবন পেতে ইউরোপসহ অন্যান্য ধনী দেশে অবৈধ অভিবাসনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যারা ইতোমধ্যে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন তাদের ভাগ্যে কী ঘটছে, সেই খবর জানতে তাদের কমিউনিটির সদস্যদের ভূমিকা আছে বলে আমরা মনে করি। তাদের বিভিন্ন দেশের অভিবাসন আইন সম্পর্কে জানা থাকা উচিত। জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের এজেন্টরা যখন বিদেশে ভালো চাকরির লোভ দেখায়, তখন তাদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তারা, ইউএনও কার্যালয় এবং পুলিশের উচিত এ ধরনের চাকরির বিষয়ে খোঁজ নেওয়া এবং এজেন্টদের পরিচয় যাচাইয়ে সহায়তা করা। এ ছাড়া, সরকারের উচিত এভাবে দেশে ফেরতদের যা যা প্রয়োজন তা দিয়ে সহায়তা করা এবং সেই সঙ্গে বৈধভাবে গ্রিসের মতো দেশে তাদের কাজ করার জন্য বৈধ চ্যানেল স্থাপনের চেষ্টা করা।

অনুবাদ করেছেন শরীফ এম শফিক

Comments

The Daily Star  | English

JnU protests called off

Students and teachers of Jagannath University called off their protest last night after receiving assurances from the government that their demands would be met.

42m ago