গাজীপুর সিটি নির্বাচন, ফ্যাক্টর শ্রমিক ভোট

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন, গাজীপুর, আজমত উল্লা খান, জায়েদা খাতুন, মেয়র জাহাঙ্গীর,

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হয়েছে মধ্যরাতে। তবে, মেয়র প্রার্থীদের খুব বেশি প্রচারণায় দেখা যায়নি। ভোটারদের মধ্যেও তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা নেই। বরং তারা নির্বাচনের দিনের পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

ভোটার ও শ্রমিক নেতারা বলছেন, নির্বাচানে ভোটারদের উপস্থিতি ও শহরে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক শ্রমিক পরবর্তী মেয়র কে হবেন তা নির্ধারণের চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারেন।

নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যায়নি। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন ছেলের অসমাপ্ত কাজ শেষ করার অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।

গতকাল বাসন, চৌরাস্তা, কাশিমপুর, কোনাবাড়ী ও জয়দেবপুর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালান জায়েদা খাতুন।

আজমত উল্লা খান তার কর্মী, সমর্থক ও পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, এরপর গাজীপুরের আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

গাজীপুরের সুশীল সমাজের সদস্যরা বলছেন, জায়েদার ওপর হামলার ঘটনা ছাড়া নির্বাচনের পরিবেশ যথেষ্ট ভালো বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু, ভোটারদের মাঝে উৎসাহের অভাব আছে।

জয়দেবপুরের শিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র মন্ডল বলেন, 'বিএনপির নির্বাচন বর্জন এবং জাহাঙ্গীর নির্বাচনে না থাকায় উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তবে, ভোটারদের মাঝে উৎসাহের অভাব আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'সহিংসতার কিছু আশঙ্কা হয়তো আছে। কিন্তু, মেয়র নির্বাচনে ভোটারদের অবশ্যই সব প্রতিকূলতা এবং সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে।'

ভোটারদের মাঝে উৎসাহের অভাব নিয়ে গাজীপুর জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, 'আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি ভোটারদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা না থাকার অন্যতম একটি কারণ।'

তিনি আরও বলেন, 'এছাড়াও এ পর্যন্ত যারা মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, কেউ মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি।'

আজমতের দুর্গ হিসেবে পরিচিত টঙ্গীর বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা।

৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও চা বিক্রেতা ফরহাদ হোসেন বাবু বলেন, 'সবাইকে নৌকার (আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক) সমর্থক বলে মনে হলেও, তাদের মনে কী আছে তা বোঝা মুশকিল।'

স্থানীয়রা বলছেন, নির্বাচনের দিন পরিবেশ ভালো থাকলে ভোটারদের উপস্থিতি ভালো থাকবে। ভোট দেওয়ার হার যত বেশি হবে, ফলাফল তত বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।

জালাল উদ্দিন বলেন, 'ভোট দানের হার ভালো হলে জায়েদা এগিয়ে থাকবেন।'

শ্রমিকরা হতে পারেন ফ্যাক্টর

গাজীপুর শহরে প্রায় ২ হাজার পোশাক কারখানা এবং টঙ্গী ও কোনাবাড়ীতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) ২টি শিল্প অঞ্চল আছে। এছাড়াও টঙ্গী, বোর্ড বাজার, ভোগড়া, কোনাবাড়ী, কাশিমপুরে বেভারেজ, টেক্সটাইল, কম্পোজিট, জুতা ও অ্যাপ্লায়েন্সসহ বিভিন্ন ধরনের কারখানা আছে।

বেশির ভাগ শ্রমিক উত্তরের হলেও অনেকেই গাজীপুরের ভোটার হয়েছেন। ফলে, ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৮৬ জন ভোটারের একটি উল্লেখযোগ্য শতাংশ শ্রমিক। তাই প্রার্থীরা মনে করছেন, এই ভোটাররা জয়ের চাবিকাঠি হবে।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় অর্ধেক ভোটার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন এবং তাদের অধিকাংশই শ্রমিক।

অনেক গার্মেন্টস ও অন্যান্য কারখানার মালিকরা বলেছেন, তারা নির্বাচনের দিন কারখানা বন্ধ রাখবেন। যেন শ্রমিকরা ভোট দিতে পারেন।

বিজিএমইএ'র স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যে প্রার্থী শ্রমিকদের ভোট পাবেন, তার পক্ষেই ফলাফল যাবে।'

তিনি আরও বলেন, 'কারাখানা মালিকদের নির্বাচনের দিন কারখানা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে, কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিলে শ্রমিকদের ভোট দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।'

জাহাঙ্গীর অভিযোগ করেন, তার মায়ের সমর্থক ও পোলিং এজেন্টদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে রাতে আটক করে সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের জেলায় রাখা হয়েছে। তাদের মাদকসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক।'

তিনি আরও বলেন, 'অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সিটি করপোরেশন। আমি সবাইকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাচ্ছি, অন্যথায় নির্বাচন কৌতুকে পরিণত হবে। আমরা সেটা চাই না। গাজীপুরবাসী, দেশের জনগণ এবং আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশগুলো গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করছে।'

Comments

The Daily Star  | English

US tariff talks: First day ends without major decision

A high-level meeting between Bangladesh and the Office of the United States Trade Representative (USTR) ended in Washington, DC, yesterday without a major decision, despite the looming expiry of a 90-day negotiation window on July 9.

11h ago