অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা

ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইড: ভর্তি ও অন্যান্য তথ্য

ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইড: ভর্তি ও অন্যান্য তথ্য
ছবি: ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইড

বিশ্বমানের গবেষণা ও শিক্ষার জন্য পরিচিত অস্ট্রেলিয়ার দ্য ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইড। জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন উদ্ভাবন অনুসরণ করে আগামীর শিক্ষিত নেতৃত্ব তৈরিতে বদ্ধ পরিকর প্রাচীনতম এই বিশ্ববিদ্যালয়। 

দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য, সম্পদ ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও বিশ্ববিদ্যালয়টির রয়েছে অসামান্য অবদান। 

কেন পছন্দের তালিকায় রাখবেন ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইড? 

ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইড প্রদান করে মানসম্মত শিক্ষা-কার্যক্রম, যার ফলে শিক্ষার্থীরা পরিণত হয় অমূল্য সম্পদে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে ১০০ জন রোডস স্কলার ও ৫ জন নোবেল বিজয়ী। এখানে স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশ্বনেতৃবৃন্দ থেকে আসা শিক্ষকগণ তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। 

এ ছাড়া গবেষণা ক্ষেত্রেও খ্যাতি রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। গবেষকদের সমাধানকৃত বিষয়াদি বিশ্ব স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক, জননীতি এবং জীবনধারায় প্রভাব রাখার নজির রয়েছে। শিল্প ও রাষ্ট্রের অংশীদারত্বের সহায়তায় স্পেশাল সেন্টার হিসেবেও কাজ করে ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইড। 

ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইড

এখানকার শিক্ষার্থীরা বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যারিয়ার পরিকল্পনাও নেতৃত্ব; আন্তঃসাংস্কৃতিক ও নৈতিক দক্ষতা; সমস্যা সমাধান ও জটিল চিন্তন দক্ষতা; দলগত কাজ ও যোগাযোগ এবং আত্নসচেতনতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নানা বিষয়ে অনুশীলনের সুযোগ পায়। 

যেসব বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে 

ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইড ৫টি অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ প্রদান করে থাকে। 

  • ফ্যাকাল্টি অব আর্টস: মিউজিক, টিচিং, ল্যাঙ্গুয়েজ, মিডিয়া, ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও সোশ্যাল সায়েন্স। 
  • ফ্যাকাল্টি অব ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার অ্যান্ড ম্যাথম্যাটিক্যাল সায়েন্স: ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার অ্যান্ড ম্যাথম্যাটিক্যাল সায়েন্স। 
  • ফ্যাকাল্টি অব হেলথ অ্যান্ড মেডিক্যাল সায়েন্স: ডেন্টিস্ট্রি অ্যান্ড ওরাল হেলথ, নার্সিং, মেডিসিন, হেলথ অ্যান্ড মেডিক্যাল সায়েন্সেস, সাইকোলজি। 
  • ফ্যাকাল্টি অব দ্য প্রফেশনালস: আইন, ব্যবসা, অর্থনীতি, ফিন্যান্স, স্থাপত্যবিদ্যা ও উদ্ভাবন, উদ্যোগ।
  • ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স: জীববিজ্ঞান, কৃষি, ফুড সায়েন্স, ইনোলজি। 

স্কলারশিপ প্রোগাম

ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইডে ব্যাচেলর ডিগ্রির পরে সেকেন্ড ডিগ্রি বা গবেষণাভিত্তিক মাস্টার্স বা পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে। আর প্রত্যেকটি প্রোগ্রাম অস্ট্রেলিয়ান কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক (একিউএফ-লেভেল) হিসেবে পরিচিতি। 

আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট

আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট ব্যাচেলর প্রোগ্রাম সাধারণত ৩ বছরের জন্য হয়ে থাকে। তবে অন্য ডিগ্রির সঙ্গে সমন্বয় করে ডাবল ডিগ্রি করার সুযোগ রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইডে। শিক্ষার্থীর পছন্দের দুটি বিষয়ে ডাবল ডিগ্রি করার অপশন না থাকলে, কাস্টমাইজ করেও পড়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এন্ট্রি-লেভেল গ্র‍্যাজুয়েট ডিগ্রি রয়েছে- 

  • আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট সার্টিফিকেট- ৬ মাস ফুল টাইম 
  • ডিপ্লোমা- ১ বছরব্যাপী হলেও কিছু ডিপ্লোমা দীর্ঘকালীন হওয়ায় পার্ট-টাইম পড়ার সুযোগ রয়েছে। 
  • অ্যাসোসিয়েট ডিগ্রি- ২ বছর ফুল টাইম

ব্যাচেলর ডিগ্রির পর গবেষণা প্রজেক্ট হিসেবে যে কেউ একটি অনার্স ডিগ্রি করতে পারে। 

পোস্টগ্র‍্যাজুয়েট 

ব্যাচেলর ডিগ্রিতে গ্র‍্যাজুয়েশনের পর পোস্টগ্র‍্যাজুয়েট করার সুযোগ রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইডে। এ ক্ষেত্রে পোস্টগ্র‍্যাজুয়েট প্রোগ্রাম ৩টি লেভেলে সম্পন্ন করা যায়। যার মধ্যে-

  • ফুল-টাইম গ্র‍্যাজুয়েট সার্টিফিকেট- ৬ মাস
  • ফুল-টাইম গ্র‍্যাজুয়েট ডিপ্লোমা- ১ বছর 
  • মাস্টার্স ডিগ্রি বাই কোর্সওয়ার্ক- ২ বছর

এ ক্ষেত্রে মাস্টার্স ডিগ্রি ২ বছরে সম্পন্ন হওয়ার সুযোগ থাকায় একজন শিক্ষার্থী ৬ মাস মাস্টার্স ডিগ্রি করার পর বিষয় পরিবর্তন করতে পারে, এ ক্ষেত্রে একটি গ্র‍্যাজুয়েট সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। আর ১ বছর পর গ্র‍্যাজুয়েট ডিপ্লোমা পাওয়ার পরও ডিগ্রি প্রোগ্রাম পরিবর্তন করা যায়।  

হাইয়ার ডিগ্রিস বাই রিসার্চ 

অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রি প্রোগ্রামে গবেষণাভিত্তিক ২টি উচ্চতর ডিগ্রি অফার করে ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইড। যার মধ্যে মাস্টার অব ফিলোসফি একজন সুপারভাইজারের অধীনে নির্দিষ্ট ফিল্ডে একটি টপিকে গবেষণা করতে হয়। এটি মাত্র ২ বছরে সম্পন্ন করা যায়। আর ডক্টর অব ফিলোসফি বা পিএইচডি প্রোগ্রামে একটি থিসিস জমা দিতে হয় যা শিক্ষার্থীর নিজস্ব গবেষণা হিসেবে বিবেচিত হয়। 

স্কলারশিপের ধরণ ও যোগ্যতা

ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইড ৫টি স্কলারশিপ অফার করে থাকে। 

গ্লোবাল সিটিজেন স্কলারশিপ

আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট ও পোস্টগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে ১৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ টিউশন ফি ওয়েভার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে এই স্কলারশিপের মাধ্যমে। তবে এ ক্ষেত্রে আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট প্রোগ্রামে আবেদনকারী ৮০ এটিএআর পেলে ১৫ শতাংশ স্কলারশিপ পাবে আর ৯০ এটিএআর পেলে ৩০ শতাংশ স্কলারশিপ পাবে। আর পোস্টগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে ৫.০/৭ জিপিএ থাকলে ১৫ শতাংশ স্কলারশিপ আর ৬.০/৭ জিপিএ থাকলে ৩০ শতাংশ স্কলারশিপ পাবে। 

এই স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আলাদা করে আবেদন করার প্রয়োজন হয় না। উপর্যুক্ত যোগ্যতা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক শিক্ষার্থী স্কলারশিপের জন্য বিবেচিত হয়। 

ফ্যামিলি স্কলারশিপ

একই পরিবার থেকে দুজন বা অধিক শিক্ষার্থী একই ইনটেকে অধ্যয়নরত হলে ২৫ শতাংশ টিউশন ফি ওয়েভার পাওয়া যায়। 

