কেন ষড়যন্ত্রের প্রথম লক্ষ্য ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ
স্বাধীন বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রের প্রথম লক্ষ্য ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রশ্ন হলো তাজউদ্দীন কেন প্রথম লক্ষ্য ছিলেন। কারণ, তাজউদ্দীনকে সরিয়ে দিতে পারলে- পরাজিত করা সম্ভব হলে! বাকি লক্ষ্যগুলো হাসিল করা ছিল সহজ- সময়ের ব্যাপার মাত্র। চূড়ান্ত লক্ষ্য সম্পন্ন করাও তখন আর দুরূহ-দুঃসাধ্য কিংবা অসম্ভব কিছু বলে মনে হওয়ার কথা নয়। বাস্তবে হয়েছিলও তাই।
ধীমান ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন তাজউদ্দীন বিষয়টা টের পেয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সত্যিই প্রথম লক্ষ্য পূরণের মাত্র এক বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করেছিল চূড়ান্ত লক্ষ্য। ষড়যন্ত্রকারীদের নীল নকশার ষোলকলা, কড়ায়-গণ্ডায় পূর্ণ হওয়ার বেদনাহত-শোকস্তব্ধ অধ্যায় বঙ্গবন্ধু দেখে যেতে পারেননি। তাজউদ্দীন আহমদ দেখেছিলেন কিছুটা। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির মহত্তর ট্রাজেডির শেষ অধ্যায়ের শেষ রেখাটা টানা হয়েছিল তার মতো একজন জনবান্ধব-দেশদরদী রাষ্ট্রনায়ককে হত্যার মধ্যে দিয়ে।
মাত্র ৫০ বছরের পার্থিব জীবন পেয়েছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। জন্মেছিলেন ১৯২৫ এর ২৩ জুলাই রাজধানীর অদূরের জনপদ গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। নিহত হন ১৯৭৫ এর ৩ নভেম্বর নাজিমউদ্দীন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্ধকারে। স্বল্পরেখার জীবনকে তিনি রাঙিয়েছিলেন শ্রম-নিষ্ঠা-মেধা ও সততার নিরিখে। মানুষের জন্য নিবেদনে, দেশকে মাতৃজ্ঞানে তিনি কাজকে করেছিলেন প্রেমের বাহন। কাজই ছিল প্রার্থনার মঙ্গলমন্ত্র, স্রষ্টা ও সৃষ্টির তরে ভক্তির অর্ঘ্যবিশেষ। নিখাদ কাজই যে বৃহত্তর মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে, জাতির ভাগ্যাকাশে নতুন দিনের সূর্য উদয়ের নিশ্চয়তা দিতে পারে; তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন তার মূর্ত প্রতীক, প্রামাণিক দলিল।
আমাদের সবিশেষ জিজ্ঞাসা ও এই লেখার প্রধানতম সুলুক সন্ধান হলো, তাজউদ্দীন কেন ষড়যন্ত্রের প্রথম লক্ষ্য। স্বল্পায়তনের লেখায় আমরা হাজির করব ঐতিহাসিক কিছু সত্য ও প্রাসঙ্গিক প্রেক্ষাপট। এসব উদ্ঘাটনে চোখ রাখা চাই তার জীবন ও কর্মের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের প্রতি। যা একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জীবনেরও বিশেষ কালপর্ব-ইতিহাসের বিচারে মাহেন্দ্রক্ষণ বিশেষ।
তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ দিনের প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগের মুহূর্তের স্বাধীন বাংলাদেশেরও প্রথম প্রধানমন্ত্রী। যেকোনো দেশের মুক্তি ও স্বাধীনতার যুদ্ধ কেবল রণক্ষেত্রে সংঘটিত হয় না, তার থাকে নানামুখী বিস্তার ও বিস্তৃত করণের অধ্যায় এবং সেসবে অস্ত্রের ব্যবহার না করেও যোদ্ধার ভূমিকা পালন করা হয় এবং প্রতীকরূপে যুদ্ধই সংঘটিত হয়। আগুনঝরা দিনগুলোতে দেশে কিংবা দেশের বাইরে যা কিছু করা হয় তার প্রতি পদেক্ষেপেই থাকে যুদ্ধকে এগিয়ে নেওয়ার বীজমন্ত্র। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পীদের ভূমিকার কথা এক্ষণে স্মরণ করা যায়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধও কেবল ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বন্ধুপ্রতীম ও সহযোগী দেশগুলোও বাড়িয়ে দেয় নানামুখী সাহায্যের হাত। কূটনৈতিক মিশনগুলোতেও পালিত হয় বিভিন্ন রকমের কর্মসূচি। প্রবাসীরাও সাধ্যমতো এগিয়ে আসে- বাস্তবায়ন করে নানা উদ্যোগ-বিবিধ প্রচেষ্টা।
ফলে, যুদ্ধ মানেই সম্মুখ সমরের লড়াইয়ের পাশাপাশি হাজারো প্রয়াসের যূথবদ্ধতা। যেখানে যুক্ত হয় নানান মানুষ-পক্ষ-প্রতিষ্ঠান-সংগঠন ও বিভিন্ন দেশের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্বার্থের বহুমুখী সমীকরণ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরেও জারি ছিল এরকমের নিযুত অংক-প্রভূত সব মানসাঙ্ক।
