পরীক্ষাভীতি দূর করার উপায়

স্টার ফাইল ছবি

পরীক্ষা এলেই কমবেশি সবারই চিন্তা বেড়ে যায়। প্রশ্ন কমন পরবে কি না, ঠিকঠাক লিখতে পারব কি না, এমন নানা ভাবনায় কাবু হয়ে যাওয়ার অবস্থাকে বলা হয় পরীক্ষাভীতি। অনেক সময় ভালো প্রস্তুতি থাকলেও এটি থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। তবে কিছু টিপস অনুসরণ করলে পরীক্ষার ভয় থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে। 

চলুন জেনে নিই পরীক্ষাভীতি দূর করার উপায়গুলো কী কী। 

নিজের পড়ার ধরন সম্পর্কে ধারণা থাকা

সারাবছর একভাবে পড়ে পরীক্ষার সময় ভিন্ন কৌশলে চলার চেষ্টা করলে ঘটতে পারে বিপত্তি। আপনি কীভাবে পড়লে দ্রুত পড়া মনে রাখতে পারেন, সহজে আয়ত্তে আনতে পারেন তা জানুন। অন্যের কৌশল আপনার ক্ষেত্রেও যে কাজে লাগবে তা নাও হতে পারে। ভিন্ন কিছু চেষ্টা করতে চাইলে অন্য সময়ে করুন, পরীক্ষার আগে নয়। এতে সময় নষ্ট হতে পারে। নিজের আত্মবিশ্বাস যাতে কাজে লাগানো যায় তার উপায় বের করুন। 

আগে থেকে রিভাইস শুরু করা

একসঙ্গে সব টপিক পড়লে পরীক্ষার ভয় বাড়ে। পরীক্ষার আগের রাতে নতুন টপিক যেমন পড়তে হয় না, তেমনি সব টপিক একসঙ্গে রিভাইস করাও উচিত নয়। অন্তত এক সপ্তাহ আগে সব বিষয় আয়ত্ত করে নিলে ভালো হয়। তারপর কোন পরীক্ষার আগে কতদিন ছুটি রয়েছে তা দেখে টপিকগুলো ভাগ করে নিতে হবে। সেই অনুযায়ী ধীরে-সুস্থে আগে পড়া বিষয়গুলো পুনরায় পড়তে হবে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যোগ করার প্রয়োজন মনে হলে সঙ্গে সঙ্গেই করে ফেলতে হবে। পরে অন্য বিষয় পড়া শুরু করলে ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। একইভাবে পরীক্ষার দিন কোন বিষয়গুলো আবার দেখলে লেখার সময় মনে থাকবে তা টুকে রাখতে হবে। এতে চিন্তা কমতে পারে। 

পরিকল্পনা চার্ট তৈরি করা

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ, পরীক্ষার ক্ষেত্রেও তা সমানভাবে প্রযোজ্য। পরীক্ষাভীতি থেকে মুক্তি পেতে তো এটি না করলেই নয়। কেননা একটি বাস্তবসম্মত রুটিন যেমন মনোযোগ ধরে রাখে, তেমনি পরীক্ষার পড়া যথাসময়ে শেষ করতে সাহায্য করে। এ ক্ষেত্রে এটি তৈরি করার সময় মনে রাখতে হবে, পরিকল্পনা অনুসরণ করতে গিয়ে যাতে কষ্ট না হয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। পরিকল্পনায় সব বিষয়ে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়ার সুযোগ থাকা চাই। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে, ভয় কমবে। 

কিছুক্ষণ পর পর বিরতি নেওয়া 

পড়ার সময়সূচি ঠিক করার সময় বিরতির জন্য কিছু সময় বরাদ্দ রাখতে হবে। কেননা দীর্ঘ সময় ধরে পড়ার টেবিলে বসে থাকলে ক্লান্তি চলে আসে, যা আপনার স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রতি ঘণ্টা বা নির্দিষ্ট সময় পর পর একটু বিরতি নিলে মন ও শরীর দুটোই ভালো থাকবে। বিরতির সময়ে হালকা ব্যায়াম করুন, কিছুক্ষণ মেডিটেশন করুন, হাঁটাহাঁটি করুন, গল্প করুন, খাবার খান। চাইলে শখের কাজও করতে পারেন কিছুক্ষণ। এতে আপনার মন শান্ত থাকবে, অবসাদ দূর হবে।

কোনো বিষয় বাদ না দেওয়া 

পড়ার সময়সূচি তৈরি করার সময় সব বিষয়ে সমানভাবে সময় বণ্টন করতে ভুলবেন না। অনেক সময় কিছু বিষয় না বুঝলে এড়িয়ে যাওয়াকে শ্রেয় মনে করি। সময় থাকলে এমনটি করা যাবে না। দেখা যাবে ছোটোখাটো বিষয় থেকেই অনেক সময় প্রশ্ন করা হয় পরীক্ষায়। তাই সব বিষয় প্রতিদিন পড়লে এমনটি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রে বিকল্প সময় হাতে রেখে এসব বিষয় পড়ার জন্য সময় বরাদ্দ করতে হবে। পরীক্ষার দিন পর্যন্ত কোনো কিছু পড়া বাদ রাখা উচিত নয়, এতে চিন্তা থেকেই যায়। 

ঘুমানোর জন্য সময় রাখা 

পরীক্ষার ভয় কাটিয়ে ওঠার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো শরীরকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম দেওয়া। আর ঘুমই আপনার শরীরের পাশাপাশি মনকে শিথিল করবে। প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম সবার জন্য অপরিহার্য। পরীক্ষা এলে না ঘুমিয়ে দিনরাত পড়ার অভ্যাস থেকে ছুটি নিতে হবে। কারণ ঠিকভাবে না ঘুমালে ক্লান্তি এবং মনোযোগের অভাব হতে পারে। তাই পড়ার সময়সূচিতে ঘুমানোর সময় রাখতেই হবে। 

অন্যের সঙ্গে তুলনা না করা 

পরীক্ষার সময় বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা এবং পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করা খুবই সাধারণ ব্যাপার। বন্ধুর প্রস্তুতি, অগ্রগতি ও অধ্যয়নের পরিকল্পনা জানার পর উদ্বেগ কাজ করতে পারে। এটি মোকাবিলা করতে চাইলে সহপাঠী বা বন্ধুদের সঙ্গে নিজের তুলনা করা যাবে না। কারণ প্রত্যেকেরই শেখার গতি ভিন্ন। এজন্য বন্ধুর উন্নতির কথায় কান না দিয়ে নিজের দিকে মনোযোগ দেওয়াই ভালো।

ইতিবাচক মনোভাব রাখা

পরীক্ষার চিন্তা থেকে দূরে থাকতে ইতিবাচক মনোভাব থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক চাপকে দূরে রাখতে 'আমি পারব' কথাটিকে মনোবল বাড়ানোর মন্ত্র হিসেবে কাজে লাগাতে হবে। নিজের ক্ষমতার ওপর আস্থা রাখতে হবে। আপনি যখন মনে করবেন যে আপনি পরীক্ষায় ভালো করবেন, কেবল তখনই নিজের সেরাটা দিতে পারবেন। মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে যা করলে ভালো লাগে সেটিতে মনোনিবেশ করতে হবে। 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

5h ago