যে কলেজ থেকে একজনও পাস করেনি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর আব্দুল জব্বার স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এবছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কোন শিক্ষার্থীই পাস করেনি। এর আগেও আরও দুইবার একই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কেউ পাস করতে পারেনি।
প্রতিষ্ঠানটিতে 'জিরো পাস'- এর হ্যাট্রিক বিপর্যয় ঘটেছে।
নবীনগরের এই কলেজসহ কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চারটি কলেজে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের কনফারেন্স রুমে ফলাফল ঘোষণার পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. আসাদুজ্জামান।
শূন্য পাসের অন্য কলেজগুলো হলো ফেনী সদরের বেগম শামসুন্নাহার গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার ইস্টার্ন কলেজ ও চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার ড. এম শামসুল হক মডেল কলেজ।
জানা যায়, নবীনগরের কৃষ্ণনগর আব্দুল জব্বার স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এ বছর ১২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে কেউই পাস করতে পারেনি। এর আগে, ২০১৮ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৩ জন অংশ নিয়ে এবং ২০২৩ সালে সাত জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কেউই পাস করতে পারেনি।
এছাড়া এবছর ফেনী সদরের বেগম শামসুন্নাহার গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে চার জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে কেউ পাস করতে পারেনি। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার ইস্টার্ন কলেজ থেকে দুই জন এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলার ড. এম শামসুল হক মডেল কলেজ থেকেও ১০ জন অংশ নিয়ে কেউ পাস করতে পারেনি।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মো. জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ২০১৮ সালে যখন প্রথমবার এই প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো পরীক্ষার্থী পাস করতে পারেনি তখন তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া বিধি মোতাবেক এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর চিঠি দেওয়া হয়েছিল। আসলে প্রতিষ্ঠানটির যে লেজেগোবরে অবস্থা, কমিটির নিজেদেরই উচিত প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া। অথবা তারা চাইলে আশপাশে অন্য কোনো কলেজের সঙ্গে তাদের প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করা যেতে পারে।
এই কলেজ সম্পর্কিত ফাইল ঘেঁটে তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের চারজন সদস্য কলেজটির সভাপতি ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ছয় পৃষ্ঠার একটি লিখিত অভিযোগ বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর দায়ের করেছেন। সেখানে তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, বিনা রশিদের টাকা আদায়, বিধি বহির্ভূতভাবে পুরাতন বইপত্র বিক্রি, বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রপাতি কেনায় অনিয়ম ও পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ আনা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নবীনগরের প্রত্যন্ত কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত কয়েক বছরে ওই ইউনিয়নের অন্তত আটটি গ্রামে একাধিক হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এতে ওইসব গ্রামের শিক্ষার্থীরা অনেক দিন ক্লাস করতে পারেনি বলে দাবি করেছিলেন কলেজটির সেসময়কার অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা ফেরদৌসুর রহমান।
শিক্ষকের স্বল্পতাসহ এমপিও সুবিধা না থাকাকেও খারাপ ফলাফলের জন্য দায়ী করেন তিনি।
তিনবার কোন পরীক্ষার্থী পাস না করা প্রসঙ্গে বক্তব্য জানার জন্য কৃষ্ণনগর আব্দুল জব্বার স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি।
Comments