অ্যালামনাই স্কলারশিপ

আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট ও পোস্টগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ ডিগ্রি করতে চাইলে এই স্কলারশিপ পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে জিপিএ ৪.০/৭ থাকলে ২৫ শতাংশ টিউশন ফি ওয়েভার পাওয়া যায়। তবে কোনো শিক্ষার্থী একের অধিক স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলে সর্বোচ্চ ওয়েভারের যেকোনো একটি স্কলারশিপ পাবে (সব ধরনের স্কলারশিপের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)। 
 
গ্লোবাল অ্যাকাডেমিক অ্যাক্সিলেন্স স্কলারশিপ
 
আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট ও পোস্টগ্রাজুয়েট কোর্সওয়ার্কের ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক সফলতার জন্য একটি স্কলারশিপ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়। প্রত্যেক ফ্যাকাল্টি থেকে আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ৯৮ এটিএআর এবং পোস্টগ্রাজুয়েট ক্ষেত্রে জিপিএ ৬.৮ এর উপরে সর্বোচ্চ স্কোর থাকলে ৫০ শতাংশ টিউশন ফি ওয়েভারের দুইটি অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।  

ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইড কলেজ হাই অ্যাচিভার প্রোগ্রেশন স্কলারশিপ

অসাধারণ অ্যাকাডেমিক ফলাফলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ১০০ জন গ্র‍্যাজুয়েটকে ২৫ শতাংশ টিউশন ফি ওয়েভার দেওয়া হয় এই স্কলারশিপের মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে গড় গ্রেড ৮৫ শতাংশ বা জিপিএ ৬.০/৭.০ থাকতে হবে। 

আবেদনের সম্ভাব্য সময়

ব্যাচেলর ডিগ্রিতে ভর্তির আবেদনের জন্য বিভাগভেদে ৩ থেকে ৮ মাস সময় পাওয়া যায়। তবে বছরের যেকোনো সময় আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। 

২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে রিসার্চ গ্র‍্যাজুয়েট প্রোগ্রামে আবেদনের সময়- 

  • ডমেস্টিক মিড-ইয়ার রাউন্ড (দ্বিতীয় সিমেস্টার, ২০২৩ ইনটেক): ১ মে থেকে জুন পর্যন্ত।
  • ইন্টারন্যাশনাল মিড-ইয়ার রাউন্ড (দ্বিতীয় সিমেস্টার, ২০২৩ ইনটেক): ১ মে থেকে জুন পর্যন্ত।
  • ইন্টারন্যাশনাল মেজর রাউন্ড (প্রথম সিমেস্টার, ২০২৪): ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত। 

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস 

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট 
অনার্স ডিগ্রির সার্টিফিকেট (গ্র‍্যাজুয়েট হলে)
আইএলটিএস বা পিটিই স্কোর সনদ (অনার্সের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬.০ এবং মাস্টার্সের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬.৫ ব্যান্ড স্কোর) 
স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি)
প্রয়োজনীয় আর্থিক কাগজপত্র 

আবেদন প্রক্রিয়া 

বাংলাদেশ থেকে ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইডে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থী সাকিব আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রথমেই আইএলটিএস স্কোর অর্জন করতে হবে। তারপর ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইড কর্তৃক মনোনীত এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় আর্থিক সক্ষমতার ডকুমেন্ট (১ বছরের টিউশন ফি, থাকা-খাওয়ার সমপরিমাণ ব্যাংক ব্যালেন্স, অর্থের সোর্স ও ট্যাক্স সংক্রান্ত কাগজপত্র) ও উপর্যুক্ত ডকুমেন্ট দেখাতে হবে। সেসব দেখে এজেন্ট পরবর্তী করণীয় বিষয়গুলো অবহিত করবে। সবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার পর আবেদন গৃহীত হলে অফার লেটার পাওয়া যাবে। তারপর টিউশন ফি জমা দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক কনফারমেশন অব এনরলমেন্ট (সিওই) আসলে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। তারপর সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। 

খরচ 

ভিসা খরচ বাবদ ৬৬০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার এবং অনার্সের ক্ষেত্রে বছরে টিউশন ফি ২৫ থেকে ৩০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার, মাস্টার্সের ক্ষেত্রে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার (বিষয়ভেদে) প্রয়োজন পড়বে। থাকা-খাওয়ার খরচ ২১ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার এবং যাতায়াত খরচ ২ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলারের কম-বেশি হতে পারে। 

 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

7h ago