ছাত্রলীগের সম্মেলন কাল, শীর্ষ নেতৃত্বের দিকেই নজর সবার

ছাত্রলীগ

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন আগামীকাল ৬ ডিসেম্বর। অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সম্মেলন থেকে আগামী ২ বছরের জন্য ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব বাছাই করা হবে। ছাত্রলীগের পরবর্তী শীর্ষ নেতৃত্বে কারা আসছেন, সারাদেশের নেতাকর্মীদের নজর এখন সেদিকে।

এর অবশ্য কারণও আছে। অতীতে দেখা গেছে, যারাই ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন, তারাই রাতারাতি প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক বনে গেছেন, যেন 'আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ'। সারাদেশে জেলা-উপজেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটগুলোতে তারাই কমিটি দিয়েছেন। প্রায়ই ভ্রমণ করেছেন হেলিকপ্টারে। দেশের যে প্রান্তেই গেছেন, সার্বক্ষণিক কর্মীদের কাছ থেকে পেয়েছেন প্রটোকল। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সূত্রমতে, এসব কারণেই ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে কর্মীদের মধ্যে এতো আগ্রহ ও প্রবল জল্পনা-কল্পনা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে গোয়েন্দা তথ্যসহ প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত চলে গেছে দলের হাইকমান্ডের হাতে। চলছে পর্যালোচনা। এসব কিছুর ঊর্ধ্বে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যাদেরকে 'গ্রিন সিগন্যাল' দেবেন, তারাই বৃহত্তর সংগঠনটির দায়িত্ব নেবেন।

ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের শীর্ষ ২ পদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২৫৪ জন। তাদের মধ্যে ৯৬ জন সভাপতি ও ১৫৮ জন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী।

গত ২ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ ছাত্রলীগের যৌথ সম্মেলন হলেও এখন পর্যন্ত কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এর পরদিন ৩ ডিসেম্বর অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন।

ছাত্রলীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। ঢাকার ২ মহানগরও গুরুত্বপূর্ণ। যার কারণে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্ব ঘোষণার সময় এ ২ ইউনিটের কমিটিও একসঙ্গে ঘোষণা করা হয়। অতীতে এমন রীতিই দেখা গেছে।

৩ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে একইদিনে কমিটি ঘোষণার কথা বলে গেছেন।

ছাত্রলীগের সর্বশেষ ২৯তম সম্মেলন হয় ২০১৮ সালের ১১ এবং ১২ মে। তখন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক অভিযোগ উঠলে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক শেখ হাসিনা।

এরপর ২০১৯ সালে পদাধিকারবলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন ১ নম্বর সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক হন ১ নম্বর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। কয়েক মাস দায়িত্ব পালনের পর প্রধানমন্ত্রী তাদের ভারমুক্ত করে দেন।

শিথিল হতে পারে বয়স

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ছাত্রলীগে প্রার্থিতার বয়স বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। করোনা মহামারির জন্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা, দেরিতে সম্মেলন হওয়া এবং সামনে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরিপক্ব নেতৃত্ব বাছাই করতে এ বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের এক কমিটির মেয়াদ ২ বছরের। কিন্তু এবার সাড়ে ৪ বছর পর হচ্ছে ছাত্রলীগের সম্মেলন। সে হিসেবে বয়স বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

গঠনতন্ত্র (জয়-লেখকের সংশোধনী) অনুযায়ী, ছাত্রলীগে প্রার্থিতার সর্বোচ্চ বয়স ২৯ বছর। এবার প্রধানমন্ত্রীকে সেটি ১ থেকে ২ বছর বাড়াতে বলেছেন ছাত্রলীগকে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ৪ নেতা। তবে ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে।

ছাত্রলীগ সূত্র বলছে, প্রার্থিতার বয়স না বাড়ানো হলে এবার নেতৃত্বের দৌড়ে যারা এগিয়ে আছেন, তাদের একটি বড় অংশের বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ২ নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ৪ নেতা বয়স বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেছেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ডেইলি স্টারকে জানান, ছাত্রলীগে প্রার্থিতার বয়স বাড়ানোর জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নেবেন।

আজ সোমবার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বয়স বাড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। আগামীকাল সম্মেলনের দিন সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানি।'

শীর্ষে পদে আলোচনায় যারা

বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চল থেকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ, খুলনা, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগ।

ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টদের মতে, এবার দেশের যেসব অঞ্চল থেকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দৌড়ে যারা এগিয়ে আছেন, তারা হলেন-

চট্টগ্রাম বিভাগ

কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী এবং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল।

উত্তরবঙ্গ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ এবং উপ-দপ্তর সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম শিমুল।

বরিশাল বিভাগ

এই বিভাগ থেকে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, বিজ্ঞান বিষয়ক উপ-সম্পাদক সবুর খান কলিন্স, সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান, ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক ইমরান জমাদ্দার এবং কর্মসংস্থান বিষয়ক উপ-সম্পাদক খাদিমুল বাশার জয়।

খুলনা বিভাগ

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাঁধন এবং সহ-সভাপতি ফরিদা পারভীন।

ময়মনসিংহ বিভাগ

ময়মনসিংহ থেকে আলোচনায় আছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি খায়রুল হাসান আকন্দ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস ও সহ-সম্পাদক এস এম রাকিব সিরাজী এবং বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্ত।

ফরিদপুর

ঢাকার পার্শ্ববর্তী ছাত্রলীগের সাংগঠনিক বিভাগ ফরিদপুর থেকে আলোচনায় আছেন আইন বিষয়ক সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত, সহ-সভাপতি রাকিব হোসেন এবং হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল ছাত্রলীগের সভাপতি শহিদুল হক শিশির।

Comments

The Daily Star  | English

Managing expectations the challenge for EC

The EC was a rubber stamp to legalise AL's usurpation of power in last three elections

2h ago