যুদ্ধদিনের পুরো সময়টা বঙ্গবন্ধু ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে অন্তরীণ। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মহানায়কের অনুপস্থিতিতে এই দায়িত্ব পালন করা কতটা দুরূহ ও কঠিন তা এরকমের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে কিংবা এতদ্বিষয়ক পঠন-পাঠন ও নিবিড় গবেষণার ভেতরে যারা না গেছেন তাদের পক্ষে কল্পনা করাও কঠিন। সেই কঠিন দিনের মুহূর্তগুলোকে সামলিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে যিনি কাণ্ডারির ভূমিকায় সবার থেকে সাহসী ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তিনি তাজউদ্দীন আহমদ।
শুধু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র নয়, দলের ভেতরের অন্তর্কলহ এবং দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের চ্যালেঞ্জ সামাল দিয়ে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নামক তরীকে বিজয়ের জয়মাল্যে তীরে ভেড়ানোর জন্য যিনি সর্বস্ব বাজি রেখেছিলেন তিনি হলেন তাজউদ্দীন আহমদ।
বিরল শুধু নয়, অভূতপূর্ব ও বিশ্বমানচিত্রে অতুলনীয় সেই নেতৃত্বকেও হেনস্থা করা হয়েছে, তার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। তবুও তিনি লক্ষ্যে থেকেছেন অবিচল। ষড়যন্ত্রকারীরা এমনো ফাঁদ পেতেছেন, 'হয় স্বাধীনতা, না হয় মুজিব, যে কোনো একটা বেছে নাও।' তাজউদ্দীন আহমদ এই ফাঁদে পা দেননি। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, 'স্বাধীনতা ও মুজিব, আমার দুটোই চাই।' ফলে, ষড়যন্ত্রকারীরা হালে পানি পায়নি। তাদের লক্ষ্য পূরণ হয়নি।
প্রথম লক্ষ্য কেন তাজউদ্দীন তার প্রথম পর্বের সারকথা এখানেই নিহিত। নীল নকশা প্রণয়নকারীরা ষড়যন্ত্রকারীদের দিয়ে প্রথমে যুদ্ধদিনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছে। সেখানে সফল না হওয়ায়, গভীরতর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষ্যে স্বাধীনতা ও শেখ মুজিবের মধ্যে যে কোনো একটাকে বেছে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো কূট কৌশলই পরিণতি পায়নি। তাজউদ্দীন আহমদ তার দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব গুণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় সুনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। তাদের লক্ষ্য পূরণ হয়নি, প্রথম পর্বে দূরদর্শিতা প্রত্যুৎপন্নমতিতা দিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের লক্ষ্যভ্রষ্ট করেছেন।
দেশ স্বাধীন হলো ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। বঙ্গবন্ধু ফিরে এলেন ১০ জানুয়ারি ১৯৭২। তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব ছেড়ে দিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে। বঙ্গবন্ধু সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনার মন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা স্বাধীনতার আগে ব্যর্থ হলেও ওই পথ থেকে সরে দাঁড়াননি মোটেও। স্বাধীন বাংলাদেশেও তারা প্রথম লক্ষ্য মনে করলেন তাজউদ্দীনকে। চূড়ান্ত লক্ষ্য বঙ্গবন্ধু, সে কথা বলা হয়েছে লেখার শুরুতেই। ইতিহাসের সত্য বলে যে, নীল নকশা প্রণয়নকারী ও তার প্রভুরা তাদের হিসাব-নিকাশ করে এই সিদ্ধান্তে নিশ্চিত হন যে, চূড়ান্ত লক্ষ্য পূরণ করতে হলে শেষ করতে হবে প্রথম লক্ষ্যকে ঘিরে যাবতীয় বোঝাপড়া। ষড়যন্ত্রকারীরা ৬ দফা থেকে দেখে আসছেন তাজউদ্দীন আহমদ দায়িত্ব পালনে কতটা আন্তরিক, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং উৎসর্গীকৃত এক প্রাণ।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার বোঝাপড়া-আস্থা-নির্ভরতা ও বিশ্বাসের জায়গা ছিল হৃদয় সংবেদী। এ কারণেই বাঙালি জাতির স্বাধিকার ও স্বাধীনতার ইতিহাসের সব থেকে গৌরবের কালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তাজউদ্দীন আহমদকে এবং সেই দায়িত্বের অগ্নিপরীক্ষায় তিনি শুধু উত্তীর্ণ হননি, ইতিহাসও নির্মাণ করেছেন। তিনি যখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সেই সময় বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬ দফা সর্বজনের কাছে কেবল মান্যতা পায়নি, তাদের মুক্তির মন্ত্র হিসেবেও আদৃত হয়েছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয় অর্জন করেছে। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তার নেতৃত্বে অর্জিত স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। এতসব সাফল্য যার ঝুড়িতে তিনি তো ষড়যন্ত্রকারীদের প্রথম লক্ষ্য হবেনই। বাস্তবে হয়েওছিল তেমনটাই।
