বিদেশে পড়ার পাশাপাশি পার্ট টাইম চাকরি করতে চাইলে...

ছবি: ফ্রিপিক

বিদেশে পড়ার কথা ভাবলেই তার পাশাপাশি কাজ করা যাবে কি না তা নিয়ে বেশি আগ্রহ থাকে শিক্ষার্থীদের। এতে যেমন খরচের বোঝা হালকা হয়, তেমনি জীবনধারায় আনন্দ উপভোগ করার সুযোগও পাওয়া যায়। 

আপনিও যদি টিউশন ফি, আবাসন খরচ মিটিয়ে কেনাকাটা করা, ঘুরতে যাওয়ার মতো আর্থিক সক্ষমতা পেতে পার্ট টাইম চাকরি করতে চান, তাহলে কিছু বিষয়ে ধারণা থাকা জরুরি। 

পড়ালেখা চলাকালে বিদেশে চাকরি করতে চাইলে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ সম্পর্কে দেশ ভেদে বিভিন্ন আইন রয়েছে।
 
তাই চাকরির জন্য আবেদন করার আগে সেগুলো জেনে নিতে হবে। যেমন: অধ্যয়নরত দেশের শিক্ষা আইন কেমন, কাজ করার অনুমতি আছে কি না, ভিসার ধরন অনুযায়ী কত ঘণ্টা কাজ করা যায় ইত্যাদি।

এ ছাড়া, চাকরি পড়ালেখা ও জীবনযাত্রায় কেমন প্রভাব ফেলবে সেটিও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। এজন্য এমন চাকরি বেছে নিতে হবে যা শিক্ষার্থীর জীবনধারার সঙ্গে মানানসই হবে, স্থানীয় ভাষা দক্ষতা বিকাশে সাহায্য করবে, নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করবে, অভিজ্ঞতা এবং উন্মুক্ত ভবিষ্যতের সুযোগ অফার করবে। 

তবে ভিসা আবেদন করার সময় ফান্ডের প্রমাণপত্রে পার্ট টাইম চাকরির আয় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। বিদেশে যেসব পার্ট টাইম চাকরি করার সুযোগ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- 

অন-ক্যাম্পাস চাকরি 

ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের জন্য এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় বিকল্পগুলোর মধ্যে একটি। ক্যাম্পাসে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে শুরু করে রাইটিং সেন্টার, ক্যাফেটেরিয়া, কম্পিউটার সেন্টারে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়। এ ছাড়া, শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার জন্য স্টুডেন্ট ইউনিয়নেও কাজ করা যায়। এতে অন্যান্য ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা দেওয়ার সুযোগ থাকে। অন-ক্যাম্পাসে কাজ করলে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়, ভাষা দক্ষতা উন্নত করা যায় এবং মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়। অনেক শিক্ষার্থী এ ধরনের কাজ করে বিধায় বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানো যায়। 

তবে অন-ক্যাম্পাস কাজের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিযোগিতা করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হতে পারে। এজন্য সাক্ষাৎকারের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এবং কাজের ধরন উত্তেজনাপূর্ণ না হলেও উৎসাহ দেখাতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাজের জন্য আবেদনপত্র, সিভি, কভার লেটার ভালো করে লিখতে পারলে চাকরি পাওয়া সহজ হয়।  

রেস্তোরাঁ, ক্যাফে ও বার

বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বা নিকটস্থ শহরের ক্যাফে, রেস্তোরাঁ ও বারে অনেক চাকরির সুযোগ পাওয়া যায়। এ ধরনের কর্মসংস্থানে প্রচুর জনবল প্রয়োজন পড়ে বিধায় ঝামেলাও কম। অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ওপর নির্ভর করে ওয়েটার, বার স্টাফ বা রান্নার সহকারী হিসেবেও কাজ করা যায়। 
এ ধরনের চাকরির জন্য ভালো যোগাযোগ দক্ষতার প্রয়োজন হতে পারে। অতীতের কাজের অভিজ্ঞতা আছে কি না তা খুব একটা দেখা হয় না। তাই ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের চাকরি করাটা সহজ হয়। এটি আপনার আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা তৈরি করবে, ভাষার দক্ষতা উন্নত করবে এবং নতুন বন্ধু তৈরি করতে সহায়তা করবে। তবে এ ধরনের কাজ সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় বিধায় অসুবিধা হতে পারে। সকালে ক্লাস, সেমিনার থাকলে নাইট শিফটের কাজ পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

