আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ

রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জে নির্মিত হবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস। ছবি: স্টার

কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের কাজ আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রকল্প শুরু হওয়ার ছয় বছরেও হয়নি দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি।

গত ১২ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পের কাজ দেওয়াসহ তিন দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে গণ-অনশনে বসেন জবি শিক্ষার্থীরা।

প্রায় ৩৫ ঘণ্টা পর মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

পরে ১৬ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় 'জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন: ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন' শীর্ষক প্রকল্পটির অবশিষ্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করার লক্ষ্যে চলমান প্রকল্পের পুনর্মূল্যায়ন ও আরডিপিপি প্রণয়ন এবং পরবর্তী কর্মপরিধি নির্ধারণকল্পে 'অর্পিত ক্রয় কার্য' হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একটি চিঠি ইস্যু করেন। চিঠি ইস্যুর ৩ মাস পার হলেও প্রকল্পের কাজ বুঝে পায়নি সেনাবাহিনী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের কাজে বেশ কিছু ভুল থাকায় নতুন করে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। গত ১৩ এপ্রিল এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনে একটি বৈঠক হয়। তবে এখনো মন্ত্রণালয় সংশোধিত আরডিপিপি অনুমোদন দেয়নি বলে জানা গেছে।

এদিকে, আরডিপিপি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পের কাজের জন্য অর্থ ছাড় হবে না বলে সূত্র জানায়। আর, অর্থ ছাড় না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী কাজ শুরু করতে পারবে না।

ছবি: স্টার

এ প্রসঙ্গে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পের দায়িত্ব নেওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিযুক্ত প্রকল্প পরিচালক (পিডি) লে. কর্নেল ইফতেখার আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ আমরা এখনো বুঝে পাইনি। মূলত মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) অনুমোদন হয়নি। আরডিপিপি অনুমোদন না হওয়ায় অর্থ ছাড়ও হয়নি। যার কারণে আমরা কাজ শুরু করতে পারছি না। আশা করছি, এ মাসের মধ্যে আরডিপিপি অনুমোদন পাবে।'

তিনি জানান, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের আগেই তারা প্রথম ধাপের কাজ শেষ করতে পারবেন।

উল্লেখ্য, ভূমি অধিগ্রহণ, বালু ভরাট, প্রকৌশল ভবন নির্মাণ, বেজক্যাম্প নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর, পুকুর ঘাট নির্মাণ, গভীর নলকূপ খনন ও বর্হিবিদ্যুতায়ন ইত্যাদি কাজ প্রকল্পের প্রথম ধাপের অন্তর্ভুক্ত।

সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চলমান কাজের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বালু ভরাট কাজ, স্থগিত আছে প্রকৌশল ভবন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ।

এছাড়া, বেজক্যাম্প নির্মাণের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। আগের ঠিকাদার কোম্পানির অধীনে শুধু পুকুরঘাট নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

আন্দোলনের পরও দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তাসমিয়া সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহু প্রতীক্ষিত নতুন ক্যাম্পাস এবং অস্থায়ী আবাসন সংক্রান্ত চূড়ান্ত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দীর্ঘসূত্রিতায় পড়েছে। পুরান ঢাকার যানজটপূর্ণ পরিবেশে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির মধ্য দিয়ে রোদে-পুড়ে, ঘামে-ভিজে ক্লাস করতে আসা শিক্ষার্থীদের সেই স্বপ্ন আজও অন্ধকারে ঢাকা পড়ে আছে।'

ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী হেলাল উদ্দিন বলেন, 'রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ দেওয়ার একটাই কারণ ছিল, যেন দ্রুত আমাদের ক্যাম্পাসটা দৃশ্যমান হয়। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী কাজ বুঝে নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবরই আমাদের মূলা ঝুলিয়ে আসছে। আমাদের যদি আবার রাস্তায় নামতে হয় তাহলে আবারও নামব।'

জানতে চাইলে প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী ডেইল স্টারকে বলেন, 'বাহ্যিকভাবে মনে হয় সেনাবাহিনী এখনো কাজ শুরু করেনি। কিন্তু প্রথম ধাপের আরডিপিপি রিভিশন সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণে হয়েছে। আরডিপিপি মিনিস্ট্রি থেকে অনুমোদন হয়েছে, এখন প্ল্যানিং মিনিস্ট্রিতে আছে। সেখানে অনুমোদন হলেই সেনাবাহিনী মাঠের কাজ শুরু করতে পারবে। ২০২৬ এর যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছে আশা করি তার আগেই কাজ শুরু হবে।'

ভূমি অধিগ্রহণ ও আবাসিক হল নির্মাণ প্রসঙ্গে হেলাল উদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, 'এখনো কিছু জমি অধিগ্রহণ বাকি আছে এবং আবাসন প্রথম ধাপে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। শিক্ষার্থীদের দাবি ও আন্দোলনের মুখে হাবিবুর রহমান হল ও বাণী ভবন আরডিপিপি রিভিশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।'

উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'প্রকল্প পরিচালক আমার চেয়ে ভালো জানবেন। তার বক্তব্যই আমার বক্তব্য।'

Comments

The Daily Star  | English
Abu Sayed murder case

Abu Sayed murder: ICT probe agency finds evidence against 30 including cops

ICT investigators told The Daily Star that they submitted their probe report to the prosecution on June 24.

25m ago