নোয়াখালী জিলা স্কুল

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান, আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থী

নোয়াখালী জিলা স্কুল
নোয়াখালী জিলা স্কুলের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান। ছবি: আনোয়ারুল হায়দার/স্টার

বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নোয়াখালী জিলা স্কুল। ১৮৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই দেশের কল্যাণে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন।

ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভবন এখন ঝুঁকিপূর্ণ। পাঠ চলাকালে ঝুঁকিতে থাকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জীবন।

শিক্ষকদের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বিদ্যালয় ভবনের এই বেহাল দশা।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায় বিদ্যালয়টির দুরবস্থার চিত্র।

নোয়াখালী জিলা স্কুলের ৫টি ভবন আছে। এগুলো হচ্ছে ৩ তলাবিশিষ্ট মেঘনা ও যমুনা ভবন, ২ তলাবিশিষ্ট পদ্মা ভবন ও ১ তলাবিশিষ্ট কর্ণফুলী ভবন ও বিজ্ঞানাগার।

এর মধ্যে কর্ণফুলী, যমুনা ও পদ্মা ভবনের অবস্থা বেশি নাজুক। ভবনগুলোর দেয়ালের রং উঠে গেছে, সিঁড়ি, বিম ও দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে, মেঝে ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। পলেস্তারা খসে মরিচা ধরা রডও বের হয়ে আছে।

শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে শিক্ষকরা ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনে নিজেদের ও শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পাঠদান করাতে বাধ্য হচ্ছেন।

বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির দিবা শাখার এক শিক্ষার্থী দ্য ডেইলি স্টারকে বলে, 'আমাদের শ্রেণিকক্ষ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সিঁড়ি ও বিমে ফাটল, মেঝেতে বড় বড় গর্ত এবং ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে জং ধরা রড বের হয়ে আছে, দেখলেই ভয় লাগে। যেকোনো সময় ফ্যান ও পলেস্তারা খসে মাথায় পড়তে পারে। ক্লাস চলাকালে পুরোটা সময় আতঙ্কে থাকি।'

আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ডেইলি স্টারকে একই কথায় জানিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিভাবকরা ডেইলি স্টারকে জানান, জেলার সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলেই তারা সন্তানদের নোয়াখালী জিলা স্কুলে ভর্তি করেছেন। কিন্তু বিদ্যালয় ভবনের যে অবস্থা, সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে সারাক্ষণ দুঃচিন্তায় থাকতে হয়।

বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক মোকতুল হোসাইন জানান, এই বিদ্যালয়ে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণিতে ১ হাজার ২০০-র বেশি শিক্ষার্থী আছে। শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকায় তারা বাধ্য হয়েই এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান করাচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, শিক্ষকদের কমনরুম থেকে শুরু করে বিজ্ঞানাগার—সব জায়গাতেই একই অবস্থা। বিদ্যালয়ের মিলনায়তনটিও জরাজীর্ণ। ফলে বিদ্যালয়ের কোনো অনুষ্ঠান করতে হলে তা মিলনায়তনের পরিবর্তে মাঠে মঞ্চ করে আয়োজন করতে হচ্ছে।

তিনি বিদ্যালয়ে কমপক্ষে ২টি একাডেমিক ভবন নির্মাণের দাবি জানান।

নোয়াখালী জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মীর হোসেন স্কুল ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কথা স্বীকার করে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যমুনা ও কর্ণফুলী ভবন ২০০০ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। ঠিকাদারের নিম্নমানের কাজের কারণেই এত অল্প সময়ের মধ্যেই ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'স্কুলে সরকারিভাবে একটি ১০ তলা ভবন নির্মাণের জন্য শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তরের লোকজন মাটি পরীক্ষা করেছিলেন। অজ্ঞাত কারণে সেই ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। দ্রুত আমাদের বিদ্যালয়ে কমপক্ষে ২টি ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত মিলনায়তনটি ভেঙে আধুনিক মিলনায়তন নির্মাণের দাবি জানাই।'

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সম্পর্কে কেউ আমাকে কিছু জানাননি। এই ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Why was July 2025 wetter in Bangladesh?

Bangladesh experienced three low-pressure systems on July 7, July 14 and July 24 which led to heavy rain

13m ago