মাথাই যদি বিক্রি করে দেই, শরীর দিয়ে কী হবে?

ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

'শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হলে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪ জন উপাচার্য একযোগে পদত্যাগ করবেন' বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে ফেসবুকে। একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের ভিত্তিতে এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি নিউজপোর্টাল। আর এরপরই এ ধরনের তথ্য শেয়ার শুরু করেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।

সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো- খবরটি মিথ্যা, না সত্য, ভেরিফায়েড, নাকি ভেরিফায়েড না, কারা নিউজটি করেছে, এ নিয়ে কারও কোনো উৎসাহ নেই। পাঠক উৎসাহী ৩৪ জন ভিসির চলে যাওয়ার খবরে। মন্তব্যগুলো পড়লে বোঝা যাচ্ছে, সবাই চাইছেন 'ভিসিবৃন্দ চলে যাক, শিক্ষাখাত মুক্তি পাক'। খুবই দুর্ভাগ্যজনক একটা ব্যাপার। কয়েকজন নতজানু, তেলবাজ, অদক্ষ ও আত্মসম্মানহীন উপাচার্যের দায়ভার এখন সব উপাচার্যকে বহন করতে হচ্ছে। আর সবচেয়ে জরুরি প্রশ্ন হচ্ছে, তোষামোদকারী ভিসিরা বিদায় নিলেই কি শিক্ষাখাত মুক্তি পাবে? ভিসি নিয়োগের সিস্টেম যদি না বদলায়?

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কাছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় উপাচার্য তাদের কার্যকলাপ ও মন্তব্যের কারণে বেশ ইন্টারেস্টিং, হাস্যকর এবং অসহ্য ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। দেশে-বিদেশে তাদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। লজ্জায় আমাদের মাথানত হচ্ছে, কিন্তু যাদের কারণে হচ্ছে, তাদের কোন 'হ্যাত-ক্যাত' (রংপুর এলাকার ভাষা) বা মাথাব্যথা নেই। বরং তারা বহাল তবিয়তে দিন কাটিয়ে যাচ্ছেন।

উপাচার্য হচ্ছেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক। একটি পরিবারের অভিভাবক যদি পথ হারিয়ে ফেলেন, নীতি বহির্ভূত কাজ করেন, তখন যেমন পরিবারটি ধ্বংস হয়ে যায়, ঠিক বিশ্ববিদ্যালয়ও তাই। এখানে নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য, ডীন, রেজিস্ট্রার, প্রাধ্যাক্ষ বা প্রভোস্ট সবাই অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবক। বিশেষ করে উপাচার্য। খুব সহজ ভাষায় বলা যায়, মূল ট্যাংকির পানি যদি নোংরা হয়, তাহলে বাকি কলে ময়লা পানি আসতে বাধ্য।

অনেকেই বলতে পারেন যে, দেশের মানুষের মধ্যে একটা অংশ যখন অসচেতন, তেলবাজ, নষ্ট মানসিকতার মানুষ হয়ে উঠেছে, তখন কেন শুধু শিক্ষকদের নিয়ে টানাটানি করা বাপু? কথাটা এখানেই, দেশের আর চারজন সাধারণ মানুষ যা করতে পারেন, একজন উপাচার্য তা পারেন না। কারণ তার বা তাদের কাছে জাতি শেখে। তারা জাতির পথপ্রদর্শক, তারা বিবেক। সেই বিবেক যদি বিবেকহীন হয়ে তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেন, তখন কথা না বলে আর কোনো উপায় থাকে না।

প্রায় ৭-৮ দিন ধরে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) যে তাণ্ডব চলছে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর, তাতে মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে চর দখলে নেমেছে। এইসময় শাবিপ্রবি'র উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি যে 'কটূক্তি' করেছেন, তা অরুচিকর ও মানহানিকর। ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক হয়ে তিনি কীভাবে এ ধরনের মানহানিকর কথা বলেন? ছাত্রনেতাদের উক্তি তুলে ধরে উপাচার্য যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা শুধু জাবির নয়, সব নারীর মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করেছে।