দেশ স্বাধীনের পর ষড়যন্ত্রকারীরা নীল নকশা বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে উঠল। একের পর এক ব্যর্থতায় তারা এবার নিজেদের অপ্রতিরোধ্য করে তুলতে চাইল। পূর্বতন ব্যর্থতার সমস্ত রাগ-ক্ষোভ-দুঃখ-অপমান-অনুশোচনা আর লজ্জার ধারাপাতসমূহ মুছে দিতে চাইলো ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের নতুন যাত্রাপথের কালপর্বে। তারা বুঝে গেল এবারই শেষ সুযোগ, যদি এবার ব্যর্থ হয় তাহলে আর কখনোই সম্ভব হয়ে উঠবে না প্রথম লক্ষ্য পূরণের প্রয়াস ও প্রচেষ্টাসমূহ। ফলে, চিরতরে অধরা থেকে যাবে চূড়ান্ত লক্ষ্য হাসিলের খায়েশ, একটা জাতিকে অন্ধকারের পথে টেনে নিয়ে যাওয়ার পৈশাচিক বাসনাসমূহ।
ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরিতে জাল বিস্তার করতে থাকলো। বঙ্গবন্ধুকে প্রভাবিত করতে আয়োজন করলো নানা ফন্দিফিকিরের। তাদের সঙ্গে যুক্ত হলো দেশীয় চক্রের কিছু স্বার্থবাদী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী। হাত মেলালো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে চলতে থাকে গীবত আর অদ্ভুত সব অভিযোগ। এক সময় ষড়যন্ত্রকারীরাই জয়ী হল। মাত্র পৌনে ৩ বছরের মধ্যে তাজউদ্দীনকে পদত্যাগের জন্য বলা হলো। ১৯৭৪ সালের ২৬ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলেন তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রথম লক্ষ্য পূরণের পর এক বছর সময় পেরোয়নি দিনপঞ্জি থেকে। ষড়যন্ত্রকারীরা হাসিল করলো চূড়ান্ত লক্ষ্য। যার পূর্বাভাস পেয়েছিলেন তাজউদ্দীন, স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরুর প্রারম্ভিক লগ্নেই।
লক্ষণীয়, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুন করার ৩ মাসের মধ্যে কারাগারে খুন হলেন জাতীয় ৪ নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও তাজউদ্দীন আহমদ। তাদের মধ্যে একমাত্র তাজউদ্দীন আহমদই বঙ্গবন্ধুর সেই সময়ের মন্ত্রিসভায় ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দূরত্বের ফাঁদও ভালোভাবেই বিছিয়ে ছিলেন ষড়যন্ত্রকারীরা। ফলে, ক্ষমতা-ক্ষমতা বলয় ও দল আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর চৌহদ্দির কোথাও তেমনভাবে-কিংবা কোনোভাবেই ছিলেন না তিনি। তারপরও তাজউদ্দীন কেন খুনীচক্রের হাতে গ্রেফতার হলেন আর কেনইবা কারাভ্যন্তরে রাতের অন্ধকারে খুন হলেন। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া খুব কি কঠিন? আমরা মনে করি কঠিন নয় মোটেই।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাজউদ্দীনের সম্পর্ক ছিল হৃদয় সংবেদী, দেখা হওয়া না হওয়া কিংবা কাছে দূরের বাস্তবতায় সেই সম্পর্কের পারদ ওঠানামা করে না। করলে, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে দেশ স্বাধীন করতে পারতেন না। এ কারণেই ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর তাজউদ্দীনকে হত্যা করাও জরুরি ছিল। কেন না, ষড়যন্ত্রকারীরা তো কেবল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, সেটা তাদের উদ্দেশ্যও ছিল না। তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে হত্যা করেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লুণ্ঠিত করেছে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশেকে হরণ করেছে, সংবিধানের ৪ নীতির অপমৃত্যু ঘটিয়েছে, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করেছে। তাজউদ্দীনকে হত্যা করা তাদের কাছে জরুরি ছিল, কারণ তারা ভালো করেই জানত তিনি বেঁচে থাকলে তাদের পক্ষে এসবের কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়।
তাজউদ্দীন বেঁচে থাকলে সংবিধানের ৪ মূলনীতি- জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা আঁকড়ে ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে সদ্য ভূমিষ্ঠ বাংলাদেশে তার অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথে বাংলাদেশের বিনির্মাণকে এগিয়ে নিতেন। এখানেই তাজউদ্দীন আহমদের অনন্যতা যেমন- তেমনি এখানেই ষড়যন্ত্রকারীদের প্রথম লক্ষ্য কেন তাজউদ্দীন, তার যুতসই ও যথার্থ কারণ স্পষ্ট ও পরিষ্কার।
কাজল রশীদ শাহীন : সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও গবেষক।
kazal123rashid@gmail.com
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)
Comments