গুচ্ছ ভর্তি: পিছিয়ে পড়েছে ২২ বিশ্ববিদ্যালয়, এখনো অনেক আসন খালি
গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নতুন শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশনের কারণে সময়মতো ক্লাস শুরু করতে পারেনি।
এর ফলে তারা অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিছিয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকেরা।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পর গত বছরের নভেম্বরে এই ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব শূন্য আসন পূরণ না হওয়ায় এর মধ্যে অন্তত ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়কে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভর্তির সময়সীমা বাড়াতে হয়।
১৩ বার মেধা তালিকা প্রকাশ করেও সব আসন পূরণ করতে পারেনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় ৫০টি আসন খালি রেখেই ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে।
এদিকে গত অক্টোবর থেকে ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রায় ১৬ বার মেধা তালিকা প্রকাশের পর আসন পূরণ হয়েছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের।
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করার পরও এই ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫০০ আসন খালি রয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে। শিক্ষকরা এই পরিস্থিতির জন্য শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকাকে দায়ী করেছেন।
এই ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে, তখন অন্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে একটি সেমিস্টার শেষ করে ফেলেছেন।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং নভেম্বরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়। আবার গুচ্ছ পদ্ধতির ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রথম সেমিস্টার শেষ করেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, 'একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যখন এতবার মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হয়, তখন সেই প্রতিষ্ঠান ভালো শিক্ষার্থী পাবে না এটাই স্বাভাবিক।'
তার ভাষ্য, ২০২০-২১ সেশনে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি ব্যবস্থা যোগ দেওয়ার পর থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন পূরণ করা কঠিন হচ্ছে।
দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি আরও বলেন, 'আগামী কয়েক বছর এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার মানও ধীরে ধীরে পড়ে যাবে।'
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। একই সমস্যার কথা উল্লেখ করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও একই দাবি জানান।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক তপন কুমার জানান, তারা শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করে এবং উপাচার্যকে চিঠি পাঠিয়ে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
সরকার যদি সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আওতায় আনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে তা শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন। অন্যথায় শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে তাদের নিজেদেরই ভর্তি পরীক্ষা নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. ইমদাদুল হক জানান, তারা ভর্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার পরিকল্পনা করছেন।
তিনি বলেন, 'আমরা ভর্তি পরীক্ষার জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছি। আমরা আগামী জুনের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করার এবং জুলাইয়ের মধ্যে ক্লাস শুরু করার পরিকল্পনা করছি।'
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক মুহম্মদ আলমগীর জানান, পরীক্ষা নেওয়ার পর ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ২ মাসের সময়সীমা নির্ধারণ করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারবে।
তিনি বলেন, 'যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এখনো গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করেনি তাদের সঙ্গে আমাদের কথা বলতে হবে এবং এই পদ্ধতির আওতায় আসতে উৎসাহিত করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ব্যবস্থা থেকে সরে আসার সুযোগ নেই।'
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য আবদুল হামিদের নির্দেশক্রমে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষাও একই পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে উল্লিখিত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ই অংশগ্রহণ করছে। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার জন্য অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া গত ৩০ এপ্রিল শেষ হয়েছে।
আগামী ২০ মে, বি (কলা) ইউনিটের, সি ইউনিটের (বাণিজ্য) ২৭ মে এবং এ ইউনিটের (বিজ্ঞান) ভর্তি পরীক্ষা ৩ জুন অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থী গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে।
Comments