এর আগে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে যে ইঁদুর-বিড়াল খেলেছেন এবং যত অনিয়ম করেছেন, এর কোনো ইয়ত্তা নেই। তবে বিদায় নেওয়ার সময় কোনোরকম দায় তাকে বহন করতে হয়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী ভিসির বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ থাকা ও আন্দোলন হওয়া সত্ত্বেও উনি নির্বিবাদে দুই মেয়াদ পার করলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের উচ্চারণ ও 'ছা-ছিঙ্গারা' বিষয়ক কড়চা ফিরেছে মানুষের মুখে মুখে। আরও বহু বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য গদি হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় গভীর রাতে মসনদে আরোহণ করেছিলেন।

আমরা ধরেই নিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি সবসময়ই সরকারপক্ষীয় হবেন। কিন্তু সময় যত যাচ্ছে, ততোই এই পক্ষ অবলম্বন করাটা কেমন যেন মোসাহেবিতে পরিণত হচ্ছে। তারা ভুলেও ভেবে দেখছেন না কেন ছাত্র-ছাত্রী ও দেশের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন? কেন হাসাহাসি করছেন? কেন তাদের বিদায় চাইছেন?

দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আন্দোলনগুলো শিক্ষকদের নির্যাতন বা অ্যাবিউজের বিরুদ্ধে আন্দোলন। কোনো প্রতিষ্ঠান যখন অন্যায়কারী কোনো ব্যক্তির পক্ষ গ্রহণ করে এবং তাকে সমর্থন করে ভিক্টিমদের প্রতি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়, তখন প্রতিবাদ হয়ে উঠে অনেক বেশি তীব্র। যেমনটা হচ্ছে শাবিপ্রবিতে।

উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন কীভাবে চলছে, তা এসব উপাচার্যের কাজ কারবার দেখলেই বোঝা যায়। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলোতেই অতীতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। রাজনীতির পেটোয়া বাহিনী ও পুলিশ সম্মিলিত হয়ে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের পেটায় এবং হল ছাড়তে বাধ্য করে। কিন্তু এর দায়ে কি কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক অর্থাৎ উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন? না, এর কোনো নজির ইতিহাসে নেই। বরং অযোগ্য এসব মানুষ রাজনৈতিকভাবে প্রাপ্ত এই মসনদ আঁকড়ে থাকেন যেকোনো উপায়ে।

একজন শিক্ষক, শিক্ষক থেকে বিভাগীয় প্রধান হন, সেখান থেকে ডীন এবং তারপর উপাচার্য হন। সারাজীবন পরীক্ষায় সবচেয়ে ভালো নম্বর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হওয়ার পরেও যদি কারও মূল প্রেরণা হয় তেলবাজি, আত্মসম্মান বিকিয়ে দেওয়া, অর্থ ও ক্ষমতা অর্জন, তাহলে বলতে হয় তার বা তাদের সঙ্গে একজন লোভী, সুবিধাবাদী ও স্বার্থপর মানুষের কোনো তফাৎ নেই।

প্রশ্ন আসতে পারে, বিদেশি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কি এমন অস্তিত্বহীন মানুষেরা নেই? অবশ্যই আছে, তবে তারা সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রণে নেই। সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি তোষামোদকারীদের দ্বারা ছিনতাই হয়ে যায়নি। সেখানে সিস্টেম আছে এবং সেই সিস্টেম মেনেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশে উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়াটিই এ রকম জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে, বলতে বাধ্য হচ্ছি- এটা সম্পূর্ণ একটা পলিটিক্যাল পোস্ট। আমি সরকারপক্ষীয়, এটা প্রমাণ করাই যথেষ্ট। আর কোনো যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। এতে প্রতিষ্ঠানের কি বারোটা বাজলো, শিক্ষা কতটা মুখ থুবড়ে পড়লো, শিক্ষক সমাজ কতটা হিউমিলিয়েটেড হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ে কতটা দুর্নীতি ঢুকলো- এর কোনোটাই বিবেচ্য বিষয় নয়। বিবেচ্য বিষয় একটাই, আর তা হলো- লোকটি সরকারের বশংবদ কিনা? লোকটির মেরুদণ্ড ভাঙা কিনা?

