জেলা পরিষদ নির্বাচন: এবারও বিদ্রোহী প্রার্থীতে নাকাল আ. লীগ

AL logo
ছবি: সংগৃহীত

পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

২০১৬ সালে পিরোজপুরে প্রথম জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছিলেন মহারাজ। এবারও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি।

দলীয় মনোনয়নপত্রের সঙ্গে মহারাজ জেলার ৭৪৭ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মধ্যে তাকে সমর্থন জানানো ৭০৪ জন জনপ্রতিনিধির স্বাক্ষর সম্বলিত কাগজ জমা দেন।

কিন্তু ক্ষমতাসীন দলটি মহারাজের পরিবর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সালমা রহমান হ্যাপিকে মনোনয়ন দিয়েছে, যিনি আওয়ামী লীগের ৬১ জন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর মধ্যে একমাত্র নারী প্রার্থী।

সালমাকে এখন ভোটের মাঠে মহারাজের পাশাপাশি আরও ৪ জন প্রার্থীর মুখোমুখি হতে হবে।

কেবল সালমা নন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত আরও ৪১ জন প্রার্থী একই বাস্তবতার মুখে পড়তে যাচ্ছেন। কারণ, আগের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর মতো এবারও দলটি তাদের বিদ্রোহীদের দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। দলের মনোনীত বাকি ১৯ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এবার ১৯টি জেলায় আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১২ জেলায় তাদের ১ জন করে প্রতিদ্বন্দ্বী আছে।

বাকি ৩০ জেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর মুখোমুখি হতে হবে।

তবে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। এর আগেই তারা বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা কমিয়ে আনার ব্যাপারে আশাবাদী।

জেলা পরিষদগুলো ভেঙে দেওয়ার ৪ মাস পর গত ২৩ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ঘোষণা অনুসারে, আগামী ১৭ অক্টোবর দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

যে ১৯টি জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন সেগুলো হলো- গোপালগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝালকাঠি, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, বরগুনা, বাগেরহাট, ভোলা, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ ও সিলেট।

সারাদেশের ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের ৬৩ হাজারের বেশি নির্বাচিত প্রতিনিধি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন করবেন।

এর আগে, বিএনপি এবং অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করায় বেশিরভাগ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের নেতা অথবা দলের বিদ্রোহীরা জয়লাভ করে।

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলোর অভিমত, এর ফলে দলের জেলা পর্যায়ের নেতারা বুঝতে পারেন যে, নির্বাচনে অংশ নেওয়া মানেই বিজয় সুনিশ্চিত। যে কারণে তারা দলের টিকিট পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে এ দফায় প্রায় ৫০০ জন জেলা পর্যায়ের নেতা দলীয় মনোনয়ন চান। এর মধ্য থেকে গত শনিবার ক্ষমতাসীন দলটি ৬১ জনের চূড়ান্ত নাম ঘোষণা করে।

কিন্তু আগের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর মতো এবারও দলটি তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

আগেই নির্বাচিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে বিদ্রোহীদের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। এ বিষয়টিও দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে এবারের বিদ্রোহী প্রার্থীদের উৎসাহিত করেছে।

দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে বহিষ্কারের ঘোষণা, ভবিষ্যতে মনোনয়ন না দেওয়া কিংবা দলীয় পদের জন্য নির্বাচিত না করাসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সতর্কবার্তাও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ঠেকাতে পারেনি।

বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতিহত করতে ক্ষমতাসীন দল গত বছর মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাদের পরবর্তীতে মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

কিন্তু এই সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রাম-২ আসনে দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরেও এবার চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ইউনিট আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ টি এম পিয়ারুল ইসলামকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

অথচ ২০১৬ সালে গৃহীত দলীয় সংবিধান অনুসারে, দলের যেকোনো নেতা মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তাকে সরাসরি বহিষ্কারের বিধান রয়েছে।

এদিকে ফরিদপুরে বিদ্রোহী প্রার্থী সংক্রান্ত একটি কৌতূহলোদ্দীপক ঘটনা সামনে এসেছে।

এখানকার একজন আওয়ামী লীগ নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে গত জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছিলেন। তিনি এখন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্য একজন বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে যুব লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন ফরিদপুর-৪ আসন থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন। তিনি এবার ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আরেক কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতাকে সমর্থন দিচ্ছেন।

আবার কক্সবাজারের মতো আরও কয়েকটি জায়গায় দলের বেশ কয়েকজন নেতা একসঙ্গে মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

কক্সবাজারে দলের ৩ নেতাসহ মোট ৪ জন প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত মোস্তাক আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে লড়ছেন।

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh bank buys dollar

BB buys $313m more from 22 banks

Bangladesh Bank purchased another $313 million from 22 commercial banks in an auction yesterday, reacting to the sharp drop in the US dollar rate.

5h ago