কল সেন্টার

যারা যোগাযোগপ্রবণ, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ভাষা ও কম্পিউটার দক্ষতায় আত্মবিশ্বাসী তাদের জন্য এটি বেশ উপকারী। কল সেন্টারের চাকরির ক্ষেত্রে শারীরিক পরিশ্রম করতে হয় না। অফিসের পরিবেশে কাজ করতে চাইলে এটি বেছে নেওয়া যেতে পারে। তবে চমৎকার যোগাযোগ দক্ষতা ও ভাষা দক্ষতা থাকতে হবে। এ ধরনের কাজে চাপ বেড়ে যায়, কিন্তু কমিশন পাওয়ার সুবিধা থাকায় উপার্জন বেশি হয়। কাজ করার জন্য পণ্য, পরিষেবা ও কোম্পানি সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হয়, যা প্রশিক্ষণ থেকে শিখে নিতে হবে।

কাস্টমার সার্ভিস 

কাস্টমার সার্ভিসের কাজ করলে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। এ ধরনের কাজ বেশিরভাগ পার্ট টাইম হয় বিধায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় প্রভাব ফেলে না। শুরুতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বিধায় প্রথম চাকরি হলেও অসুবিধা কম হয়। সুবিধা অনুযায়ী কাজের শিফট পরিবর্তন করা যায়। এ ধরনের কাজে অভিজ্ঞতা পাওয়ার পাশাপাশি দক্ষতার বিকাশ হয়। মানুষের সঙ্গে আলাপ করতে এবং অভ্যর্থনা জানাতে ভালো লাগলে এটি আগ্রহের ক্ষেত্র হতে পারে। ছুটির সময় এখানে ফুল টাইম কাজও করা যায়। 

ইন্টার্নশিপ

অধ্যয়নের ক্ষেত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এমন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ পেলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করলে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা দেয় ও অসংখ্য সুযোগ পাওয়া যায়। দেশের আইন ও অধ্যয়নের ক্ষেত্রের ওপর নির্ভর করে পড়ালেখা শেষে প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী নিয়োগও পাওয়া যায়। অনেক সময় ইন্টার্নশিপ থেকে কিছু আয়ও হতে পারে। এ ছাড়া, ডিগ্রি কোর্সে পড়ালেখার অংশ হিসেবেও ইন্টার্নশিপ বাধ্যতামূলক থাকে, সেক্ষেত্রে অর্থ পাওয়া নিশ্চিত নয়। 

স্বেচ্ছাসেবক

অভিজ্ঞতা অর্জন করতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ধরনের কাজে যুক্ত হতে দেখা যায়। স্বেচ্ছাসেবী কাজের পরিসর বিস্তৃত হওয়ায় সুযোগ অফুরন্ত। ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের সিভি আকর্ষণীয় করে তুলতে এ ধরনের কাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যা ভবিষ্যতে ভালো চাকরি পেতে সাহায্য করে। বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থা স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজের সন্ধান দিতে পারে, তবে এ ক্ষেত্রে অর্থ প্রদান করা হয় না। যেসব শিক্ষার্থী বিনা উপার্জনে সমাজসেবামূলক কাজ করতে চান তাদের জন্য এটি উন্মুক্ত।  

আপনার স্টুডেন্ট ভিসায় ছুটি চলাকালে কাজের সময়সীমায় বাধা না থাকলে গ্রীষ্মকালে ফুল টাইম কাজ করতে পারবেন। ক্লাস চলাকালে যেখানে পার্ট টাইম কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেও চেষ্টা করা যেতে পারে। চাইলে ভিন্ন ক্ষেত্র থেকে নতুন অভিজ্ঞতাও নিতে পারেন।
 

Comments

The Daily Star  | English

Have patience for election

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday said the government would issue a roadmap to the election as soon decisions on electoral reforms are made.

6h ago