আমার শিক্ষক এবং ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির পলিটিক্স অ্যান্ড গভর্নমেন্ট বিভাগের ডিসটিংগুইজড প্রফেসর ড. আলী রিয়াজ যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ইউনিভার্সিটিগুলোর পরিচালনার যে পদ্ধতির কথা লিখেছেন, তা আমরা ভাবতেও পারব না। সেখানে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কাঠামো হচ্ছে বোর্ড অব ট্রাস্টি-বোর্ড অব রিজেন্ট।

এরা কেউ রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। স্থানীয় ব্যবসায়ী, আইনজীবী, বিভিন্ন পেশাজীবী এবং সমাজকর্মীদের মধ্যে থেকে এদের বেছে নেওয়া হয়। বোর্ডে একজন শিক্ষার্থী সদস্য থাকেন এবং তিনি সরাসরি শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত হন, তার মেয়াদ এক বছর।

প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সার্চ কমিটি তৈরি করা হয়, যাতে শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি থাকেন। সার্চ কমিটি তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে সবার প্রতিনিধি আছে। এতে সবার মত প্রতিফলিত হয়।

এরপর শর্ট লিস্ট করে ইন্টারভিউ হয়। তাদের এই ইন্টারভিউয়ের রিপোর্টের ভিত্তিতে কমপক্ষে ৩ জন প্রার্থী ক্যাম্পাসে আসেন। এসময় এই ৩ জনের নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে জানানো হয়। তাদের সিভি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এই প্রার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে কমপক্ষে দুটি পাবলিক অনুষ্ঠানে তাদের ভিশন, কেন তিনি এই চাকরি চাইছেন, তার যোগ্যতা কী, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি ও দুর্বলতা কী, সেই বিষয়ে বলেন এবং সবার প্রশ্নের উত্তর দেন। এতে শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। স্থানীয় জনসাধারণের জন্যেও উন্মুক্ত থাকে। এর ওপর ভিত্তি করে তাদের রেটিং দেওয়া হয়।

এরপর আরও কয়েক ধাপ যাচাই-বাছাই করে বোর্ড অব ট্রাস্টি একজনকে এই পদের জন্যে নির্বাচন করে। উল্লেখ করা দরকার যে, প্রতি বছর তার কাজের মূল্যায়ন হয়। এই প্রক্রিয়া জানার পর আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্বাচন নিয়ে আর কোনো মন্তব্যই করতে ইচ্ছে করছে না।

আমাদের দেশের পলিটিক্স এতটাই নিম্নমুখী যে, তা শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক সংস্কৃতি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ও দেশত্যাগ, বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং দেশ স্বাধীনের মাত্র ৫ বছরের মধ্যেই আবার মৌলবাদী ও সামরিক সংস্কৃতি বাংলাদেশকে শূন্য করে দিতে শুরু করে। শিক্ষক, শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন যখন থেকে বা যেদিন থেকে তাদের মূল পরিচয় বা উদ্দেশ্য থেকে সরে এসে রাজনৈতিক পরিচয় বহন করতে শুরু করে, সেদিন থেকে মান আরও নিম্নগামী হতে শুরু করে।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঘটনাপ্রবাহ চলছে এক সপ্তাহ ধরে। খবরে দেখলাম শিক্ষামন্ত্রী শাবিপ্রবি'র আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এদিকে প্রধান প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলো সবাই চুপ করে আছে। শুধু জাবির ছাত্রীদের নিয়ে কটূক্তি করায় জাবি শিক্ষক সমিতি কথা বলেছে। শিক্ষকদের কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে সামাজিকমাধ্যমে প্রতিবাদ করছেন।

এই যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়রা একত্রে সভা করেছেন, তার কারণ কী? তারা কি শাবিপ্রবি'র উপাচার্যের দায় নিতে চাইছেন? উপাচার্য পরিষদ যৌথ বিবৃতি কেন দেবেন? রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা এবং সেখান থেকে সুবিধা নেওয়ার প্রবণতা আমাদের অভিভাবকদের এমনই অন্ধ করে দিয়েছে যে, প্রতিষ্ঠান গোল্লায় যাচ্ছে কিনা, তাও বুঝতে পারছি না। অথবা বুঝেও বাঁশি বাজিয়ে যাচ্ছেন। শেষ মন্তব্য, আমরা মাথাটাই যদি বিক্রি করে দেই, তাহলে শরীর দিয়ে কী হবে?

শাহানা হুদা রঞ্জনা: সিনিয়র কোঅর্ডিনেটর, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

Specific laws needed to combat cyber harassment

There is an absence of a clear legal framework and proper definitions when it comes to cyber violence against women, speakers said at an event yesterday.They urged for specific legislation to combat such crimes..The roundtable, titled “Scanning the Horizon: Addressing Cyber Violence agains

2h ago