স্কুলে সামষ্টিক মূল্যায়ন: লিখিত অংশে ৬৫ শতাংশ, ব্যবহারিকে ৩৫

স্টার ফাইল ফটো/অর্কিড চাকমা

ন্যাশনাল কারিকুলাম কোঅর্ডিনেশন কমিটি (এনসিসিসি) গতকাল সোমবার এক বৈঠকে নতুন পাঠ্যক্রমের অধীনে সামষ্টিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে।

একটি শিক্ষাবর্ষ শেষে শিক্ষার্থীর শিখন, দক্ষতা ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের মূল্যায়নে সামষ্টিক মূল্যায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

মূল্যায়নের নম্বরের ক্ষেত্রে ৬৫ শতাংশ এখন লিখিত অংশ এবং ৩৫ শতাংশ কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হবে।

পাঠ্যক্রমের চূড়ান্ত অনুমোদনে উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি এনসিসিসি মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে করা বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, 'আমাদের প্রাথমিক প্রস্তাবে কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন করে মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করা হয়েছে।'

পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন

নতুন পাঠ্যক্রম পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়। বর্তমানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে তা অনুসরণ করা হয়। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতেও তা চালু হবে।

নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে না। মাধ্যমিকের জন্য ধারাবাহিক মূল্যায়নসহ পরীক্ষা থাকবে।

খসড়া ও অনুমোদন

এনসিটিবি ফেব্রুয়ারিতে মূল্যায়ন পদ্ধতির খসড়া তৈরি করে। তবে লিখিত পরীক্ষা নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বিতর্ক ও প্রতিবাদ ছিল।

এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মূল্যায়ন পদ্ধতি ও পাঠ্যক্রমের জন্য একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে।

এই কমিটির পরামর্শের ভিত্তিতে এনসিটিবির খসড়া আরও সংশোধন করা হয়েছে। এনসিটিবি জানায়, এনসিসিসির বৈঠকের পর চূড়ান্ত খসড়াটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

চূড়ান্ত খসড়ার মূল সিদ্ধান্ত

শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের পদ্ধতি দুটি—শিখনকালীন বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন (বছরব্যাপী ক্লাসরুমভিত্তিক) ও সামষ্টিক মূল্যায়ন (শিক্ষাবর্ষ শেষে)। ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক-২০২১ অনুযায়ী, মূলত সামষ্টিক মূল্যায়নে এখন লিখিত অংশের ওয়েটেজ হবে ৬৫ শতাংশ এবং কার্যক্রমভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ হবে ৩৫ শতাংশ।

সামষ্টিক মূল্যায়নে একটি বড় পরিবর্তনের পর শিক্ষার্থীদের এখন প্রতিটি বিষয়ের জন্য পাঁচ ঘণ্টার দীর্ঘ পরীক্ষায় বসতে হবে: 'ব্যবহারিক'র জন্য চার ঘণ্টা এবং 'তাত্ত্বিক' লিখিত পরীক্ষার জন্য এক ঘণ্টা। এই দুই পরীক্ষার মধ্যে বিরতিও থাকবে।

নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুযায়ী, ৬৫ শতাংশ হবে লিখিত পরীক্ষা এবং ৩৫ শতাংশ ব্যবহারিক কার্যক্রমে।

অন্যদিকে দশম শ্রেণি শেষে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষা বিদ্যমান শিক্ষাবোর্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। তবে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নতুন পাঠ্যক্রমের অধীনে হবে বলে জানিয়েছে এনটিসিবি।

এসএসসির ফলাফল (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশের সময় আর জিপিএ পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে না। এর পরিবর্তে দক্ষতার স্তর বর্ণনা করার জন্য সাতটি স্কেল বা সূচক থাকবে, সর্বনিম্নে 'প্রারম্ভিক' এবং শীর্ষে 'অনন্য' থাকবে।

এসএসসি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত অগ্রগতি

এখন থেকে এসএসসি শিক্ষার্থীরা দুই বিষয়ে ফেল করলেও এইচএসসি পর্যায়ে যেতে পারবে।

তবে, তাদের মার্কশিটে পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ‍উল্লেখ থাকবে এবং পূর্ণ নম্বর পেতে ফেল করা বিষয়ে পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে হবে।

কারিগরি-মাদ্রাসার পরীক্ষা

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে কিছু বিশেষায়িত বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা আগামী কয়েক বছর ধরে পুরোনো পদ্ধতিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে এনসিসিসি সভায়।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মামুন উল হক বলেন, নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে বিলম্বের কারণে এই বোর্ডের অধীন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পুরোনো সৃজনশীল পদ্ধতি ব্যবহার করে চারটি বিশেষায়িত বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা দিতে থাকবে।

একই কারণে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডও তাই করবে।

Comments

The Daily Star  | English

Make right to vote a fundamental right

The Constitutional Reform Commission proposes voting to be recognised as a fundamental right, so that people can seek legal remedies if it is violated.

14h ago